শিরোনাম
বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আল্লাহর ইচ্ছায় সন্তুষ্ট থাকা

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

রেযা বলে আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহর ইচ্ছায় কোটি টাকা পেয়ে যেমন আমরা খুশি হই, অনুরূপ যখন কোটি টাকা হারিয়ে যায় তখনও মনে করতে হবে এটা আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়েছে। তাই অস্থির না হয়ে শান্ত থাকতে হবে। আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রত্যেক অবস্থায় তার সিদ্ধান্তের প্রতি রাজি থাকা আবশ্যক। এটা অনেক বড় উঁচু স্তর; যা আমাদের চিন্তা-চেতনারও বাইরে। প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি উভয় অবস্থায় প্রশান্ত থাকা অত্যন্ত কঠিন কাজ। গালি দিলেও নির্লিপ্ত, প্রশংসা করলেও নির্লিপ্ত থাকা সহজ নয়। সাহাবায়ে কেরামগণ ছিলেন রেযা ও তাসলিমের মূর্ত প্রতীক। রসুলের সামনে তারা নীরব-নিথর হয়ে বসে থাকতেন, পাখিরা পিলার মনে করে তাদের মাথার ওপর বসে যেত। সাহাবিসুলভ এ শান আল্লাহপাক কোটি কোটি মানুষের মধ্যে একজনকে দান করেন। বোঝা যায় না, এটা কার মধ্যে আছে, তালাশ করে বের করতে হয়। তারা এমনভাবে চলাফেরা করেন যে, তাদের চেনা কষ্টকর ব্যাপার। যেমন হজরত কাসেম নানুতবী (রহ.) সাদাসিদেভাবে চলতেন। তার খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অতি সাধারণ। তিনি এত মহান বুজুর্গ অথচ কুলির মতো থাকতেন। শত বিপদেও কোনো দুঃখ নেই, শত কষ্টের মাঝেও প্রশান্ত মন। একেই বলে রেযা ও তাসলিম। আলোচ্য আয়াতে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে রয়েছে রেযা ও তাসলিমের প্রকৃষ্ট নমুনা। ‘রেযা’ মানে আল্লাহর সিদ্ধান্তে খুশি থাকা। ‘তাসলিম’ মানে নিজের সব ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ সোপর্দ করা।

নিজ সন্তানকে জবেহ করা : হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্ন দেখলেন যে, তিনি সন্তানকে জবেহ করছেন। নবীর স্বপ্ন সত্য হয়। এতে ধোঁকার লেশমাত্র নেই। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ৮০ বছর বয়সে বহু কান্নাকাটি করে যে সন্তান লাভ করেছিলেন, বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন সেই প্রিয় ছেলে ইসমাঈলকে তিনি স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী জবেহ করার জন্য শুইয়ে দিলেন। অথচ তিনি স্বপ্নের ভিন্ন ব্যাখ্যাও করতে পারতেন; কিন্তু তা না করে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নিলেন। ভেবে দেখুন, হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজকে আল্লাহর জন্য কতটুকু সোপর্দ করেছেন। আল্লাহর জন্য তিনি কেমন পাগল ছিলেন! তিনি তো নবী, তাই হয়তো এমনটি করতে পেরেছিলেন; কিন্তু সন্তান ইসমাঈল সে তো ছোট্ট বাচ্চা! সে কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করল? সত্যি সে এক আশ্চর্য ছেলে। জবেহ করার আগে শয়তান হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার স্ত্রীকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ছেলের কাছে যায়। ছেলে ইসমাঈল শয়তানকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, আমার পিতা আল্লাহর সম্মানিত নবী। তার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। যা হোক, প্রস্তুতি পর্বের শেষ মুহূর্তে ইব্রাহিম (আ.) ভাবলেন, ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। তিনি কেন ছেলের মতামত জিজ্ঞাসা করার  প্রয়োজন অনুভব করলেন এ ব্যাপারে ব্যাখ্যাকারগণ বিভিন্ন তাফসির করেছেন। তবে মূল বিষয়টি হাদিসে আছে— “প্রতিটি নবজাতক ইসলাম গ্রহণের যোগ্যতা নিয়ে জন্মলাভ করে। কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি-খ্রিস্টান-অগ্নিপূজক বানিয়ে ছাড়ে।”

অর্থাৎ মা-বাবার আমল-আখলাকের প্রভাব সন্তানের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। তাই সন্তান জন্ম নিলে মা-বাবার সতর্ক থাকা উচিত।  কারণ মা-বাবার প্রতিটি চরিত্র সন্তান আয়ত্ত করে নেয়।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর