গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও শীত মৌসুমে দেশের মহাসড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঘন কুয়াশার মধ্যেও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার তালিকা। কুয়াশার মধ্যে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গতিসীমা মেনে চলার কথা থাকলেও চালকরা তা অগ্রাহ্য করায় দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে উঠছে। কুয়াশার মধ্যেও পাল্লা দিয়ে অন্য গাড়িকে বেপরোয়াভাবে পাশ কাটানোর প্রবণতায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের ৯১ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি। সংস্থাটি ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে বলেছে, উল্লিখিত ১৪ বছরে দেশে ৪৯ হাজার ৭৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর ৯১ শতাংশ ঘটেছে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। ২০১৫ সালে দুর্ঘটনার হার বেড়ে গেলে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দূরপাল্লার গাড়িতে ‘গভর্নর সিল’ নামের গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সংযোজনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষীয় আলস্যে সে সিদ্ধান্ত কার্যত কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী ৭০ শতাংশ গাড়িতে ‘গভর্নর সিল’ না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। শীতের সময় ঘন কুয়াশা ভেদ করে গাড়ির সামনের আলো খুব বেশি দূর যেতে পারে না। শীত মৌসুমে গাড়িগুলোয় যথাযথভাবে ফগ লাইট ব্যবহার না করায় কুয়াশায় দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়। শুধু কুয়াশার মধ্যে নয়, স্বাভাবিক সময়েও যাতে কেউ সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি গাড়িতে গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র গভর্নর সিল সংযোজন করা উচিত। পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো রোধেও অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের অপরাধে কোনো চালক জড়িত হলে জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। যারা যানবাহন চালানোর নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে, তাদের নিবৃত্ত করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।