মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনার মচ্ছব

বেপরোয়া মনোভাবে লাগাম পরাতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র দুই দিনে সারা দেশে অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে ফরিদপুর ও রবিবার নরসিংদীতে দুটি দুর্ঘটনায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশে প্রতিবছর সরকারি হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে প্রায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রাণহানির সংখ্যা ২১ হাজার। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের চেয়ে আহতদের সংখ্যা কয়েকগুণ হওয়ারই কথা। যাদের একাংশকে সারা জীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগতে হয়। এ জন্য প্রতিবছর গড়ে যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা জড়িত। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবে ঘটে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা। সোজা কথায় ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে চালকরাই জড়িত। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে বাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। অদক্ষ চালকদের দ্বারা যানবাহন চালানোর কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। দেশে যানবাহনের সংখ্যা যে ক্ষেত্রে ২৭ লাখের বেশি সে ক্ষেত্রে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ১৭ হাজার। বিআরটিএ সারা দেশে ১০২টি চালক প্রশিক্ষণ স্কুলের নিবন্ধন দিলেও সেগুলোর বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বদলে উেকাচের কদর বেশি হওয়ায় প্রশিক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর ১ লাখ ৯০ হাজার পেশাদার চালককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের তালিকা ধরে। পেশাদার চালকদের দক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলেও বলা যায় এভাবে লাইসেন্স দান কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়ক চলাচলের  ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও জরুরি। এ জন্য দরকার নাগরিক সচেতনতাও। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবে লাগাম পরাতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার যে অপঐতিহ্য রয়েছে তার অবসান ঘটাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর