মহান আল্লাহ মানব জাতির জীবন-জীবিকা সচল রাখার জন্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য হালাল করেছেন। মানুষ যেন বৈধ উপায়ে উপার্জন, খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় বস্তুসামগ্রী সঞ্চয় করে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারে সে জন্য ইসলাম দান করেছে অসংখ্য বিধিবিধান। অপরদিকে ক্রয়-বিক্রয়ে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ এবং অর্থসম্পদের লেনদেনে কোনো ধরনের অন্যায়, ভেজাল ও প্রতারণা যেন না হয় সে জন্য শরিয়ত নিষিদ্ধ করেছে। সুদ, জালিয়াতি, ভেজাল মিশ্রণ, ওজনে কম করা, মিথ্যা, প্রতারণাসহ সব আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি। ইসলামী জীবন দর্শনের মূল বক্তব্যের একটি হচ্ছে হালাল উপার্জন করা ফরজ ইবাদতসমূহের পর এক ফরজ বিশেষ।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল উপার্জন ফরজ ইবাদতসমূহের পর একটি ফরজ কাজ। (বায়হাকি)
পবিত্র কোরআনে অর্থসম্পদ ও পণ্যসামগ্রী আদান-প্রদানের মূলনীতি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ। তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। কিন্তু তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ এবং একে অপরকে হত্যা কর না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা-২৯)ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে মানুষ শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপদে আর্থিক জীবন পরিচালনা করবে এটাই ইসলামে অর্থনীতির অন্যতম লক্ষ্য। যে কারণে মহান আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।
মহান আল্লাহ তো ব্যবসাকে হালাল আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা-২৭৫)
মজুদদারির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা নাগরিকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পোশাকপণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির করে অধিক মুনাফা অর্জনের পথ সুগম করে থাকে। এ জাতীয় অতিলোভী তৎপরতা বন্ধের জন্য ইসলাম জরুরি পণ্যের সংকট সৃষ্টিকারী মজুদদারি নিষিদ্ধ করেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মজুদদারির মাধ্যমে সংকট সৃষ্টি করে সে অপরাধী। ছোট-বড় সব ব্যবসার জালিয়াতি, প্রতারণা ও ওজনে কম বেশি করা একটি মারাত্মক প্রবণতা। ব্যবসায়ী ও দোকানদার ভাইদের একটি বড় অংশ এর সঙ্গে জড়িত। এর দ্বারা সমাজের প্রায় সব নাগরিক তথা ভোক্তারা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হন।
কোনো কোনো খাদ্যপণ্যে ওজন বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর বা বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যহানিকর। খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানো, কেমিক্যাল প্রয়োগ বা ক্ষতিকর রং বা পদার্থ মেশানোর ফলে মানুষের দেহে কঠিন রোগব্যাধি হয়। তাই এগুলো শুধু গর্হিতই নয়, শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম বলে গণ্য।
মহান আল্লাহ বলেছেন, দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যারা মেপে অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে তারা পুনর্জীবিত হবে মহাবিপদে। ইসলামী ব্যবসা-বাণিজ্যের বিধান সমাজে বাস্তবায়িত হলে মানুষ ও সমাজ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ হবে।