রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অবসাদগ্রস্ত বিএনপি ঘর ছেড়ে কি বেরোবে?

কাজী সিরাজ

অবসাদগ্রস্ত বিএনপি ঘর ছেড়ে কি বেরোবে?

রাজনীতির আলোচনায় এখনো নির্বাচন কমিশন। গঠনের আগে ছিল আলোচনা, এখন হচ্ছে সমালোচনা। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি কারও মেলেছে, কারও মেলেনি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় সরকরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩১টি রাজনৈতিক দল যুক্ত ছিল। নাগরিক সমাজসহ সবার প্রত্যাশা ছিল সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, অবিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হবে নতুন ইসি। প্রক্রিয়ার সূচনাটি ছিল চমৎকার। সংবিধান বহির্ভূত হলেও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে কেউ কোনো আপত্তি তোলেনি। বরং বিএনপিসহ ৩১টি রাজনৈতিক দলই তাতে অংশ নিয়েছিল উত্ফুল্লচিত্রে। আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি কোন কোন রাজনৈতিক দলকে ডাকবেন তাতে দেওয়া প্রস্তাবে বিএনপি একটি সূক্ষ্মচাল দিয়েছিল। বলা চলে একটি প্যাঁচ কষেছিল যাতে জামায়াতে ইসলামীও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পায়। তাদের অন্যতম প্রস্তাব ছিল স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যত সংসদ গঠিত হয়েছে তার যে কোনোটিতে প্রতিনিধিত্বকারী দলকে আলোচনায় ডাকতে হবে। শুধু নিবন্ধিত দল নিয়ে আলোচনায় বসলে জামায়াত বঙ্গভবনে যেতে পারে না, কারণ নির্বাচন কমিশনে তাদের দলীয় নিবন্ধন স্থগিত আছে। বিএনপির চালাকি ধরা পড়েছে সাধারণ একজন মানুষের কাছেও। রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাব আমলে নেননি এবং বিএনপিও তা নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি বা উচ্চবাচ্য করেনি। তাতে একটা বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেল যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়োজন হলে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোটগত সম্পর্কেও ইতি টানতে পারে দলটি। একটা বিষয় অবশ্য পরিষ্কার যে, জামায়াতের সঙ্গে ভোটের জোট বহাল রাখতে আইনগত বা নির্বাচনী আইনের বিধিগত কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তাদের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছে, নির্বাচন কমিশন দলীয় নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে। উচ্চ আদালতে এ সংক্রান্ত আপিলে তারা জিতে গেলে অন্য প্রতীকে তারা দলগতভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। হেরে গেলেও তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। তাদের সঙ্গে ভোটের জোট বহাল রাখা না রাখার বিষয়টি আইনগত নয়, তা সম্পূর্ণই রাজনৈতিক। বিএনপিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী যেসব নেতা, কর্মী সংগঠন সমর্থক আছে তাদের পক্ষ থেকে যদি প্রবল চাপ থাকে এবং নতুন প্রজন্মের নির্দল ভোটারদের আকৃষ্ট করার ও সমর্থন আদায়ের প্রয়োজনে বিএনপি তাদের জোটমিত্র জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। অবশ্য জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে শাসকদলের কোনো গোপন রাজনৈতিক খেলার বিষয়ও তাদের মাথায় থাকতে পারে। সরকারি দল এবং তাদের ভিতর-বাইরের মিত্রদের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার একটা জোরালো আওয়াজ গত কয়েক বছর ধরেই উচ্চকিত হচ্ছিল। বিশেষ করে অন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করে বক্তব্যের উল্লেখ থাকার পর এ দাবি আরও শক্তিশালী হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা বলা হয়। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তো পালার্মেন্টের কোনো অধিবেশনে এ সংক্রান্ত বিল আসবে তাও প্রকাশ্য বলেছেন। মিডিয়ায় তা ধারণ করা আছে। আবার আইনমন্ত্রীই সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে কোনো আইন পাস করবে না। তাও মিডিয়ায় আছে। তাহলে দাঁড়ালটা কী? জামায়াতে ইসলামী দেশের আইনসিদ্ধ একটি বৈধ রাজনৈতিক দল থেকে গেল। তাদের সামনে এখন তিনটি সংকট— ১. নিবন্ধন নেই, ২. পরিচিত প্রতীকটি নেই এবং ৩. সংবিধানের ক্রান্তিকাল-মহাদুর্যোগে তারা। তৃতীয় সংকটটিই তাদের সবচেয়ে বড় সংকট। তাদের সামনে প্রায়োরিটি হচ্ছে তৃতীয় সংকট থেকে উত্তরণ। এ ক্ষেত্রে তারা কৌশলী হতে পারে। একটা সময় তারা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে সারা দেশে শক্তি আহরণের জন্য বিএনপিকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করে। সাধারণ্যে ধারণা এক আবদুল মতিন চৌধুরী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তাদের বহু, বহুদূর এগিয়ে দিয়ে গেছেন। ছাত্রদলের অনেক প্রাক্তন নেতা অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের দুর্বার গতিবেগ থামিয়ে শিবিরের ‘ইঞ্জিনে’ তিনি গতি সঞ্চার করেছেন, বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদল-শিবির বিরোধে তিনি শিবিরের পক্ষ নিয়েছেন, ওনার ‘আমার পুলিশ’, ‘ছাত্রদলের পথ রোধ’ করে শিবিরের ‘পথের কাঁটা’ সাফ করেছে। জামায়াতের অপ্রতিরোধ্য শক্তি শিবিরের অভাবিতপূর্ব বিকাশ বিএনপি শাসনামলেই—এমন ধারণা সাধারণের মধ্যেও আছে। জামায়াতে ইসলামীও শক্তি আহরণের জন্য বিএনপির ‘ছাতা’ পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করেছে। সেটা তাদের বিচক্ষণতা, যোগ্যতা। আওয়ামী লীগের আট বছরের শাসনামলে তাদের চলার গতি মন্থর হয়, প্রতিরোধের মুখে পড়ে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর এখন তাদের বড় দুর্দিন। প্রকাশ্য কার্যকলাপ বন্ধ। সারা দেশে সব অফিসে তালা। অনেক নেতা-কর্মী আইনি লড়াই করে জেল থেকে বেরিয়ে এলেও এখনো অনেকে কারারুদ্ধ। সংগঠনের কাজ চলে গোপনে। এমতাবস্থায় বিএনপি তাদের কোনো সাহায্য করতে পারছে না। বিএনপি নিজেই প্রতিবন্ধকতার মুখে। জেল-জুলুম, মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা নিগ্রহের শিকার। তারা নিজেরাই বিপদগ্রস্ত। এ পরিস্থিতিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত যদি নতুন মিত্রের সন্ধান করে তো করতেই পারে। সুযোগ পেলে তারা সরকার ও সরকারি দলের সঙ্গেই একটা ‘রফা-দফায়’ আসার চেষ্টা করতে পারে। বিস্ময়ের কিছু থাকবে না যদি সরকার ও সরকারি দলও কৌশলে ‘ভোটের সুবিধা’ কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে। তা না হলে মাত্র বছরখানেক আগেও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে যে জোর আওয়াজ আওয়ামী লীগ তুলেছিল, তা এখন থেমে গেল কেন? প্রধানমন্ত্রীও সব আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কারও কাছে সমগ্র বিষয়টা রহস্যময় মনে হতেই পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিষয়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। জামায়াতে ইসলামী যতই বিপর্যয়ের মধ্যে থাকুক না কেন তাদের একটি নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক আছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) শাখাওয়াত হোসেনের মতে তা ২%। সম্প্রতি এটিএন নিউজের এক টকশোতে তিনি পরিসংখ্যানটি দিয়েছিলেন। সে হিসাবে এর পরিমাণ ২০ লাখ। এর সঙ্গে সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীর ভোট মিলিয়ে এ সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা। সরকারি দল যতই লম্বা লম্বা কথা বলুক না কেন, ফেয়ার ভোটে তারা ‘গণেশ উল্টে’ যাওয়ার আশঙ্কায় যে নেই তা নয়। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনসহ যে বিশাল কর্মপরিকল্পনা তাদের আছে সেসব বাস্তবায়নের জন্য আবারও সরকার গঠন করা তাদের লক্ষ্য হবে তাতে সন্দেহ নেই। ক্ষমতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে জামায়াতের ভোট নিয়ে কাড়াকাড়ির একটা গোপন-আধাগোপন কোনো খেলায় শাসক দল জড়িয়ে পড়তেও পারে। তেমন সুযোগ জামায়াতও হাতছাড়া করতে চাইবে না নিশ্চয়ই। এমন একটি খেলার বিষয় বিএনপি যে ভাববে না তা নয়। বেশ

কিছুদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত ‘ছাড়া-ছাড়া’ ভাব এবং বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে লীগ-জামায়াত গোপন সমঝোতার যেসব কাহিনী শোনা গেছে তা থেকে বিএনপি জামায়াতের ওপর আর তেমন আস্থাশীল বলে মনে হচ্ছে না। ভোটের জোটকে স্থায়ী জোটে পরিণত করে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে একঘরে হয়েছে এবং দলে ও দলের বাইরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে অনেকটাই হারিয়েছে। অথচ বিএনপির লাইফব্লাডই ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি। যে ছয়টি দল নিয়ে বিএনপি গঠিত হয়েছিল সেগুলো ছিল ১. জাগদল, ২ ন্যাপ, ৩. ইউপিপি, ৪. তফশিলী ফেডারেশন (রশরাজ মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন), ৫. লেবার পার্টি ও ৬. শাহ আজিজের মুসলিম লীগের খণ্ডাংশ। মুসলিম লীগের খণ্ডাংশটি ছাড়া বাকি চার দল মুক্তিযুদ্ধে শরিক ছিল, জাগদলেও মুক্তিযোদ্ধা, ন্যাপ ও প্রগতিশীলদের আধিক্য ছিল। জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘকালীন ঐক্য বিএনপির ইমেজ ডেস্ট্রয় করেছে। এ উপলব্ধি এখন বিএনপির অনেকের মধ্যেও এসেছে বলে মনে হয়। আগামী নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির জন্য ‘এসেট’ কিনা সে ভাবনাও সে দলে কাজ করছে বলে নানা মহল থেকে শোনা যায়। তাছাড়া ওপরে ওপরে বিএনপির সঙ্গে ‘ভাব’ রেখে তলে তলে জামায়াত কী করে সে ব্যাপারে সন্দেহও আছে বলে শোনা যায়। নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে সার্চ কমিটির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সংলাপে জামায়াতের ব্যাপারে যে ‘প্যাঁচটি’ করা হয়েছিল তা প্রস্তাব ড্রাফটিংয়ের সঙ্গে জড়িত জামায়াতপ্রিয় বা জামায়াতের পোষা কারও সূক্ষ্ম কারসাজি ছিল বলে অনেক পর্যবেক্ষকও মনে করেন। তা না হলে জামায়াত একটি বৈধ রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গভবনের আলোচনায় তাদের না ডাকায় বিএনপি কোনো আপত্তি করেনি কেন এবং কেন গোঁ ধরেনি যে, তারাও যাবে না। পরম উৎসাহ নিয়েই তারা যোগ দিয়েছিলেন আলোচনায়। সার্চ কমিটি গঠনের পর দলের কোনো কোনো ‘পদধারী’ আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিলেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্য ছিল সহনীয়। সার্চ কমিটির কাছেই তারা দলীয় পছন্দের ব্যক্তিদের নাম জমা দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তাদের প্রতিক্রিয়া একটু কঠোরই হয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন বিএনপির সমালোচনার তীর তার দিকেই ছোড়া হয়েছে। তারা বলছেন, তিনি জনতার মঞ্চের লোক ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নবনিযুক্ত সিইসি। তিনি বলেছেন, জনতার মঞ্চের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, তিনি তখন কুমিল্লার ডিসি। জনতার মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর কুমিল্লার ডিসি অফিস থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি সরিয়ে দেওয়ার একটা অভিযোগও বাজারে ছেড়েছে বিএনপি। ব্যাখ্যা বা জবাব পাওয়া যায়নি। তবে নবনিযুক্ত সিইসি স্বীকার করেছেন যে, তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে তিনি কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার তদারকিতে ছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবিসহ খবর প্রচার হয়েছে। অথচ বিএনপি সার্চ কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নাম দিয়েছিল বলে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে মাত্র কদিন আগেই রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা হৈচৈ তোলার চেষ্টা করেছিল ক্ষমতাসীন দল কে এম হাসানের অতীত বিএনপি সংশ্লিষ্টতার কারণে। নবনিযুক্ত সিইসির ব্যাপারে বিএনপির সমালোচনা, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা নয় পুরোপুরি তা তো স্বীকারই করেছেন নতুন নিযুক্ত সিইসি। তার বক্তব্য মিডিয়ায়ও এসেছে। নবনিযুক্ত সিইসি কে এম নুরুল হুদা বিএনপির ওপর একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি। তারা সরকারে থাকাকালে যুগ্মসচিব পদে চাকরিরত অবস্থায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি ভূতাপেক্ষ সচিব পদ প্রাপ্ত হন। বিএনপির মধ্যে এ আতঙ্ক কাজ করতে পারে যে, তার কাছ থেকে বিএনপি সুবিবেচনা পাবে না। সে জন্য আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক সমালোচনার তারা সূচনা করেছে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রাজনৈতিক অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে, তার সর্বজনগ্রাহ্যতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ উসকে দিয়ে। এটি সম্পূর্ণই একটি রাজনৈতিক খেলা বলেই মনে হয়। তারা শুরুতেই নতুন সিইসিকে একটা চাপের মধ্যে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, তারা কে এম নুরুল হুদার রাজনৈতিক অতীত বা সেই অতীত বিবেচনায় সরকার সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ ছড়িয়েছে, কিন্তু তাকে নাকচ করে দেয়নি, প্রত্যাখ্যান করেনি। সিইসি এবং অন্য কমিশনাররা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে শপথ নেওয়ার পর তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর। তাদের পদচ্যুত করা বা কমিশন ভেঙে দেওয়ারও পথ নেই। একমাত্র মৃত্যুজনিত বা পদত্যাগজনিত কারণ ছাড়া সিইসি বা কোনো ইসিকে পদ থেকে সরানোর কোনো ক্ষমতা কারও নেই। বিএনপিও তা অবশ্যই জানে। তাই তারা খুব সতর্ক প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেছে বলব। তারা ব্যক্তি সিইসির অতীত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার সমালোচনা করলেও গোটা নির্বাচন কমিশন নিয়ে সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছে। তারা শুধু এটুকুই বলেছে যে, তারা হতাশ এ কমিশনে। আমার মনে হয়, নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির এর চেয়ে ভালো প্রতিক্রিয়া আর কিছু হতে পারে না। বার্তাটি হচ্ছে, বিএনপি আগামী নির্বাচনের নতুন সড়ক থেকে সরে যাবে না। অতীত অভিজ্ঞতাতো তাদের আছে যে, নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করে, আন্দোলন-হরতাল করেও কিছু হয় না। এ কমিশনের অধীনেই তাদের নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপিকে খুব সতর্কতার সঙ্গে বিহেভ করতে হবে। ইতিমধ্যে বিএনপির এক শুভানুধ্যায়ী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নতুন নির্বাচন কমিশনকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির প্রতি। এখন আলোচনা হচ্ছে, নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন গণপ্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারবে? এ কমিশনের ওপর প্রত্যাশা একটু বেশি। গত নির্বাচন কমিশনের বড় বড় ব্যর্থতার পর নতুন কমিশন তেমন ব্যর্থ হোক, নতজানু হোক, নির্বাচনের নামে তামাশা হোক তা কেউ চায় না। আগামী নির্বাচন হবে সারা গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রখর নজরদারির মধ্যে। যার যার রাজনৈতিক অতীত দূরে রেখে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভূমিকা পালন না করলে শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, গোটা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। পরপর দুটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে বহির্বিশ্বে আমাদের প্রিয় দেশের মর্যাদার কী দশা হবে তা তো স্পষ্ট হয়ে আছে, প্রধানমন্ত্রীর ‘আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা আমি চাই না’ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। নির্বাচন কমিশনটি সরকারের পছন্দের হোক আর বিএনপির অপছন্দের হোক, আগামী নির্বাচনের চিত্র-চরিত্রই বলে দেবে কমিশন জনগণের পছন্দের না অপছন্দের। মনে রাখতে হবে, দেশ ও জনগণই সর্বাগ্রে। বিএনপিকেও মনে রাখতে হবে যে, জনগণ নির্বাচনের পক্ষে। কোনো ছুতা ধরে আবার নির্বাচন বর্জনের সর্বনাশা পথে পা দিলে সর্বনাশা শুধু বিএনপির হবে না, হবে দেশেরও। নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি হতাশ, তাই বলে কি স্বপ্ন দেখাও মানা? সাঈদ-কমিশন নিয়েও তো তারা হতাশ ছিল। তিনিও তো তাদেরই লোক ছিলেন। তাতে কী হয়েছে?

বিএনপিকে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তাদের আরেকজন শুভানুধ্যায়ী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও নতুন নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী অবসাদ কাটিয়ে বিএনপিকে ঘর থেকে বেরোতে বলেছেন। বিএনপি কি শুনবে তাদের কথা? কথামালার রাজনীতির দেয়াল ভেদ করে ঘর ছেড়ে বেরোবে? জনগণের ভিতর থেকে আরও শক্তি আহরণের চেষ্টা করবে?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর