বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

চিকিৎসা খাতে নৈরাজ্য

শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নিন

চিকিৎসা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা গণমানুষের এ অধিকার পূরণে প্রথম থেকেই তুলনামূলকভাবে যত্নবান ভূমিকা রেখেছে। দেশের চিকিৎসা খাতে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় জাতীয় বাজেটে। যারা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে পড়াশোনা করছে তাদের পড়াশোনার ৯৫ শতাংশই অর্থের জোগান দেওয়া হয় দেশবাসীর পকেট থেকে। দেশের সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পেছনেও ব্যয় করা হয় বিপুল অর্থ। তারপরও দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা খাত কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। দেশে মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এমনকি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে সরকারিভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে উদারভাবে। এত কিছুর পরও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলছে চরম নৈরাজ্য। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি চিকিৎসা খাত সেবার বদলে বাণিজ্যিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। উভয় খাতেই বিরাজ করছে যাচ্ছেতাই অবস্থা। দেশের চিকিৎসকদের বেশির ভাগই ওষুধ কোম্পানির হুকুম বরদারের ভূমিকা পালন করছেন। রোগীদের কাছ থেকে বড় অংশের ফি নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকতে পারছেন না। ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশন করার নামে তাদের কাছ থেকেও গ্রহণ করছেন বড় অংকের টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে চিকিৎসকদের অলিখিত চুক্তি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয়কে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা কমিশনের লোভে যেসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই সেসব বিষয়ে পরীক্ষার জন্যও রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যেনতেনভাবে রিপোর্ট দিয়েই খালাস। বাংলাদেশের এসব পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি ভারতে গেলে সে দেশের চিকিৎসকরা হাসাহাসি শুরু করেন। সোজা কথায় চিকিৎসার নামে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রেই চলছে প্রতারণা। ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জাতীয় বাজেটে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তা আদতে খুব একটা কাজে লাগছে না।  জনস্বার্থে এসব বিষয়ে সরকারকে কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জাগতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর