সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন

উঠে যাক ডাকসু নির্বাচনের ‘নিষেধাজ্ঞা’

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী তথা নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ডাকসু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন ছাত্র নেতৃত্বের বিকাশে অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া বক্তব্য তাৎপর্যের দাবিদার। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নয়, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ডাকসুসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিষয়টি কালো চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। এক সময় মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তার আগে সামরিক শাসকদের আমলেও ডাকসুসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের নজির রয়েছে। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ সামরিকতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নতুন সোপানে পা রাখলেও অদৃশ্য কারণে রুদ্ধ হয়ে যায় ছাত্রসংসদ নির্বাচন। যে ছাত্রসমাজ নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে তাদের গণতন্ত্র চর্চা ও নেতৃত্ব নির্বাচিত করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় গণতান্ত্রিক শাসনামলেই। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্র চর্চায় প্রতিকূলতার আবহ সৃষ্টি হচ্ছে। জাতীয় ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধ নেতৃত্বের বদলে আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে উড়ে এসে জুড়ে বসার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানার্জনের মূল ধারণাও উপেক্ষিত হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। জ্ঞানার্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সহযোগিতায় পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও তা চলছে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানে শূন্যতা বিরাজ করছে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র নেতাদের মধ্যে দায়বোধের ব্যত্যয় ঘটছে। ছাত্র সংগঠনগুলোতে ছাত্রত্ব চলে যাওয়া নেতারাও দখলদারিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। পেশিশক্তির দাপটও অনুভূত হচ্ছে ছাত্ররাজনীতিতে। ছাত্রসমাজের গণতন্ত্র চর্চার সর্বোত্কৃষ্ট মাধ্যম ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিস্তার হচ্ছে মাদকের থাবা। এ সর্বনাশ থেকে রক্ষা পেতে ডাকসুসহ দেশের সব ছাত্রসংসদের নির্বাচনে যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা উঠিয়ে নেওয়া হবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই। ডাকসু নির্বাচনের তাগিদ দেওয়ায় রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর