শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্বাচন কেবল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়

নূরে আলম সিদ্দিকী

নির্বাচন কেবল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়

আসন্ন নির্বাচনকে নিয়ে নিবন্ধিত দলগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে নানা রকমের সুপারিশ এবং সামাজিকভাবে নানা নসিহত দান করেছেন। যাদের পুরো কেন্দ্রীয় কমিটি নেই, কার্যালয় নেই, ঠিকানা নেই; এমনকি নিবন্ধনটুকু বাদ দিলে তারা একান্তই অস্তিত্ববিহীন— তারা বিমুগ্ধ, বিমোহিত। তাদের সব অন্তরাত্মা আবেগে, উচ্ছ্বাসে, অনুরাগে উদ্বেলিত। নিবন্ধনের সুযোগে তারা  রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আবেগাপ্লুত চিত্তে কল্পনাপ্রসূত প্রস্তাবগুলো পেশ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং বৈদ্যুতিক মাধ্যমে সেটি গুরুত্ব সহকারে প্রদর্শিতও হয়েছে (শিকড়বিহীন এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যখন সেই দৃশ্য বৈদ্যুতিক প্রচারমাধ্যমে অবলোকন করেছেন, তখন হয়তো অনেকের হৃদয় আপন মনে গেয়ে উঠেছে, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!’)। এদের প্রতি বিদ্রূপ করার জন্য নয় এবং আমার আলোচনার মূল বিষয়বস্তুও তারা নন। আমি নির্মোহ চিত্তে নিষ্কলুষ বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে কথা বলি, নিবন্ধ লিখি। সেটা অনেক সময় রূঢ় ও তীব্র সমালোচনা হিসেবে প্রতিভাত হয়। তাই সুযোগ নিয়ে একটু হালকা কৌতুক করলাম মাত্র।

এবার নির্বাচন প্রশ্নে নির্বাচনী আইন প্রণয়ন এবং নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে সার্চ কমিটি গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রস্তাবনার প্রশ্নে আসা যাক।

নিবন্ধনসর্বস্ব না হলেও কিছু কিছু রাজনৈতিক দল আছে, সংবাদপত্র এবং বৈদ্যুতিক মাধ্যম প্রায় পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে। জনসমর্থন নেই বললেই চলে, অথচ প্রকারান্তরে দুটি জোটকেই তারা শুধু দখল করেই রাখেননি, ক্ষেত্রবিশেষে দুই জোটেই তারা নীতিনির্ধারক। জোট-বহির্ভূত নির্বাচন হলে যাদের নিজস্ব দলীয় প্রতীকে শতকরা ৯৯ জনেরই জামানত থাকবে না। তারা সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিক মাধ্যমে এমনকি সরকারেও কর্তৃত্ব করছেন। তাত্ত্বিক এসব বাম রাজনীতিবিদ সার্চ কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করার সুপারিশ এনেছেন। অন্যদিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সার্চ কমিটি বা নির্বাচন কমিশনে সংযুক্ত হতে অনীহা ও অনাগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, আদালতটাকে রাজনীতির আবর্তের বাইরে রাখার প্রয়োজনে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে এত ডামাডোল, হৈচৈ, তর্ক-বিতর্ক, টকশো হচ্ছে। অন্যদিকে দুটি বড় জোটের নেত্রী এর মধ্যে কোনো একটি বক্তৃতা করেননি একজন আরেকজনকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থেকে। প্রান্তিক জনতা এতে শুধু ত্যক্ত-বিরক্তই নয়, ক্রমেই রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তব, তারা ‘জননেত্রী’ ও ‘দেশনেত্রী’কে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মনে করেন। এটাকে দেশের রাজনীতির জন্য একটা ভয়াবহ অশনিসংকেত মনে হয়।

এটি শতভাগ নিশ্চিত, বিএনপিকে এবার নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে। তা না হলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসে মদদ, রাজনৈতিক কর্মসূচি-বিবর্জিত জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ মারার কর্মসূচির কারণে যখন তাদের সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা ছিল, তখনও আমি বিস্ময়াভিভূত ও আশ্চর্যান্বিত হয়ে লক্ষ করেছি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা কেবল অধিকাংশ কাউন্সিলরই পাননি, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রাপ্ত মোট ভোটের হিসাবে তারাই বেশি ভোট পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন নেত্রী এটিকে কীভাবে নিয়েছেন জানি না। তবে আমার মতে, এ ফলাফলে তার জন্য কিছু শিক্ষণীয় আছে। এটা সত্য যে, বিএনপি ক্ষমতাশ্রয়ী দল। সামরিক ব্যক্তিত্বের ঔরসে ক্যান্টনমেন্টের গর্ভেই এর জন্ম। দলটি নেতায় ভরপুর, কিন্তু কর্মীশূন্য। তরুণ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে যারা বুড়ো থুত্থুড়ে— তারা কেউই ক্ষমতার নিশ্চিত ইঙ্গিত না পেলে রাজনৈতিক কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ। আওয়ামী লীগকে যারা ভারতাশ্রয়ী মনে করেন, তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেও আমি বলতে পারি, ক্ষমতার গ্যারান্টি পেলে ভারতের কেনা গোলাম হতেও বিএনপির প্রথম সারির অনেক নেতাই হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। জনান্তিকে জানাতে চাই, ২০১৪ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল বিধায় বেগম খালেদা জিয়ার হৃদয়ের প্রলোভনটি এতই প্রকট ও উগ্র হয় যে, নিষ্ঠুর মুসলিমবিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদির সহানুভূতি আদায়ের সব চেষ্টাই তিনি করেছেন। আদর্শ-বিবর্জিত রাজনীতি করলে এটাই হয়। বোধ করি এখানে এটা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, ১৮৮৫ সালে গঠিত কংগ্রেস ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে বিগত নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত এত বড় পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনো হয়নি। যদিও সামগ্রিক জনতার ভোটে বিজেপির চেয়ে তারা মাত্র ৪% ভোট কম পেয়েছিলেন। এসব নিয়ে তুলকালাম করার মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি তো তাদের ছিলই না, বরং সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিং, রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সংসদে নিয়মিত উপস্থিত থেকে লোকসভার প্রতিটি বিতর্কে অংশ নেন এবং কংগ্রেসের অভিব্যক্তিকে অসংকোচে তুলে ধরেন। এটি কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক মননশীলতারই প্রতিফলন শুধু নয়, বরং অবাক বিস্ময়ে পৃথিবী লক্ষ করেছে, কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতা। শুধু অবলোকন করতে পারেননি আপন চিন্তার আবর্তে অবরুদ্ধ ‘জননেত্রী’ ও ‘দেশনেত্রী’। প্রধানমন্ত্রী না হতে পারলেই সংসদের প্রতি আগ্রহ বা দায়িত্ববোধ কারও মধ্যেই পরিলক্ষিত হয় না। যথা পূর্বং তথা পরং। উভয়েই উভয়ের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে হরতাল, অবরোধ ও ধর্মঘটের মধ্যে রাজনীতিটাকে জিম্মি করে রাখেন।

 

 

গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলার রায় ঘোষিত হলো। রায়টি সন্দেহাতীতভাবে যুগান্তকারী এবং গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাওয়ার মতো বৈদ্যুতিক প্রচারমাধ্যমে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন— রায়ে আমরা আনন্দিত কিন্তু সম্পূর্ণ আশঙ্কামুক্ত নই। বিচারিক ব্যবস্থা এক্ষেত্রে প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির মতো মানুষের চিত্তকে উদ্ভাসিত করেছে কিন্তু সন্দেহের মেঘ পুরোপুরি কাটেনি। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এবং অনেককে বলতে শুনেছি, দণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেলের শ্বশুর শুধু ক্ষমতাসীন মন্ত্রীই নন, দলেরও ডাকসাইটে নেতা। ফলে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে শাস্তিটা অপেক্ষাকৃত লঘু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যখন দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা ও পর্যালোচনা, তখন ক্ষমতাসীন নেত্রী জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিলেন। সেখানে জনগণের প্রত্যাশা ছিল, আসন্ন নির্বাচনকে সর্বজনগ্রাহ্য করার জন্য একটা সুস্পষ্ট রূপরেখা তিনি প্রদান করবেন। আমাদের মুজিব ভাই যেমন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বেরিয়ে এসে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে যাওয়ার প্রাক্কালে রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বজ্র নির্ঘোষে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘মনু মিয়া মৃত্যুকালে আমার আলমের কাছে বলে গিয়েছিল, মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে বলবেন, আমি বাংলার জন্য রক্ত দিয়ে গেলাম, আমি বাঙালির জন্য রক্ত দিয়ে গেলাম। গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রাক্কালে আমি বাংলার জাগ্রত জনতার কাছে শপথ করে গেলাম, মনু মিয়ার রক্তের সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করব না।’  

বাংলার ও বাঙালির স্বার্থ রক্ষায় তিনি তো কোনো আপস করেনইনি বরং এই প্রশ্নে তার হৃদয় এতটা উজ্জ্বীবিত ছিল, উদ্বেলিত ছিল, উচ্ছ্বলিত ছিল যে, মরুভূমির নিষ্কলুষ সূর্যোদয়ও যেন তার কাছে ম্লান হয়ে যায়। শেখ হাসিনার হৃদয়ের ঔদার্য তার ধারেকাছেও নেই। তবু আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও দেশ-বিদেশে এর নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করার তাগিদে প্রকাশ্য জনসভায় তাকে শপথবাক্য উচ্চারণ করতে হবে নির্বাচনকে সর্বজনগ্রাহ্য এবং নিরপেক্ষ করার তাগিদে সর্বোচ্চ চেষ্টাই তিনি করবেন। তা না হলে পৃথিবী-বিখ্যাত এবং ভারতের অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিরল ব্যক্তিত্ব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাক্সেনাকে এনে বসিয়ে দিলেও নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার আদৌ সম্ভাবনা নেই (শেখ হাসিনা যদি না চান)।

প্রশাসন আজ সম্পূর্ণ দলভুক্ত। অভিশংসন আইনের কারণে বিচারিক ব্যবস্থা অনেকখানি আতঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্ত। বিচারিক ব্যবস্থার ওপরে প্রান্তিক জনতার নির্ভরতা ও বিশ্বাস অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে। দুর্নীতি, মূল্যবোধের অবক্ষয় রাহুর মতো জাতিকে গ্রাস করেছে। নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। দেশের, দলের প্রচণ্ড ক্ষতিসাধন করবে এমন যে কোনো কর্মকাণ্ডের বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে নিষেধ বা সতর্ক করার মতো কোনো একটি ব্যক্তি আওয়ামী লীগে বা ১৪ দলীয় জোটে নেই। সরাসরি আওয়ামী লীগ না করলেও মানিক মিয়ার ভাষায় যারা ‘আম্ লীগের’ চাইতেও আওয়ামী লীগের পদলেহনকারী তারা তো রাজনীতিতে ধর্মকে নিষিদ্ধ করার জন্য তারস্বরে চিৎকার করছেন। এসব অর্বাচীন কেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতবর্ষের দিকে তাকান না! যেখানে সব ধর্মের নামেই রাজনৈতিক দল আছে। হিন্দু মহাসভা তো আজ ক্ষমতাসীন। তারা তো হিন্দুস্থানে বিশ্বাসী, ভারতবর্ষে নয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থন ও সহমর্মিতাই নয়; পশ্চিমবঙ্গেও কেন্দ্রের শাসন না থাকলে ওখানে আমাদের এক কোটি মানুষের আশ্রয় ও প্রবাসী সরকারকে টিকে থাকার জন্য অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুুখি হতে হতো। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কেন্দ্র থেকে নিযুক্ত সিদ্ধার্থ শংকর রায় এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজয় সিং নাহার।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন সিপিএম চায়না অনুসৃত দল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের অভিব্যক্তি ছিল নিয়ন্ত্রিত। বাম জোটের অন্তর্ভুক্ত ফরোয়ার্ড ব্লক, সিপিআই এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। সিপিএম চাইনিজপন্থি হওয়া সত্ত্বেও তাদের কিছু কিছু সংবেদনশীল নেতৃত্ব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দিয়েছিলেন তখন মস্কোপন্থি ও পিকিংপন্থিরা নিষ্ঠুরভাবে ছয় দফার বিরোধিতা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে তারা শুধু সিআইএর দালালই নয়, তার ফাঁসির দাবি পর্যন্ত করেছিলেন, তার চামড়া তুলে নিতে চেয়েছিলেন। সেসব ছাত্রসংগঠনের নেতারা আজকে মহাসমারোহে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় জেঁকে বসে আছেন। অথচ খোদা না করুন; আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে গেলে এসব তথাকথিত প্রগতিশীল বাম সটকে পড়বেন, তা বলাই বাহুল্য।

আমি প্রতিটা মুহূর্তে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি— সেক্ষেত্রে ঝড়-ঝাপটা, নির্যাতন-নিগ্রহ কেবল আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে সব নেতৃত্বকেই সহ্য করতে হবে। দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ মনে করেন, ছলে-বলে-কলে-কৌশলে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে আগের মতো শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বিলুপ্ত হবে না, তিনি একটা ভয়াল মূর্তিতে অবতীর্ণ হবেন। যেটা ২০০১-২০০৬ সময়কালের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে।

তাই আমি প্রতি মুহূর্তেই দাবি করি, একটি সহনশীল রাজনৈতিক মানসিকতা গড়ে উঠুক। রাজনীতিতে আদর্শ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিই প্রতিপাদ্য হোক। এবং সেটি একমাত্র সম্ভব দুটি জোটের মানসিকতাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার গহ্বর থেকে বের করে এনে সহনশীলতার পাদপীঠে প্রতিস্থাপিত করে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিকতা আজকের এ গণতান্ত্রিক ধারার মাধ্যমে আনা সম্ভব নয়। নির্বাচনকে জনগণের প্রতিনিধিত্বের জন্য নিতে হবে, শুধু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়। সর্বশ্রেণির সাধারণ মানুষ যখন উপলব্ধি করবে নির্বাচন কেবল ক্ষমতার পালাবদলের খেলা নয়, তখন তারা রাজনীতির প্রতি আস্থা স্থাপন করবেন এবং তাদের মধ্যে এমন একটা প্রতীতি ও প্রত্যয়ের জন্ম নেবে নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-উত্তরকালে তারা সহনশীলতার রক্ষক হয়ে দাঁড়াবেন। সাম্প্রতিককালের অভিজ্ঞতা বলে, আমেরিকার উগ্র মুসলিম-বিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদির পক্ষে একটা ভয়াবহ অঘটন ঘটানো সম্ভব হবে না, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।  প্রান্তিক জনতার হৃদয়ের পরতে পরতে সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা সেখানে রাজনীতির উপাদান, ব্যক্তিতান্ত্রিকতা নয়।

ক্ষমতা বদলের অর্থ সামাজিক বিপর্যয় নয়, রাস্তায় নেমে দুই দলের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ নয়, প্রতিপক্ষের প্রতি একহাত দেখে নেওয়া বা প্রতিপক্ষকে উত্খাত করা নয়— এটা নিশ্চিত করতে হবে।  আজকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকার হোক, রাজনীতি শুধু ক্ষমতার জন্য নয়, প্রান্তিক জনতার জন্য।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর