বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ড. শহীদুল্লাহর প্রতিবাদ

ড. শহীদুল্লাহর প্রতিবাদ

পাকিস্তান জন্মের আগেই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। হিন্দি ভাষাকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার কংগ্রেসী সুপারিশের অনুকরণে তিনি এই মত প্রকাশ করেন। জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের বিদ্যালয়ে শিক্ষার বাহনরূপে প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষার পক্ষে যে অভিমত প্রকাশ করেছেন, আমি একজন শিক্ষাবিদ রূপে উহার তীব্র প্রতিবাদ জানাইতেছি। ইহা কেবল বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ও নীতিবিরোধীই নয়, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের নীতি-বিগর্হিতও বটে।’ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি লেখেন— ‘পাকিস্তান ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বিভিন্ন, যেমন— পশতু, বেলুচি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি এবং বাংলা; কিন্তু উর্দু পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলেই মাতৃভাষারূপে চালু নয়। যদি বিদেশি ভাষা বলিয়া ইংরেজি ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোনো যুক্তি নাই’। পাকিস্তান রাষ্ট্রের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করা সহজ হবে না এ কথা বুঝতে পেরে বাংলাবিদ্বেষীরা ধর্মকে বর্ম করে আরবিকে রাষ্ট্রভাষা করার জিগির তোলে। ড. শহীদুল্লাহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজের পক্ষে কৌশলে এর জবাব দেন। ‘মাতৃভাষার পরেই স্থান ধর্মভাষার... কিন্তু বর্তমানে আরবিকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি ধর্মীয় ভাষা ভিন্ন একমাত্র রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণের যথেষ্ট অন্তরায় আছে।’ এ বিতর্ক চলতে চলতে এক সময় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবির পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র জোরদার হয়ে ওঠে।  একটি বিশেষ মহল বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার উন্মেষ নস্যাতের লক্ষ্যে বাংলার প্রাণে আঘাত হানার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।

                                                আরিফুজ্জামান মোল্লা বাবলু

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর