বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মধ্যরাতের কালো ঘোড়ার আতঙ্ক কমবে?

পীর হাবিবুর রহমান

মধ্যরাতের কালো ঘোড়ার আতঙ্ক কমবে?

কথায় আছে সাত খুন মাফ। নারায়ণগঞ্জের দেশ কাঁপানো নৃশংস, রোমহর্ষ সেভেন মার্ডারের বিচারের রায় গোটা বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে সাত খুনের মাফ নেই। আদালত ২৬ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছে। এ রায় আইনের শাসনকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ও সুসংহতই করবে না; মধ্যরাতের কালো ঘোড়ার থাবা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছিল সেটা অনেক হ্রাস পাবে।  এই হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড ছিল না। খুনিরা কোনো পেশাদার খুনিও ছিলেন না। তারা ছিলেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কর্মকর্তা। তারা ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, রাষ্ট্রের হয়ে জনগণের জানমালের হেফাজত রক্ষায় নিয়োজিত। কিন্তু তারাই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অংশীদার হয়েছেন। হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নই করেননি, শীতলক্ষ্যার গভীরে নিহতদের লাশ রেখে দিতে চেয়েছিলেন।

কথায় আছে, সত্যকে কখনো চাপা দিয়ে রাখা যায় না, সত্যের জয় অনিবার্য। শীতলক্ষ্যার বুক চিড়ে হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পরেই সত্যের মতো আলামত নিয়ে একে একে লাশগুলো ভেসে উঠেছে। গোটা দেশের মানুষ হয়েছে বিক্ষুব্ধ। গণমাধ্যম এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব ও সোচ্চার হয়েছে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে অপহূত হন নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন আরেকটি লাশ ভাসে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে খবর বের হয়, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা। একসঙ্গে সাতজন নিরপরাধ মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের নৃশংসতায় শিউরে ওঠে মানুষ। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইন সন্ত্রাস দমনই শুধু নয়; চাঁদাবাজদের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে যে সংস্থাটি অর্থাৎ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ফোর্স (র‌্যাব) অনন্য সাধারণ ভূমিকার গৌরব অর্জন করেছে তার একটি ইউনিটের প্রায় সবার জড়িত থাকার খবর বেরিয়ে এলে গোটা বাংলাদেশের মানুষ স্তম্ভিত, বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ একজন মন্ত্রীর জামাতা হওয়ায় সরকারের জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠে হত্যাকাণ্ডটি। মানুষের মনে দেখা দেয় সন্দেহ। আদৌ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এসব ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবে কিনা? আসামি গ্রেফতারে শুরুতে পুলিশও টালবাহানা করেছিল নানা কারণে। কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশে তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার, তাদের নিজ নিজ বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হলে মামলার তদন্ত তীব্রগতি পায়। একে একে বেরিয়ে আসে প্রধান আসামি সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের হয়ে কীভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তারা সাতজন মানুষকে পরিকল্পনামাফিক ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে লাশ গুমের ঘটনা ঘটায়।

সোমবার নারায়ণগঞ্জের জনাকীর্ণ আদালত যখন ২৬ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ও অন্যদের নানা মেয়াদে সাজা দেয়, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এমন ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত মানুষকে আনন্দিতই করেনি; জনমনে স্বস্তিই দেয়নি, নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকার চাদর সরিয়ে আশার আলো দেখিয়েছে। অপরাধী যেই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়; এই সত্য নিম্ন আদালত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেকের সংশয় শেষ পর্যন্ত এ রায় কার্যকর হবে কিনা? উচ্চ আদালত বহাল রাখলেও রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দেন কিনা?আমার নিজের মধ্যে এ ধরনের কোনো সংশয় কাজ করছে না। কারণ শেখ হাসিনার সরকার সুষ্ঠু, ন্যায়বিচার চেয়েছিল বলেই কারও জন্য কোথাও হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হয়নি। সরকার চেয়েছিল বলেই ১১ মাসের তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র‌্যাবের সাবেক ২৫ কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র স্বাধীনভাবে পুলিশ দিতে পেরেছে। পরের বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। ৭ মাসে ৩৮ কর্মদিবস মামলার বিচারকাজ চলে। ৩০ নভেম্বর, ২০১৬ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানিয়ে দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যথার্থই বলেছেন, ‘দেশের সব মানুষ এই মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের কাজ ছিল মানুষকে নিরাপত্তা দান; তারাই যদি এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান তাহলে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।’

অভিযুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন আটক রয়েছেন। যাদের ১৭ জন র‌্যাবের সদস্য। ১২ জন আসামি এখনো পলাতক। যাদের ৮ জনই র‌্যাব সদস্য। ঘটনার পরপর প্রধান আসামি ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানে গ্রেফতার ও নিয়তির জালে আটকা পড়ে তাকে দেশে ফিরতে হয়। এই বিচারের রায় কার্যকর হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, সদস্যরা আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী মানুষের জানমালের নিরাপত্তাদানেই ভূমিকা রাখবেন। অতি উৎসাহ, লোভ ও দাম্ভিকতার কারণে টাকার লোভে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার মতো নারকীয় ঘটনায় জড়িত হবেন না। এই বিচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব স্তরে এই বার্তাই জানিয়ে দেওয়া যে, যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন; যে যত বড় ক্ষমতার ছায়ায় বাস করুন না কেন? অপরাধ করলে সাজা তাকে ভোগ করতেই হবে।

কথায় আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। অপরাধীরা ছাড় পাননি। তাদের নৃশংসতায় সেদিন শীতলক্ষ্যার পানি অভিশপ্ত হয়েছিল। স্বজন হারানোর বেদনা, শোকার্তের কান্না গোটা বাংলাদেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। নিহতদের পরিবারই নয়; গা শিউরে ওঠা এমন হত্যাকাণ্ড কাঁপিয়ে দিয়েছিল সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধকে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাবান ও বিত্তবানদের ছায়ায় অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। সেসব অপরাধের অনেক ঘটনাই রহস্য হয়ে থাকে। আড়াল হয়ে যায় কিংবা সত্য হারিয়ে যায় কালের অন্ধকারে। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয় মানুষ। অপরাধীদের দাম্ভিকতা, নগ্ন আস্ফাালন তখন সমাজে নিরাপত্তাহীনতাবোধ ছড়িয়ে দেয়।

কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা অর্থ, ক্ষমতার দাপটে গোপন রাখা যায় না। মানুষ থেকে মানুষ, গণমাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে উন্মোচিত করে যে তা আর সহজে হজম করার পথ থাকে না অপরাধী চক্রের। সংঘটিত অপরাধের সত্য উন্মোচিত হয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত রক্ত হিম করা সেভেন মার্ডার তেমনি মানুষ থেকে মানুষ, গণমাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে এমনভাবে উঠে এসেছিল, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড নূর হোসেন যেমন পালিয়ে বাঁচতে পারেননি; তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উন্মত্ত কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারেননি। তাদের দম্ভ ও অহংকারের পতন হয়েছে। মিথ্যার পরাজয় যেমন অনিবার্য, সত্যের বিজয় তেমনি অবশ্যম্ভাবী। এই সত্য নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে উদ্ভাসিতই হয়নি; নিহতদের পরিবার-পরিজন ন্যায়বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সেভেন মার্ডারে নিহত লব্ধ, প্রতিষ্ঠিত, সাহসী আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার অপহরণকারী ঘাতকদের অনুসরণ করতে গিয়ে তাদের হাতে নিহত হন। আদালত প্রাঙ্গণে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের চেহারা, স্বাভাবিকতা, উন্নাসিকতা দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন শেষ পর্যন্ত রায় কার্যকর হবে না। আদালত প্রাঙ্গণে খুনিদের আচরণ কেমন ছিল সেটি আমাদের বিবেচনার প্রয়োজন নেই। আমাদের বিবেচনার বিষয়, আমাদের সন্তুষ্টির জায়গা হচ্ছে ন্যায়বিচারটি পাওয়া। সেটি আমরা পেয়েছি। মানসিকভাবে অসুস্থ ও বিকৃত না হলে যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন; তারা তা পারতেন না। আইনের রক্ষক হয়ে, জনগণের জানমালের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়ে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতেন না।

আমাদের জন্য তৃপ্তির জায়গা এটি, শত বছরের ইতিহাসে এমন রায় একটি মাইলফলক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ নানা প্রলোভন, উন্নাসিকতা, আস্ফাালন ও অতি উৎসাহী হয়ে নানা অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে নাগরিকদের জীবন থেকে নিরাপত্তাবোধ কেড়ে নিয়ে জন্ম দিয়েছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। সেখানে এই রায় অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের জন্য এই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে যে, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হয়। আর যে কোনো অপরাধে অপরাধী নিজেই ক্লু রেখে যায় সত্য উদ্ঘাটনের।

দেশে এমনিতেই ব্যবসায়ী থেকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, এমনকি সাধারণ মানুষকেও গুম-খুনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার কখন হন— এই আতঙ্ক গ্রাস করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করা একজন কর্মকর্তার জীবন হুমকির মুখ থেকে ফিরে এসেছে। যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানুষের বন্ধু হিসেবে জীবনের নিরাপত্তাদানে ইবাদতের মতো কাজ করার কথা ছিল; সেখানে কেউ কেউ হয়ে উঠেছিলেন কারও কারও ভাড়াটে অপশক্তি। মধ্যরাতে কালো ঘোড়ার আওয়াজে সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল মানুষ। গুম ও ক্রসফায়ারের হুমকির মুখে পড়েছিলেন কেউ কেউ। এ রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের জন্য এই সতর্ক বার্তা দিয়ে যাচ্ছে যে— আইনের রক্ষকদেরও দেশের সংবিধান, আইন ও বিধিবিধান বলে চলতে হবে।

রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ শফী উদ্দিন তার ফেসবুক পেইজে মন্তব্য করেছেন, ‘সিভিল আইনের শীতল হাত অতীতে এতদূরের গরম আগুন পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।’ কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, লক্ষ্মীপুরের তাহের পুত্রের মতো এই খুনিরাও শেষ পর্যন্ত ক্ষমা লাভ করেন কিনা? এখানে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিয়েছিলেন বলেই অভিশপ্ত সেভেন মার্ডারের নিহতদের পরিবার-পরিজন শুধু ন্যায়বিচার লাভ করেনি; এই প্রাপ্তি গোটা বাংলাদেশের। মানুষের জীবনের নিরাপত্তাদানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা সদস্যদের দায়িত্ব পালনের কথা। কোনো কালো শক্তির হয়ে কোনো সাধারণ মানুষের জীবনহরণ নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কারামুক্ত শফিক রেহমান, আমার দেশের মাহমুদুর রহমান ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা। তিনি লিখেছেন, ‘শফিক রেহমান আমাকে বলেছেন, কয়েক মাস জেল খেটে তার ১০ কেজি ওজন কমে গেছে। মাহমুদুর রহমান জেল থেকে বের হয়েছেন কঙ্কাল হয়ে। আর মান্না প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে।’ তিনি আদালতে আনা সেভেন মার্ডারের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘এরা নাকি জেলে আছে আড়াই বছর ধরে। কি আরামে থাকলে, কি নিশ্চিতে থাকলে এমন তরতাজা আর হাসিখুশি চেহারা হয় মানুষের?’ আসিফ নজরুলের মনে যতই প্রশ্ন থাকুক না কেন; অনুরোধ করব এ নিয়ে যেন রাজনীতি বা বিতর্ক না হয়। এটুকু বিচার পাওয়ার জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। টাঙ্গাইলের সরকারদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান রানাও খুনের দায়ে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি পাননি। এটা সত্য কিছু কিছু গুম ও খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি; কিন্তু পরম প্রতাপশালীরা যখন নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের খুনি তখন তাদের গ্রেফতার করে, চাকরিচ্যুত করে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

জেলখানায় যদি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও খুনিদের দেওয়া হয় আরাম ও আয়েশের জীবন, অন্যদিকে রাজবন্দীদের দেওয়া হয় নিপীড়ন— সেটি সরকারের তদন্ত করা উচিত। জেলের ভিতরে-বাইরে সর্বত্র আইন, বিধিবিধান অনুযায়ী সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। কেউ পাবেন জামাই আদর, কেউ পাবেন কারা নির্যাতন সেটি কাম্য নয়।

নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালত যে রায় দিয়েছে, তার জন্য বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে, প্রতিটি নাগরিকের জানমালের হেফাজত ও ন্যায়বিচার লাভ তার সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার হরণ করার সুযোগ নেই। এই রায়ের জন্য আদালতকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। ধন্যবাদ দিতেই হয় শেখ হাসিনার সরকারকে, কারণ তারা আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিয়েছেন। ধন্যবাদ দিতেই হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও এ মামলার সঙ্গে জড়িতদের। কারণ মানুষের শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। আদালতের রায়ে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। খুনিরা যতই ক্ষমতাশালী হোক, আইনের ঊর্ধ্বে যে তারা নন সেটি প্রমাণ হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, মধ্যরাতের কালো ঘোড়া যতই শক্তিশালী হোক, সাত খুন করে মাফ নেই, দণ্ডভোগই তাদের অনিবার্য পরিণতি।

আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের ভূমিকা অনন্য সাধারণ। শান্তি মিশনে অবদান বিশ্বজুড়ে নন্দিত। ৯০ থেকে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আনুগত্য ও সমর্থন উল্লেখ করার মতো। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের পর এক কলামে লিখেছিলাম, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকদের র‌্যাবে যুক্ত রাখার প্রয়োজন আছে কিনা, সেটি ভাবার সময় এসেছে। সেনাসদস্যদের সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে র‌্যাব থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে এই সংস্থাকে আরও আধুনিকায়ন, শক্তিশালী, জবাবদিহিমূলক, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলার এখনই সময়।  নিয়মিত ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের র‌্যাব-পুলিশকে এই চেতনাবোধ থেকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে যে, তারা জনগণের বন্ধু, শত্রু নয়; সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজ ও জঙ্গিবাদের শত্রু। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরাই উত্তম।  সংখ্যালঘু একদল বিচ্ছিন্ন অপরাধীর দায় এত বড় বাহিনী নিতে পারে না, নিজেদের সুনাম নষ্ট করতে পারে না।

 

লেখক : প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ।

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর