সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আর কত সড়ক দুর্ঘটনা

বেপরোয়া মনোভাবে লাগাম পরাতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনায় গত ১০ দিনে সারা দেশে অন্তত ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ১১টি জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার গোপালগঞ্জে বাস চাপায় এক স্কুলছাত্র নিহত হলে ক্ষুব্ধ জনতা ঘাতক বাসে আগুন দিয়ে  সড়ক অবরোধ করে। দেশে প্রতিবছর সরকারি হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে বছরে প্রায় ৮ হাজার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ২১ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনায় নিহতদের চেয়ে আহতদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। যাদের একাংশকে সারা জীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগতে হয়। এ জন্য প্রতিবছর গড়ে যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি ঘটছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা দায়ী। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবে ঘটে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে বাসের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত ফাইল বন্ধ করে রাখাকেই সংশ্লিষ্টরা কর্তব্য বলে মনে করায় তা বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। দেশে যানবাহনের সংখ্যা যে ক্ষেত্রে ২৭ লাখের বেশি সে ক্ষেত্রে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ১৭ লাখ। সোজা কথায় লাইসেন্সহীন চালকের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। অদক্ষ চালকদের হাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণভার গেলে কী পরিণতি ঘটতে পারে একের পর এক দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ। বিআরটিএ সারা দেশে ১০২টি চালক প্রশিক্ষণ স্কুলের নিবন্ধন দিলেও সেগুলোর বেশির ভাগই এখন অস্তিত্বহীন। লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বদলে উেকাচের কদর বেশি হওয়ায় প্রশিক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়ক চলাচলের  ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও জরুরি। এ জন্য দরকার নাগরিক সচেতনতাও। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবে লাগাম পরাতে দুর্ঘটনাজনিত অপরাধের লঘু শাস্তির বিধানে পরিবর্তন এনে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর