মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমস্যাক্রান্ত পুলিশ বাহিনী

জনবল ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে

সভ্য সমাজে পুলিশবিহীন কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা কল্পনা করাও কঠিন। বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও স্বীকার করতেই হবে দেশের সরকার ব্যবস্থার যে কোনো শাখার চেয়ে পুলিশের সদস্যরা বেশি দায়িত্বশীল। অন্য যে কোনো বিভাগের চেয়ে তারা সেবা দেনও বেশি। দেশের ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের নিরাপত্তা বিধানে বর্তমানে সারা দেশে পুলিশ বিভাগে কর্মরত আছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৮ জন। বাংলাদেশে এক হাজারের বেশি মানুষের বিপরীতে মাত্র একজন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। অথচ ভারতে প্রতি ১৮৯ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন, পাকিস্তানে ৩৭৭ জনের বিপরীতে একজন, নেপালে ২১৯ জনে একজন, ভুটানে ১৪৬ জনে একজন, মালয়েশিয়ায় ২৪৯ জনে একজন, থাইল্যান্ডে ২২৮ জনে একজন, জাপানে ১৫৭ জনে একজন ও যুক্তরাষ্ট্রে ২৪৫ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে রয়েছেন। পুলিশের জনবলে যেমন ঘাটতি রয়েছে তেমন সুযোগ-সুবিধার অভাবও প্রকট। একজন পুলিশ সদস্যকে নির্ধারিত সময়ের দেড় থেকে দ্বিগুণ সময় ডিউটি করতে হয়। কিন্তু তারা যে বেতনভাতা পান তা দিয়ে বর্তমান বাজারে টিকে থাকা কঠিন। আবাসন সংকটেও ভোগেন সিংহভাগ পুলিশ সদস্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ পুলিশ সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপনেও বাধ্য হন। সারা দিন হাড়ভাঙা ডিউটির পর বিশ্রামের জন্য ব্যারাকে ফিরে তাদের দেখতে হয়, নিজের জন্য বরাদ্দ সিটে ঘুমিয়ে আছেন আরেকজন। প্রায় ২ লাখ পুলিশ সদস্যের বিপরীতে যানবাহন রয়েছে ৯ হাজার ৬৬টি। এর মধ্যে পাঁচ হাজার গাড়িই পুরনো। জনবলের তুলনায় পুলিশের যানবাহনের সংখ্যা কম। শহরের চেয়ে মফস্বলের অবস্থা আরও করুণ। যানবাহন ও আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা অপ্রতুল এবং উন্নত প্রশিক্ষণেরও অভাব থাকায় পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হয়। অপ্রতুল আর পুষ্টিহীন খাবার, মানহীন ড্রেসের বিড়ম্বনা আর ডিউটির চাপে অনেকে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা যেমন বাড়াতে হবে, তেমন তাদের সম্মানজনক বেতন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী এ বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল বাহিনী তথা জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যুগোপযোগী সংস্কারেরও উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর