সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হে সংবিধান! তুমি মোদের করনি সম্মোহন

ড. নাসিমা জামান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল ২৮-২৯ মার্চ ২০১৪।  কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ২০১৩ সালে এ অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। সুবর্ণজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল একটা আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে। বিষয় ছিল ‘সংবিধান সংশোধন ও গণতান্ত্রিক ধারা : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’। প্রবন্ধটি পাঠ করেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল ফজল হক। এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক বদরুদ্দীন উমর। যিনি ওই বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সংশোধনীগুলোর ওপর বর্তমান লেখকসহ নির্ধারিত কয়েকজন বক্তা আলোচনা করেন। ওই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথিদের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোশেনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছিলেন। উল্লেখ্য, মেয়র মহোদয় এ বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। তিনি তার বক্তব্যে দুটো বিষয়ের ওপর বিশেষ করে আলোকপাত করেন। এক. একটি সর্বদলীয় সংবিধান কমিটির মাধ্যমে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন। দুই. শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ওপর গুরুত্ব দেওয়া।  আমার স্নেহভাজন ছাত্র মেয়র বুলবুলের আকুল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমার দুকথা লেখার এ সামান্য প্রয়াস।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, তিনি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কথাগুলো বলেছেন, যাকে বলা হয় Political Rhetoric. কিন্তু বর্তমান সংবিধানের অকার্যকারিতা চার দশক ধরে এদেশের আপামর জনগণ অনুধাবন করছেন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে দলীয় আনুগত্যের বা ত্যাগের গুরুত্ব যে বেশি তা আবারও প্রমাণ করেছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আজিজ। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি দলীয় আনুগত্য বেশি প্রাধান্য পায় তাহলে একথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এ দেশ এক মেরুদণ্ডহীন জাতিতে পরিণত হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অজ্ঞানতার অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলবে। যে দেশে জ্ঞান বা মেধার কোনো মূল্য নেই, সে দেশে গুণীজন জন্মায় না। মহাজ্ঞানী প্লেটো ‘আদর্শ রাষ্ট্র’ কল্পনা করেছিলেন এবং আড়াই হাজার বছর আগে তিনি উপলব্ধিও করেছিলেন যে, এ জাতীয় রাষ্ট্র মর্ত্যলোকে সম্ভব নয়। তিনি দার্শনিক রাজার কথা বলেছেন, যেখানে দল বা মতের কোনো ব্যাপার নেই। যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি। তার Scheme of Education এর মর্মার্থ হচ্ছে আত্মার দৃষ্টিতে আলোকপথে প্রবাহিত করা। আর যুক্তির মাধ্যমেই আত্মার কাছে উপনীত হওয়া যায়। শিক্ষা সনদ বিক্রি বা বিতরণ শিক্ষার মর্মার্থ হতে পারে না, তবে তথাকথিত শিক্ষা হার বৃদ্ধির এক অপকৌশল বলে বিবেচিত হতে পারে। অতএব শিক্ষা বলতে বিজ্ঞান ও দর্শনের মাধ্যমে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় তার সম্প্রসারণ করা। প্লেটোর শিক্ষা প্রণালীকে সামনে রেখে যদি কোনো রাষ্ট্র তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখে তাহলে সে রাষ্ট্র হতে পারে সত্যিকারের সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ। নৈতিকতা ও নীতিশাস্ত্র বাদে শিক্ষা অন্তঃসারশূন্য। অনেকটা অন্ধের জ্যোত্স্না অবলোকন। যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের বিবেকবোধকে জাগ্রত করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থায় ঘোর অমানিশা কাটবে না। তাই সুষ্ঠু সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

অত্র আলোচনার মূল বিষয় সংবিধান। সৌরজগৎ যেমন সৃষ্টিকর্তার বিধান মেনে চলে তেমনি প্রত্যেক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় নতুবা সে রাষ্ট্র অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। রাষ্ট্রের অধিকার আছে তার পরিচালনা পদ্ধতি বেছে নেওয়ার। কিন্তু এমনভাবে বেছে নিতে হবে যেন সেই রাষ্ট্রের সব নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়। সংবিধান রাষ্ট্রের মৌল আইন হলেও চিরস্থায়ী বা অপরিবর্তনীয় নয়। নাগরিকের পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি বিধানের জন্য সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন। এ জন্য সব লিখিত সংবিধানে তার সংশোধন পদ্ধতিও নির্দিষ্ট থাকে। কোনো দেশে এ সংশোধন পদ্ধতি নমনীয়, কোথাও অনমনীয়। কিন্তু উদ্দেশ্য অভিন্ন। জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে সংবিধান সংশোধন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোনো দল বা গোষ্ঠীর জন্য সংবিধান সংশোধন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় এবং জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরায়। সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি যদি বেশি নমনীয় হয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব তত বেশি হুমকির সম্মুখীন হয়। আমরা জানি যে, ২২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ২৭ বার সংশোধিত হয়েছে। শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্য ও সংহতি, জনকল্যাণ এবং সর্বোপরি গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য। অন্যদিকে, গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধিত হয়েছে ১৫ বার। এটি হতেই পারে শুধুমাত্র রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে।

বাংলাদেশ সংবিধানের (১৯৭২) ১৪২ অনুচ্ছেদে এর সংশোধন পদ্ধতি সংজ্ঞায়িত রয়েছে এবং বিধান করা হয় যে, জাতীয় সংসদ মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন বা রহিত করতে পারবে এবং অনুরূপভাবে গৃহীত কোনো বিল রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে তিনি তাতে সম্মতি দেবেন। ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার এক ঘোষণাপত্রের (Proclamation) মাধ্যমে বিধান করে যে, সংবিধানের প্রস্তাবনা অথবা অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮, ৮০ অথবা ৯০ক সংশোধনের জন্য গৃহীত কোনো বিল গণভোটে পেশ করতে হবে এবং তা প্রদত্ত ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা অনুমোদিত হলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়াই আইনে পরিণত হবে। এ বিধানটি ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর অংশ হিসেবে সংসদে অনুমোদিত হয়। কিন্তু ২০১১ সালে গৃহীত পঞ্চদশ সংশোধনীর দ্বারা গণভোটের বিধান বাতিল করে ১৯৭২ সালের পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তিত হয়। ফলে বর্তমানে জাতীয় সংসদ মোট সদস্য-সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন করতে পারে। তবে এ সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংশোধনের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক দেশের জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রচিন্তাবিদ Jean Jacques Rousseau-এর মতে, ‘Sovereignty resides in the people.’— অর্থাৎ জনগণই সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, ‘শাসকগণ সার্বভৌম জনসাধারণের ভৃত্য বা প্রতিনিধির অধিক কিছুই নন, তাহাদের নিকট যে ক্ষমতা বিশ্বাসপূর্বক অর্পণ করা হয় তাহারা শুধু সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। সার্বভৌম জনসমাজ এই ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ, পরিবর্তিত বা ফিরাইয়া লইতে পারে।’ সুতরাং জনগণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। জনকল্যাণমুখী সংবিধানই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। সংবিধান কোনো দলের ঘোষণাপত্র (Manifesto) নয়। কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য নয়। জনগণের ক্ষমতার বাস্তবায়নের অন্যতম বিধান হচ্ছে গণভোট, যা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গণভোট বিধান বাতিল করে গণতন্ত্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। কিন্তু গণভোটে জনগণ যদি বলতেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না তাহলে সংবিধান থেকে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা যেত এবং সরকারের ওপর জনগণের আস্থা বেড়ে যেত এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতো না। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত ছিল না। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোনো উল্লেখ নেই যে, গণভোট ব্যবস্থা বাতিল করা হোক। সুতরাং গণভোট বিধান বাতিলের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা সাংঘাতিকভাবে কর্তন করা হয়েছে। যার প্রমাণ হিসেবে বলা যায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, যেখানে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধসংখ্যক ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেই সংশোধনগুলো গৃহীত হয়েছে। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় এবং পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা রহিত করে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় যা গণতন্ত্র তথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। সংবিধানের গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সাধারণ রাজনৈতিক ঐকমত্য। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানের বেশির ভাগ সংশোধনীর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা। যে সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে না সে সংবিধানকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ভ্রমর যেমন নিরস পুষ্পকে পরিত্যাগ করে তেমন জনগণও এ সংবিধানের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত। সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠায় সুবিবেচনার প্রয়োজন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনো বিধান করে যদি ক্ষমতাকে স্থায়ী করা হয় তবে সে ক্ষমতা দুর্নীতির জন্ম দেয়। Lord Actin বলেছেন, ‘An absolute power corrupts the power absolutely’-অর্থাৎ নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ দুর্নীতির জন্ম দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নবম জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গৃহীত হয় এবং গণভোট বিধান ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে কোনো বিধান বা ব্যবস্থা বাতিল অথবা গৃহীত হলে জনঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অসন্তোষের প্রধান কারণ ছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন। সুতরাং এ ব্যবস্থা বাতিল করে সামরিক সরকার প্রায় সব দলের প্রশংসা অর্জন করে। এরপরও বিভিন্ন মহলে সংবিধান সম্পর্কে অসন্তোষ ছিল। চীনপন্থি বামগোষ্ঠীসমূহ বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে ‘খাঁটি সমাজতান্ত্রিক’ সংবিধানের দাবি জানায়। অন্যদিকে, ইসলামী দলগুলো ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ঘোর বিরোধী ছিল। তারা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি করে। মওলানা ভাসানীও ‘মুজিব সংবিধান’-এর পরিবর্তে ‘খাঁটি ইসলামী সংবিধান’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোও চাচ্ছিল সংবিধানের ইসলামীকরণ। জিয়া সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করে সংবিধানকে ইসলামী রূপ দেন। বামপন্থিদের তুষ্ট রাখার জন্য মূলনীতি হিসেবে ‘সমাজতন্ত্র’ বাতিল করেননি, কিন্তু ডানপন্থিদের আশ্বস্ত করার জন্য সমাজতন্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা দেন। তবে একদলীয় ব্যবস্থা বাতিল ছিল গণতন্ত্রের পথে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে হওয়া শ্রেয় কারণ বিচার বিভাগও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে বিরাজমান কোনো আসমানী সংস্থা নয়। রাজনৈতিক বিষয়গুলো আদালতের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি হওয়াটা যুক্তিযুক্ত এবং জনগণের দাবির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল, আইনের শাসনের অভাব এবং সর্বস্তরে ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়নের ফলে গণতান্ত্রিক সংকট চলছে। এদেশের রাজনীতিতে নৈতিক নেতৃত্বের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান সরকারকে Parliamentary Dictatorship বলা যেতে পারে। তাই Aristotle-এর কথায় বলতে হয় Law should govern.  প্রত্যেক নাগরিক আইনের অধীন। এমনকি তারাও যারা আইন প্রণয়ন করেন। গণতন্ত্রে সহিংসতা, ঐশ্বরিক ক্ষমতা বা পরিবারতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করা, সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, সুষ্ঠু রাজনৈতিক কৃষ্টি চর্চা করা এবং ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা। রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তন ছাড়া সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রকে তার স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যেতে না দিলে রাজনৈতিক বা সামরিক যে কোনো তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটে, এটি ইতিহাসের চিরায়ত নিয়ম। কিন্তু জনগণ চায় না ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটুক।  গণতন্ত্রকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়ার জন্য রাজনীতিবিদরা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। জনগণের সুপ্ত আশা একটি সর্বদলীয় সংবিধান কমিটির মাধ্যমে নতুন এক সংবিধান প্রণয়ন করে জাতিকে আশ্বস্ত করা— যা এখন সময়ের দাবি।

 

লেখক : প্রফেসর এবং সভাপতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সর্বশেষ খবর