বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুলিশের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গতকাল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ জড়িত। খবরটি পড়ে মনে হলো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বুঝি শেষ নেই। একটার পর একটা অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে নাগরিকদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত এই রাষ্ট্রীয় বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় এরা, রিমান্ডের নামে এরা অভিযুক্ত আসামিদের ওপর চালায় অমানবিক নির্যাতন, অজ্ঞাত আসামি বানিয়ে শত শত নিরপরাধ মানুষের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অঙ্কের টাকা, টাকা না দিলে করে গ্রেফতার-হয়রানি। আবার আসল আসামিদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে তদন্তে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় জামিনযোগ্য হালকা অভিযোগ। কত বলব! পোশাকের গরমে তারা তো এখন সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের ওপর মামলা-হামলাকে তাদের সরকারি দায়িত্ব বলে মনে করছে। কিছু দিন আগে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি বিশিষ্ট সাংবাদিক নাজমুল হুদার নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে গ্রেফতার করে, রিমান্ডে নিয়ে সাংবাদিককে টাইট দেওয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, পুলিশি বাহাদুরি দেখিয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্যান্ট চুরির মতো অবিশ্বাস্য ও খেলো অভিযোগ এনে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আক্রোশ মিটিয়েছেন। সম্প্রতি একজন টিভি চ্যানেলের ফটো সাংবাদিককে রাজপথে যে অমানবিকভাবে পুলিশ নির্যাতন করেছে, তার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশের পর সর্ব মহল থেকে ধিক্কার উঠায় দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে। আমরা এই তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে দায়িত্বশীল বাহিনীর যে অল্পসংখ্যক সদস্য অদায়িত্বশীল কাজে জড়িত হন তারা সাবধান এবং সতর্ক হবেন বলে আশা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেছেন, তাদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের আরও জনসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সংখ্যালঘু সাঁওতালদের ওপর নির্যাতনে পুলিশের কজন সদস্য জড়িত ছিলেন বলে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করার খবর গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আরও জোরালো হলো। আমরা মনে করি, অল্প সংখ্যক পুলিশ এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এর দায় পুরো বাহিনীর নয়। আমাদের প্রত্যাশা, সাংবাদিক নির্যাতন বা সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশের যে সদস্যরা অন্যায় আচরণ করেছে, তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে সব ধরনের নেতিবাচক প্রশ্নের মুখে পড়া থেকে রক্ষা করা হবে এবং কোনো কুচক্রী মহল বাড়াবাড়ি করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা দরকার।  আমরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বলতে চাই, পুলিশ বাহিনী আরও বেশি জনসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হলেই নাগরিক জীবন যেমন নিরাপদ হবে, তেমনি পুলিশকেও মানুষ বন্ধু ভাববে।

সর্বশেষ খবর