মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাষাশহীদদের জন্য দোয়া করা আমাদের কর্তব্য

মুফতি মুহাম্মদ মানজুর হোসাইন

ভাষাশহীদদের জন্য দোয়া করা আমাদের কর্তব্য

আল্লাহর অন্যতম করুণা হলো তিনি মানুষকে বাকপদ্ধতি বা কথা বলা শিখিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম করুণাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। শিখিয়েছেন কথা ও ভাষা।’ (সূরা আর রহমাান : ১-৪)। মানবশিশু জন্মগ্রহণের পরই কথা বলতে পারে না। আল্লাহই ক্রমান্বয়ে তাকে কথা বলা শেখান। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক : ৫)। আল্লাহ আমাদের যে ভাষায় কথা শিখিয়েছেন তা হলো আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর সৃষ্টিনৈপুণ্যের অন্যতম নিদর্শন। (সূরা রুম : ২২)। মাতৃভাষার গুরুত্ব-তাত্পর্য প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি নিজের বাণী পৌঁছানোর জন্য যখনই কোনো রসুল পাঠিয়েছি, সে তার সম্প্রদায়ের ভাষায় বাণী পৌঁছিয়েছে। যাতে সে তাদের খুব ভালো করে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারে।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেন, ‘আল্লাহর অপার করুণা তিনি বান্দার সুবিধার জন্য নবীদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন।’ হজরত আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মহিমান্বিত আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে নিজ উম্মতের ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২০৯০১)। হজরত কাতাদা (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক নবী তার কওমের ভাষায় কথা বলতেন। আমাদের নবী (সা.) কথা বলতেন আরবি ভাষায়। তাঁর মাতৃভাষা ছিল আরবি।’ (তাফসিরে মাজহারি)।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। অন্য নবীদের মতো আমাদের নবী (সা.) ক্ষুদ্র পরিসরে কোনো দেশ বা জাতির কাছে প্রেরিত হননি। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে পাঠিয়েছি।’ (সূরা সাবা : ২৮)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাকে জগদ্বাসীর জন্য দয়া ও রহমতস্বরূপ রসুল করে পাঠিয়েছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭।) নির্দিষ্ট কওম বা জাতির কাছে প্রেরিত না হয়েও আল্লাহতায়ালা রসুল (সা.)-কে একটি ভাষা, মাতৃভাষার অধীন করেছেন। মুফতি শফি (রহ.) মা’আরেফুল কোরআনে লিখেন : ‘আল্লাহ চাইলে সর্বজনবোধগম্য একটি ভাষায় নবী ও কিতাব পাঠাতে পারতেন।’ কিন্তু আল্লাহতায়ালা তা না করে মাতৃভাষায় তার প্রিয় হাবিব (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন।’ এ থেকেই মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাত্পর্য কিছুটা অনুধাবন করা যায়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালে একদল ইমানদার ভাষার প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে। পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি ভাষার জন্য শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেনি। রফিক-সালাম-বরকতদের মতো পুণ্যবানদের জন্য আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

লেখক : খতিব, বাইতুদ দাউদ জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর