সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আরব বিশ্বে তাবলিগ জামাত

ফয়সল আহমদ জালালী

হে রসুল! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তাবলিগ করা। (সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৭)। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানোর একটি অনুপম পন্থা হলো তাবলিগ জামাত। এটি উদ্ভাবন করেছিলেন অনারব একজন নিবেদিতপ্রাণ আল্লাহর বান্দা— হজরতজী আল্লামা ইলিয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। আরবের উলামায়ে কেরাম ও সেখানকার মুসলিমরা প্রথম দিকে দাওয়াতি এ পন্থার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। ইসলামের নাম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও আখের গোছানোর গোষ্ঠীর অভাব নেই এ উপমহাদেশে। তাবলিগ জামাত সব পার্থিব মোহের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করছে। ফলে আজ দুনিয়ার সব ধর্মপ্রাণ মুসলিমের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। আরব অনারব সর্বস্তরে তাবলিগ জামাত সমাদৃত। নিঃস্বার্থে দাওয়াতি এ কাফেলাকে আজ আরবের উলামায়ে কেরামও গ্রহণ করে নিয়েছেন। ২০১৬ সালে ইসলামের প্রাণকেন্দ্র মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মনোয়ারায় গিয়ে তাবলিগ জামাতের অগ্রযাত্রা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। সেখানকার অনেক উলামায়ে কেরামের সঙ্গে আমি মতবিনিময় করেছি। আগে তাদের এ ব্যাপারে যতটুকু সতর্ক অভিমত প্রকাশ করতে দেখেছি এখন আর তা নেই। বর্তমানে তারা তাবলিগের একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে গেছেন।

দিল্লির নিজাম উদ্দীন হতে তাবলিগ জামাতের সূচনা হয়। এখানে রয়েছে প্রসিদ্ধ একটি মাজার। বিখ্যাত সুফী সাধক নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রহ.)-এর কবরস্থান। এ উপমহাদেশের সাধারণ কিছু মানুষ ইসলামের মৌলিক শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় মাজার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ে। আরবের উলামায়ে কেরাম মাজারকেন্দ্রিক কাজকর্মকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। সেখানকার উলামায়ে কেরামের এক সময় সন্দেহ ছিল তাবলিগ জামাত মাজার আশ্রিত কোনো দল হতে পারে। তাবলিগ জামাত পছন্দ করে না, এ ধরনের কেউ কেউ তাদের সে ধারণাও দিতে পারেন। বর্তমানে বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আল্লামা ইলিয়াস রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের কেউই কবর বা মাজারওয়ালাদের কেউ ছিলেন না বা নয়। এ ছাড়া এক সময় আরবদের ধারণা ছিল, এটি সুফী সাধকদের কোনো সংগঠন কিনা? কিন্তু দীর্ঘকালের পথ পরিক্রমায় প্রতিভাত হয়ে গেছে যে, এটি সুফীবাদের কোনো সংগঠন নয়। হাক্কানি ওলি আউলিয়ার বিরোধীও কোনো দল নয়। তাই এখনকার আরব দেশীয় কোনো আলেম তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধ অবস্থানে নেই। বড়জোর কেউ কেউ নীরবতা পালন করেন। এর প্রমাণ হলো এখন আর সৌদি আরবে তাবলিগের দাওয়াতি কাজ গোপনে করার প্রয়োজন হয় না।  খোদ মক্কা ও মদিনা থেকে তাবলিগ জামাতের লোক চিল্লার জন্য বহির্বিশ্বে বেরিয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাধানিষেধও নেই।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর