বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

লক্কড়ঝক্কড় গণপরিবহন

এ নৈরাজ্যের অবসান হওয়া উচিত

ঢাকাকে এক সময় বলা হতো মসজিদের নগরী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যানজটের নগরী হিসেবেও আমাদের এই রাজধানীর পরিচিতি বেড়েছে। এ পরিচিতির পাশাপাশি দুর্নাম গড়ে উঠেছে লক্কড়ঝক্কড় পরিবহনের নগরী হিসেবেও। ঢাকা মহানগরীতে যে ধরনের লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাস চলাচল করে তা দুনিয়ার আর কোনো মেগা সিটিতে কল্পনা করাও কঠিন। রাজধানীর যানজটে মদদ জোগাচ্ছে এসব চলাচল অযোগ্য যানবাহন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কোনো কোনো রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন। বাসের বডির অংশ খুলে পড়েছে। কোনোটার সামনের বিরাট অংশই ভাঙা। পেছনের বাম্পার খুলে ঝুলে আছে। জানালা বলতে কিছু নেই। ভিতরে বসার সিটগুলো নড়বড়ে। জোড়াতালি দিতে দিতে সিটকভারের ওপর দুর্ভিক্ষের ছাপ পড়ে গেছে। কোনোটির রংচটা, কোনোটির ছাল ওঠা। কিছু বাসের বাইরের রং ঠিক থাকলেও ভিতরের অবস্থা করুণ। ছাদ দিয়ে পানি পড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ত্রুটিযুক্ত গণপরিবহনে সয়লাব রাজধানী। হর্ন, ওয়াইপার ও ফিটনেস ভালো না থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণপরিবহনে যাত্রীরা চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে ফিটনেসহীন লক্কড়ঝক্কড় পরিবহনগুলো। প্রতিদিনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে লক্কড়ঝক্কড় মার্কার শত শত বাস, মিনিবাস, লেগুনা চললেও দেখার কেউ নেই। উন্নত সেবা দেওয়ার নামে বিভিন্ন সময় রাজধানীতে নানা কোম্পানির ব্যানারে যেসব গাড়ি নামানো হয়েছে সেগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। বর্তমানে রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলছে। চলমান বেশির ভাগ বাসেরই ফিটনেস নেই। রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের সিংহভাগই যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। তাদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ভাঙাচোরা বাসসহ অন্যান্য যানবাহন। এসব গণপরিবহন রাজধানী যানজটের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণেও ভূমিকা রাখছে। সৃষ্টি করছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ফিটনেসহীন যানবাহন চলাচল আইনত নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে এসব দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের তাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকায়, আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলছে না। এর ফলে কর্তাব্যক্তিদের পকেট স্ফীত হলেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। এই নৈরাজ্যের অবসান হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর