শিরোনাম
রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রামপাল নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক

ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক

রামপাল নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নের চালিকাশক্তি। এটা উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। একটা দেশে কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যায় মাথাপিছু গড়ে কতটা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহূত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।  প্রবৃদ্ধির সূচকের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এটা সম্ভব হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে। সেটা পরিমাপ করা যায় মাথাপিছু গড় বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে তাকালে, যা বিগত কয়েক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তাই উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে গেলে আরও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এবং জ্বালানি ব্যবহার করা দরকার। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে বন্ধুরাষ্ট্র ভারত এগিয়ে এসেছে সহযোগিতা করার জন্য। অনেক পর্যালোচনার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এ নিয়ে তেল-গ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটি এবং সাম্প্রতিককালে বিএনপি চেয়ারপারশন বেগম খালেদা জিয়া বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর জবাব দিয়েছেন এবং জনস্বার্থে কেন এই বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা দরকার তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এখন বিষয়টি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যালোচনা করা যেতে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, প্রস্তাবিত স্থানে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এবং সামগ্রিকভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হবে। পশুর নদী বিলুপ্ত হবে। এ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুেকন্দ্র থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলবে। তিনি এও বলেছেন, বিদ্যুেকন্দ্র থেকে ১৪২ টন সালডাই-অক্সাইড এবং ৮৫ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়ে সুন্দরবনের বাতাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেবে। নির্গত গরম পানি পশুর নদীকে দূষিত ও বিলুপ্ত করবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের কোম্পানি ১৫ শতাংশ করে বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক।  বাংলাদেশ কেন এ ঋণের গ্যারান্টার থাকবে এ ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন করেন বেগম খালেদা জিয়া। ভারতের এই কোম্পানি তিন স্থানে ২৫ কিমির মধ্যে বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করতে চেয়েছিল কিন্তু জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে হয়েছে। তিনি বিদ্যুেকন্দ্র বাতিলের আহ্বান জানান। তেল-গ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটি দীর্ঘদিন থেকে সুন্দরবন ও বিশ্বঐতিহ্য ধ্বংস হবে এই যুক্তিতে আন্দোলন করে আসছে। বক্তব্য, বিবৃতি, সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে এ বক্তব্য উত্থাপন করছে এবং বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-উৎপাত্ত দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও অন্য বিরোধিতাকারীদের বক্তব্য খণ্ডন করেন। তিনি বিদ্যুেকন্দ্র থেকে বায়ু, শব্দদূষণ, কয়লা পরিবহনের কারণে নদী দূষণের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেন, শব্দ দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৪ কিমি দূরে শব্দ যাবে না। ২০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। পশুর নদী থেকে পানি নিয়ে ব্যবহারের পর তা শীতল করে নদীতে ফেলা হবে। কোনো দূষিত বা গরম পানি নদীতে ফেলা হবে না। মালিকানা সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্যারান্টার হওয়া মানে বিনিয়োগ করা নয়। আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিমির মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র না করার আইন আছে। রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্তসীমানা থেকে ১৪ কিমি দূরে এবং বিশ্বঐতিহ্যের অংশ এলাকাটি থেকে প্রায় ৬৫ কিমি দূরে অবস্থিত। তিনি এও বলেন, ২০০০ সালে তার সরকার দিনাজপুরে প্রথমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র করে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া তা তো বন্ধ করেননি। সেখানে তিন ফসলি জমি, ঘনবসতি আছে। ফসলের তো ক্ষতি হয়নি, সবুজ-সবুজই আছে। রক্ষা কমিটি ও বামপন্থি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সব সময় উল্টো রাজনীতি করে যায়। রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র হবে বলে তিনি দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুন্দরবনের বিশ্বঐতিহ্য ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করেছে। কাজেই এর প্রতি তাদেরই বেশি আন্তরিকতা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনায় আরও বলা হয়, রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের কারণে সুন্দরবনে বাতাসের কোনো ক্ষতি হবে না, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এড়াতেও আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলবে এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে রামপাল কেন্দ্র থেকে মাত্র ৮৩৬ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে, যা পরিবেশের সহনীয় মাত্রার নিচে। বিদ্যুেকন্দ্রের উঁচু চিমনি ব্যবহারের কারণে নিঃসরিত গ্যাস সুন্দরবনের দিকে প্রবাহিত হবে না। এমনিতেই বছরের নয় মাস বাতাস সুন্দরবনের দিকে বইবে না। বাকি তিন মাসও বাতাস সুন্দরবন পর্যন্ত যাবে না। প্রতিদিন এই বিদ্যুেকন্দ্র থেকে ১৪২ টন সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং ৮৫ টন নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইড নির্গত হয়ে সুন্দরবনের বাতাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেবে বলে খালেদা জিয়া উল্লেখ করেছেন। আওয়ামী লীগের বক্তব্য প্রতিদিন এই বিদ্যুেকন্দ্র থেকে মাত্র ১.৪২ টন সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং ২৪ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। এ ছাড়া মধ্য-প্রদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন বলে খালেদা জিয়ার বক্তব্য সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুেকন্দ্রটি নির্মাণ কাজ চলমান।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, একদিকে খালেদা জিয়া এবং রক্ষা কমিটি ও অন্যান্য সংগঠন সুন্দরবন ও বিশ্বঐতিহ্য রক্ষার নামে রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের বিরোধিতা করেছেন, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। এর পরেও বিরোধিতার অবসান হয়নি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, বিশ্বে দীর্ঘদিন থেকেই ধরিত্রী ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন চলছে, এর সঙ্গে জাতিসংঘ যুক্ত হয়েছে। এ আন্দোলনে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং এনজিওসমূহ যুক্ত হয়ে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরিওতে ধরিত্রী ও পরিবেশ রক্ষার সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানানো হয়। বিগত প্যারিস সম্মেলনে এর সফল সমাপ্তি হয়। এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বা তাদের প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিওর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য উন্নয়ন সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে যে হারে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্যাস নির্গমন হচ্ছে তার ফলে এই শতাব্দীর শেষে বিশ্বের উষ্ণতা ৪ ডিগ্রি বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন বেশি হয়ে থাকে ফসিল জ্বালানি পোড়ানোর ফলে। ফসিল জ্বালানির মধ্যে রয়েছে কয়লা, তেল ও গ্যাস। এর মধ্যে কয়লা ব্যবহারেই বেশি গ্যাস নির্গমন হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, তেল-গ্যাস আগামী ৪০ বছর পর্যন্ত চলবে এবং কয়লা ২০০ বছর পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাজেই আমাদের নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি, বায়ু ও বায়োমাস এবং হাইড্রো শক্তির ওপর জোর দিতে হবে, পাশাপাশি নিউক্লিয়ার এনার্জির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি ব্যবহারে কাজ করছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে পরিকল্পনা চলছিল, বর্তমান সরকার রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় তা স্থাপন করতে যাচ্ছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন যেহেতু উচ্চপ্রযুক্তি, সময় সাপেক্ষ এবং প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি ও ঝুঁকিপূর্ণ সে কারণে নবায়নযোগ্য শক্তির পাশাপাশি লোড ব্যালেন্সের জন্য কয়লাভিত্তিক তুলনামূলক সস্তা হাইভোল্টেজ পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। সে কারণেই বাংলাদেশ সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। উচ্চপ্রযুক্তি ও বিনিয়োগে সক্ষম পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, চীন এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র অতীতেও স্থাপিত হয়েছে বর্তমানেও হচ্ছে। তবে প্যারিস সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বের উষ্ণতা এই শতাব্দীর শেষে ৪ ডিগ্রির পরিবর্তে ২ ডিগ্রি বা এর নিচে যেন সীমাবদ্ধ থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সে জন্য লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনা এবং কয়লার ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা দরকার। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা আশা করি উন্নত দেশ যাদের কারণে গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বেশি তারা এগিয়ে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী হয়েছে। শিল্প উৎপাদনও বেড়েছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, আইটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক এডিবি রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ফলেই এ দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে ১১৮টি দেশের মধ্যে ১২টি দেশে ৬ শতাংশের ওপর উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ জাতিসংঘের নির্ধারিত সময়ের আগেই এমডিজি অর্জন করেছে, এসডিজিও অর্জন করতে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও সফলতা দেখিয়েছে, যার ফলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন, এমনকি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পদকে ভূষিত হয়েছেন।

পৃথিবীর সব দেশেই উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পরিবেশের ওপর একটা প্রভাব পড়ে, কিন্তু যতটা সম্ভব পরিবেশ রক্ষা করে এগিয়ে যেতে হয়। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে কয়েকশত বছর আগে যে অবস্থা ছিল সেই পরিবেশ নিশ্চয়ই এখন নেই। রাস্তা, ব্রিজসহ অবকাঠামো, জনবসতি তৈরি করলেও পরিবেশের ওপর একটা প্রভাব পড়ে। যমুনা ব্রিজ তৈরির ফলে যমুনা নদীর ওপর বেশ প্রভাব পড়েছে। আগের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পদ্মা ব্রিজ তৈরি হলেও তাই হবে। এ অবস্থাকে মেনে নিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করেই এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীতে তাই হচ্ছে। কাজেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি যেহেতু উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি সে কারণে এ দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপই নিচ্ছে। অতি সম্প্রতি তেল-গ্যাস-বন্দর রক্ষা কমিটি শুধু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই বলছে না, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, বাঁশখালী বিদ্যুেকন্দ্র, বঙ্গপোসাগরে নির্মিত এলএনপি টার্মিনাল নির্মাণেরও বিরোধিতা করছে। তার মানে পরিবেশ রক্ষার নামে উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করছে। পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, পৃথিবীর উন্নত দেশেও বনভূমির ১০ কিমি মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় আয়তনের জায়গা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই স্থান নির্ধারিত হয়। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি এবং বিশ্বঐতিহ্য থেকে ৬৫ কিমি দূরে রামপাল পাওয়ার প্লান্ট হতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্যাস নিঃসরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নদী রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখা হবে বলে আমরা আশা করি। সুন্দরবন বাংলাদেশে ও ভারতের অংশে ২০০ বছর আগে যে বিস্তৃত এলাকা ছিল তা এখন এক-তৃতীয়াংশে এসে পৌঁছেছে এবং একে রক্ষা করার জন্য আরও কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে তা অবশ্যই জনস্বার্থে নিতে হবে।  রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপিত হোক এবং দেশের স্বার্থে এ বিতর্কের অবসান কাম্য।

লেখক :  সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রদূত।

সর্বশেষ খবর