বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অনিয়ম

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল যেন অব্যবস্থা এবং অনিয়মেরই আরেক নাম। হৃদরোগকে বলা হয় রাজকীয় রোগ। গরিব মানুষের জন্য এ রোগের চিকিত্সা খরচ মেটানো প্রায় অসাধ্য ব্যাপার। মূলত তাদের কথা মনে রেখেই সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কী ধরনের চিকিত্সা হয় তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বলা হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কোনো রোগী ভর্তি করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাশ হয়ে ফেরা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়ায়। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মতো চিকিত্সার নামে রোগী বা তার অভিভাবকদের পকেট কাটার জন্য এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখিয়ে থাকে এমন কথাও প্রায়ই শোনা যায়। এসব অভিযোগের সারবত্তা ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদনেও। তাতে বলা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত স্বল্প আয়ের এক রোগী গত বছর বাইপাস সার্জারির জন্য হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আসেন। গত ৩১ আগস্ট তার অপারেশন হয়। তার অপারেশনের পদ্ধতিটিকে চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অফপাম সিএবিজি’ বলা হয়। টাকা নেওয়া হয় ‘অক্সিজেনারেটর’ ও ‘শান্ট’ কিনতে। এই দুই যন্ত্র বাবদ ৬০ হাজার টাকা নিশ্চিত করার পরই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অক্সিজেনারেটরের জন্য ২৫-৩০ হাজার এবং তিনটি ‘শান্ট’র জন্য ২১-২৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে রোগীকে জানানো হয়। কিন্তু যে পদ্ধতিতে তার অপারেশন করা হয়েছে, সেই ‘অফপাম সিএবিজি’-তে অক্সিজেনারেটর নামক মেশিনের ব্যবহারই হয় না। তারপরও ওই রোগীর মতো প্রত্যেক ‘অফপাম সিএবিজি’র রোগীকে দিয়ে অক্সিজেনারেটর মেশিন কিনিয়ে নিচ্ছে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের গুটিকয়েক ডাক্তারের একটি বিশেষ সিন্ডিকেট। রোগীকে দিয়ে কেনা নতুন মেশিন আবার বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এ বাবদ প্রাপ্ত টাকা যাচ্ছে তিন চিকিত্সকের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের পকেটে। যেখানে একটি শান্ট দিয়ে সাধারণত ৫০-৬০টি অপারেশন করা সম্ভব সেখানে প্রত্যেক  রোগীকে দিয়ে তিনটি করে শান্ট কেনানো হচ্ছে। প্রত্যেক অপারেশনেই তাদের পকেটে যাচ্ছে আরও ২১-২৫ হাজার টাকা। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের এটি একটি উদাহরণ মাত্র। চিকিত্সা মানবসেবার পেশা হলেও কতিপয় লুটেরার কারণে তা মানুষের পকেট কাটার পেশায় পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠান তাদের কল্যাণের বদলে অসত্ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেট পূর্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার দৃষ্টি দেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর