রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তাবলিগ হোক নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী

মাওলানা হাফেজ কাজী মারুফ বিল্লাহ

তাবলিগ হোক নবীজীর সুন্নত অনুযায়ী

মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থার নাম হলো ইসলাম। মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানও এটি। মহান আল্লাহর মনোনীত এই শাশ্বত জীবনব্যবস্থা যথার্থ মেনে চলার মাধ্যমেই ইহ-পারলৌকিক জীবনের শান্তি, সফলতা ও মুক্তি নিহিত। এই বোধ-অনুভূতি মানবমনে জাগ্রত করার জন্যই দাওয়াতে দীনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যুগে যুগে আল্লাহতায়ালার প্রেরিত নবী-রসুলগণ দাওয়াতে দীনের এই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ আল-কোরআন এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী পবিত্র হাদিস শরিফেও দাওয়াত ও তাবলিগের ওপর জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করবে, আর সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দান করবে। তারাই হলো সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল! যা কিছু আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। যদি তা না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন না। (সূরা মায়েদাহ : ৬৭)।

যিনি তাবলিগ করেন, তাকে বলে মুবাল্লিগ। মুবাল্লিগের আরেক নাম ‘দায়ী’। দায়ীর মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয় এবং নিজেও সৎ কাজ করে, আর বলে আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা হা-মীম সেজদাহ : ৩৩)। যারা দাওয়াতের মেহনত করে আল্লাহতায়ালা তাদের শ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতির সম্মান দিয়েছেন মানুষের উপকার করার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ ও উপকারের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ইমান রাখবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)।

বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে মহানবী (সা.) দাওয়াতে তাবলিগের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, ‘তোমরা একটি আয়াত হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও।’ (তিরমিজি)। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পবিত্র বাণীর মাধ্যমে পুরো উম্মতের ওপর দাওয়াতে দীনের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। রসুল (সা.)-এর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অগণিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ইসলামের চিরন্তন পয়গাম নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর মুখলিস বান্দারা নিরলস প্রচেষ্টায় বিভিন্ন উপায় ও পদ্ধতিতে আজও দাওয়াতের পবিত্র খেদমত অব্যাহত রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে উদ্ভব হয়ে তাবলিগ জামাত।

‘তাবলিগ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পৌঁছানো। পারিভাষিক অর্থে ইসলামের মহান বাণী, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, শরীয় বিধিবিধান মানুষের কাছে পৌঁছানোকে ‘তাবলিগ’ বলা হয়। ইসলামে তাবলিগের গুরুত্ব অপরিসীম। তাবলিগের মাধ্যমেই সব নবী তাদের রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রিয়নবী (সা.) তাবলিগের বদৌলতেই মাত্র ২৩ বছরে ইসলামের সুমহান বিজয় অর্জন করেছেন। সুতরাং তাবলিগকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাবলিগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আমাদের দাওয়াত ও তাবলিগ যেন হয় রসুল (সা.)-এর পূর্ণ সুন্নত অনুযায়ী। তাহলে অল্প সময়েই আমরা কাঙ্ক্ষিত সফলতা লাভ করব ইনশাআল্লাহ। 

লেখক :  খতিব, বৃহত্তর জাজিরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

সর্বশেষ খবর