রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিদেশে অর্থ পাচার

দুদক ও এনবিআরের তদন্ত কাম্য

বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কর ফাঁকি, সরকারি সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার এবং সস্তা শ্রমের সুবাদে অসৎ ব্যবসায়ীরা যে মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলছে তার এক বড় অংশই পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ হলো ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ কোটি টাকারও বেশি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়ে থাকে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়— আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ইত্যাদি উন্নত ধনী দেশসহ ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ভোগ করছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। আয়ের ৮০ শতাংশ নানা পথে বিদেশে চলে যায়। কম দামে যন্ত্রপাতিসহ উৎপাদন সামগ্রী কিনে বেশি দাম দেখিয়ে হরহামেশাই অর্থ পাচার করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা এ ধরনের পাচারের সঙ্গে বেশি জড়িত। সরকারের কাছ থেকে ছলচাতুরীর মাধ্যমে নেওয়া বিভিন্ন সুবিধার অপব্যহারকারী পোশাকশিল্প মালিকরা অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে এগিয়ে। গত তিন বছরে পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই শ্রমিকদের প্রকৃত বেতন বাড়ার বদলে কমেছে। চাপ প্রয়োগ করে সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায় এবং শ্রমিকদের ঠকিয়ে যে অর্থ পোশাক শিল্পমালিকদের একাংশ আয় করছেন কানাডার একটি পত্রিকার মতে সে টাকায় টরেন্টোতে গড়ে তোলা হয়েছে, বেগম পাড়া। সাহেবরা দেশে থাকলেও বেগম ও সন্তানরা থাকেন কানাডায়। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও মালয়েশিয়ায় টাকা পাচার করে তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গার্মেন্ট মালিকদের কেউ কেউ হেলিকপ্টারেরও মালিক। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়িতে চড়েন এমন গার্মেন্ট মালিকের সংখ্যাও বিপুল। দুদক ও এনবিআর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপও বেরিয়ে আসবে বলে আমাদের ধারণা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর