শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গণতন্ত্রচর্চা, জোটের রাজনীতি ও দলসমূহের চ্যালেঞ্জ

গোলাম মোহাম্মদ কাদের

গণতন্ত্রচর্চা, জোটের রাজনীতি ও দলসমূহের চ্যালেঞ্জ

পৃথিবীব্যাপী মানুষ সাধারণভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। মধ্যপন্থা থেকে বাম দিকে বামপন্থি, যারা উদারপন্থি বা ইংরেজিতে ‘লিবারেল’ নামে পরিচিত। আবার মধ্যপন্থা থেকে ডান দিকে ডানপন্থি, রক্ষণশীল বা ইংরেজিতে ‘কনজারভেটিভ’ নামে অভিহিত।

মধ্যপন্থা থেকে যত বামে তত বেশি কট্টরপন্থি বাম, শেষ মাথায় চরমপন্থা। ইংরেজিতে এদের এক্সট্রিমিস্ট বা রেডিক্যাল বাম নামে অভিহিত করা হয়। মধ্যপন্থা থেকে যত বেশি ডান তত বেশি কট্টরপন্থি ডান। শেষ মাথায় এখানেও চরমপন্থা। একইভাবে ইংরেজিতে এদের এক্সট্রিমিস্ট বা রেডিক্যাল ডান নামে অভিহিত করা হয়। অনেক সময় চরমপন্থিরা সন্ত্রাসকে লক্ষ্য অর্জনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। হিংসাত্মক চরমপন্থা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়।

বহুদলীয় গণতন্ত্রচর্চার মূল উদ্দেশ্য হলো ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ সমমনাদের নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন করবে ও সেই দলগুলোর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে।

প্রজাতন্ত্র অর্থ হলো এমন দেশ; যে দেশে সব ধরনের মানুষের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিকানায় সমান অধিকার থাকবে। ফলে প্রজাতন্ত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও তার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় সব মতের মানুষের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।

গণতন্ত্রচর্চার প্রাথমিক প্রক্রিয়া প্রতিনিধি নির্বাচন। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে আর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যাশা ও ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে। এর নামই গণতন্ত্র।

সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনের অনেক পদ্ধতি আছে। আবার যেসব প্রতিনিধির দ্বারা জনগণের ইচ্ছা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা নিশ্চিত হবে সেসব বিষয়েও বেশ কয়েক ধরনের মডেল শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান।

বহু প্রার্থীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন লাভ করা ব্যক্তি প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, এ পদ্ধতি আদি ও সহজ। কিন্তু দেখা যায় প্রায় কাছাকাছি সমর্থন লাভ করেও ন্যূনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেউ নির্বাচিত হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কিছু দলের প্রার্থীরা অল্প ব্যবধানের কারণে নির্বাচনে পরাজিত হয় ও তার সমর্থকদের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিনির্ধারণে অপেক্ষাকৃত কম সমর্থনপুষ্ট দলগুলোর সম্পৃক্ততা কমতে থাকে। দল হিসেবে তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব সংকুচিত হতে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় একপর্যায়ে এ ধরনের অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের দলগুলো স্বকীয়তা নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারে না। তারা অন্যান্য দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। কোনো পক্ষ সে পথে গেলে অন্য দলগুলোর জন্য এককভাবে নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একই কারণে তারাও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জোট পরস্পরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে উৎসাহিত হয়। কাছাকাছি চিন্তা ধারণ করা জোটসমূহ এক হয়ে ন্যূনতম সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের জন্য বৃহত্তর জোট/মহাজোট ইত্যাদি গঠন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে।

একপর্যায়ে দুই ধারার দুটি নির্বাচনী মোর্চার মধ্যেই মূলত প্রতিযোগিতা সীমিত হতে দেখা যায়। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির দলগুলো একই মোর্চার প্রধান বা সবচেয়ে শক্তিশালী দলের মধ্যে বিলীন হয় এটাও বাস্তবে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত মূলত প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের বা শক্তির মধ্যে ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা এটাই রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে, বৃহত্তর আঙ্গিকে আদর্শিকভাবে দল দুটি সাধারণত উদারপন্থি ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।

ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ প্রভৃতি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জাতীয় পর্যায়ে এসব দেশের প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতি একই ধারার, অর্থাৎ বহু প্রার্থীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একজন নির্বাচিত হন। ভারতে ফেডারেল পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। রাজ্যগুলোয় এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রাধান্য আছে। কার্যকর কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক দলকে সেখানে সক্রিয় দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদিও ফেডারেল সরকার তথাপি প্রধানত দুটি দলের বাইরে রাজনীতির মাঠে তেমন কাউকে দেখা যায় না। যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ছোট ছোট দল থাকলেও প্রাধান্য দুটি বৃহৎ দলের। ভারতে জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ‘কংগ্রেস’ উদারপন্থিদের দল, ‘বিজেপি’ রক্ষণশীল। যুক্তরাজ্যে ‘লেবার পার্টি’ উদারপন্থি, ‘কনজারভেটিভ পার্টি’ রক্ষণশীল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডেমোক্রেট’ উদারপন্থি, ‘রিপাবলিকান’ রক্ষণশীল।

বাংলাদেশের রাজনীতিও বিভিন্ন প্রেক্ষাপট পেরিয়ে এখন প্রধান দুটি রাজনৈতিক জোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট অনেক দল এখন জোটের নেতৃত্বদানকারী দলের নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করছে। অর্থাৎ সেসব দলের নেতা-সমর্থকরা স্বকীয় অস্তিত্ব হারানো এবং সেই দলের মধ্যে বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।

বাংলাদেশে রাজনীতির এই বিভাজনকে প্রধান দুটি জোট তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এক জোট প্রধানত অন্য জোটভুক্ত দলের কিছু নেতা/দলের অতীত বা বর্তমান কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভাজনকে চিহ্নিত করেছে। অন্য জোট তাদের আদর্শকে বিবেচনায় এনেছে। বিভাজনগুলো এ ধরনের। যেমন স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ও বিপক্ষে, সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী শক্তি ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বাইরে ইত্যাদি। সমর্থক জনগোষ্ঠীর চরিত্র বিবেচনায় ‘মধ্যমপন্থা থেকে সব বাম রাজনীতি’ ও ‘মধ্যমপন্থা থেকে সব ডান রাজনীতি’, এ বিভাজনটি সব দিক থেকে বাস্তবসম্মত বলা যায়। এক কথায় ‘কিছু মধ্যম ও সব উদারপন্থির’ সমাহার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে। কিছু মধ্যম ও সব রক্ষণশীলের রাজনৈতিক মঞ্চ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট।

স্বাভাবিকভাবে যা চোখে পড়ে তা হলো বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মধ্যপন্থি মানসিকতার। এরা ধর্মভীরু কিন্তু সাম্প্রদায়িক নয়, কিছুটা উদার প্রকৃতির। ধর্মীয় আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠানসমূহ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করে। কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামিকে তেমন একটা প্রশ্রয় দেয় না। সে কারণে জাতীয় পর্যায়ে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সমর্থনপুষ্ট দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মূলত মধ্যমপন্থির রাজনৈতিক মঞ্চ। নির্বাচনের কারণে ক্রমান্বয়ে তারা বাম ও ডানপন্থিদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বাম ও ডানঘেঁষা মধ্যমপন্থি দলে পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিক নির্বাচনগুলোর ফলাফলে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, বাংলাদেশে রক্ষণশীল মানুষের সংখ্যা উদারপন্থিদের চেয়ে বেশি। তবে উদারপন্থিদের প্রায় সবারই রাজনৈতিক মঞ্চ একটি তা হলো আওয়ামী লীগ। অল্প কিছুসংখ্যক সমর্থক বিভিন্ন বামপন্থি দলের মধ্যে বিদ্যমান। সে ক্ষেত্রে রক্ষণশীলদের রাজনৈতিক মঞ্চ যদিও প্রধানত এখনো বিএনপি (কোনো সময় জাতীয় পার্টি ছিল), তথাপি আরও কিছু জোটভুক্ত দলের মোট সমর্থক উল্লেখযোগ্য। যেমন : জাতীয় পার্টি, ইসলামী দলসমূহ ইত্যাদি।

 

 

জাতীয় পার্টি সত্যিকার অর্থে মধ্যমপন্থি দল। সে কারণে উদারপন্থিদের কাতারে চলে আসা জাতীয় পার্টির জন্য কোনো আদর্শগত সংঘাত সৃষ্টি করে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিজয় প্রায় সব ক্ষেত্রেই জাতীয় পার্টির সমর্থনে সম্ভব হয়েছে। জাতীয় পার্টি কোনো পক্ষে না গেলে বা রক্ষণশীলদের সঙ্গে গেলে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনে জয়লাভ কঠিন হতে পারে।

প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতির ফলে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে জাতীয় পার্টি বা অন্য যে কোনো দল প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারার বাইরে থেকে নির্বাচন করলে অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। একইভাবে বলা যায়, জোটের নেতৃত্বদানকারী দুটি প্রধান দল দুই ধারার মানুষের কাছে তাদের রাজনৈতিক প্লাটফরম হিসেবে টিকে থাকবে। অন্য উপধারার দলগুলো জোটে থাকলেও ক্রমান্বয়ে জোটের শীর্ষ দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। সে কারণেও জাতীয় পার্টিসহ এ ধরনের প্রায় সব রাজনৈতিক দল জোটে থাকলেও নিজস্ব রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়ে ভবিষ্যতে তাদের জোটের নেতৃত্ব দেওয়া দলের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ কারণে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি বহুদলীয় গণতন্ত্রের সহায়ক নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলত এ কারণেই নির্বাচনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রবর্তন করা হয়েছে ও হচ্ছে। আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন পদ্ধতি বর্ণিত নির্বাচনব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ বহুলাংশে কমিয়ে আনে। সে কারণে বিভিন্ন ধরনের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া উদ্ভব হয়েছে ও সেগুলো ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও বহুদলীয় গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার সময় এসেছে।

আগেই বলা হয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় পার্টিসহ জোটভুক্ত ডান ও বামপন্থি ছোট ছোট দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা ক্রমান্বয়ে জোট নেতার ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন। জাতীয় পার্টি আদর্শগতভাবে মধ্যমপন্থি হওয়ায় এর সমর্থকরা বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে কোনো দিকেই যেতে পারেন। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের শাসনকার্যের মূল্যায়ন ও বিএনপির রাজনৈতিক ভূমিকা এ বিষয়গুলো বিকল্প বেছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়।

ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, যে কোনো দলের নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে জোটের নেতৃত্ব দেওয়া দল হতে হবে। আওয়ামী লীগকে টপকে উদারপন্থিদের নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থানে আসার সুযোগ বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। তবে বিভিন্ন ধরনের চাপ ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কাঠামো এ মুহূর্তে যথেষ্ট দুর্বল। সে কারণে ডানপন্থি ও রক্ষণশীল গোষ্ঠী যথাযথ নেতৃত্বের অভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রায় অকার্যকর।

রক্ষণশীল ধারার রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসী জনসমষ্টি এখন এ কারণে বিকল্প নেতৃত্বের প্রত্যাশায়। অতীতে বেশ কিছুদিন এ ধারার জনগণের নেতৃত্ব দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আদর্শগতভাবে মধ্যমপন্থি হওয়ায় রক্ষণশীলদের মধ্যেও জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা আছে। সাংগঠনিক অবস্থানেও জাতীয় পার্টি বর্তমানে রক্ষণশীল দলগুলোর অন্য যে কোনো দলের তুলনায় ভালো অবস্থানে। তবে সমস্যা হলো রক্ষণশীল মানুষের রাজনৈতিক মঞ্চ হওয়ার জন্য উদারপন্থি ধারার থেকে যে ভিন্নতা বা দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে তা দৃশ্যমান নয়। বরং বর্তমানে কার্যত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে বা অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উদারপন্থি ধারার রাজনীতির অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি বিবেচিত হচ্ছে। সে অবস্থায় প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া অবাস্তব। তবে জাতীয় পার্টি যদি যথাযথ রাজনীতি নিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে সে ক্ষেত্রে রক্ষণশীল জোটের নেতৃত্বে আসা সম্ভব হতেও পারে।

বর্ণিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে নিম্নরূপ : ক. ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য সামনের নির্বাচনসমূহে ইতিবাচক ফলাফল ধরে রাখা। সে ক্ষেত্রে তাদের সমর্থক সংখ্যা বৃদ্ধি জরুরি। মধ্যমপন্থি মানুষ ও কিছু ডানঘেঁষা মধ্যমপন্থির মধ্যে নতুন সমর্থক সৃষ্টি করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন সুশাসনের মাধ্যমে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য নিরসনসহ সামাজিক ন্যায়বিচার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও দুর্নীতি কমিয়ে আনার দৃশ্যমান ব্যবস্থা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সহায়ক হতে পারে, তবে সমর্থক সৃষ্টিতে মূল অবদান রাখবে মনে হয় না।

খ. বিএনপির জন্য, রক্ষণশীল ধারার রাজনীতির নেতৃত্ব ধরে রাখা। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ঐক্য বজায় রেখে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে গণমুখী রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।

গ. জাতীয় পার্টির জন্য স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। ক্ষমতার অংশীদারিত্ব ও সেই ধারার রাজনীতি থেকে সরে এসে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে জাতীয় পার্টিকে বিএনপির বিকল্প হিসেবে রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে আসতে হবে।

ঘ. অন্য ডান ও বামপন্থি দলসমূহের স্বকীয় আদর্শ ও লক্ষ্য বজায় রাখা। প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন করে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন চালু করা ছাড়া এটা সম্ভবপর হবে বলে মনে হয় না।

উপরোক্ত চ্যালেঞ্জসমূহ বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খুব সহজসাধ্য নয়। তবে ব্যর্থতার ফল সব কটি দলের জন্য ঝুঁকির জন্ম দেবে। ক্ষমতাসীন দলের জন্য নির্বাচনে ব্যর্থতা, ফলস্বরূপ বিপত্সংকুল অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। বিএনপি জোটের নেতৃত্ব হারাতে পারে, খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা আছে। জাতীয় পার্টি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে অস্তিত্ব হারাতে পারে। অন্য ডানপন্থি বা বামপন্থি দলসমূহ নিজস্ব আদর্শ ও লক্ষ্য হারিয়ে অন্য দলে বিলীন হতে পারে। উল্লেখ্য, চ্যালেঞ্জসমূহ বিশ্লেষণে ধরে নেওয়া হয়েছে যে ভবিষ্যতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

     লেখক : সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ খবর