বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানুষের মনের কথাই বলবে বাংলাদেশ প্রতিদিন

নঈম নিজাম

মানুষের মনের কথাই বলবে বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রিয় পাঠক,

অভিনন্দন, দেখতে দেখতে সাতটি বছর পার হয়ে গেল। আজ অষ্টম বর্ষে পা রাখছে আপনাদের প্রিয় পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন। আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন আজ দেশের সর্বাধিক প্রচারিত কোটি মানুষের দৈনিক। দেশের ২ হাজার ৮০০ সংবাদপত্রের মধ্যে প্রচার সংখ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনই শীর্ষ দৈনিক। এই তথ্য আমাদের নয়।  মহান জাতীয় সংসদে টানা গত পাঁচ বছর এই তথ্য তুলে ধরেছেন মাননীয় তথ্যমন্ত্রী। প্রচার সংখ্যার এই বিশাল সাফল্য সম্ভব হয়েছে শুধু পাঠকের ভালোবাসার অব্যাহত বন্ধনের কারণে। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এখনো নিরপেক্ষ অবস্থানে এবং অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে একটি কাগজকে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক হিসেবে ধরে রাখা যায়। বাংলাদেশ প্রতিদিন তারই প্রমাণ। অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা শুরু করেছিলাম। সেই চ্যালেঞ্জ আমরা জয় করেছি। প্রতিদিনই পাঠকদের কাছে বাড়ছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা।

প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় প্রিন্ট মিডিয়ার চ্যালেঞ্জ যুগ চলছে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, প্রিন্ট মিডিয়া টিকে থাকবে তো? কত দিন পর বিলুপ্ত হবে ছাপার অক্ষর? প্রশ্নটা অমূলক নয়। সামাজিক গণমাধ্যমের অপরিসীম দাপট চলছে। ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রতিযোগিতা চলছে। ২০৫০ সালে কী হবে জানি না। আমি মনে করি, প্রিন্ট মিডিয়ার যুগ অবসানের সময় এখনো আসেনি। ছাপার অক্ষরের গুরুত্ব বিশ্ব্বজুড়ে রয়েছে, আরও অনেক দিন থাকবে। প্রিন্ট মিডিয়ার দাপট অন্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে বেশি দিন থাকবে। নির্লোভ অবস্থানে থেকে তুলে ধরতে হবে কঠিনতম সত্যকে। থাকতে হবে চার্চিলের কথায় মানুষের পাশে। চার্চিল বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতি আমরা যে সম্মান দেখাই তার মূলে রয়েছে ওই ছোট্ট মানুষটি, যে একটি ছোট্ট পেন্সিল হাতে ছোট্ট একটি বুথে ঢুকে এক টুকরো কাগজের ওপর ছোট্ট একটা ক্রস চিহ্ন আঁকে।’ আমি মনে করি, মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে সেই ছোট্ট মানুষটিকে সচেতন করা। তার দুঃখ, কষ্টের কথা তুলে ধরা। ছোট্ট বুথে ঢুকে যে মানুষকে ক্রস দিয়েছে, সেই মানুষ তার সঙ্গে কোনো প্রতারণা করলে তা তাকে জানিয়ে দেওয়া। এতে ভয়ের কিছু নেই। কবি নজরুল বলেছেন, ‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর, ধ্বংস নতুন সৃজন-বেদন।’ সংবাদপত্র ধ্বংস থেকে সৃষ্টি করে। সামাজিক, নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করে। মুক্ত চিন্তার বিবেককে তুলে আনে।

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের মিডিয়াও বিশ্ব বাস্তবতার বাইরে নয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি বাস্তবতায় থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে। ঘটনা থেকে পাঠককে বঞ্চিত না করতে। জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে। এই প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতার অঙ্গীকার নিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিদিনের।

 

 

আমাদের এই চলার পথ এত সহজতর নয়। আবার এ নিয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ক্লিনটন সীলির একটি কথা রয়েছে। ড. সীলি জীবনানন্দ দাশের ওপর পিএইচডি করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো কাজই কঠিন নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনও বিশ্বাস করে কোনো কাজ কঠিন নয়। চিন্তার স্বাধীনতাকে জাগিয়ে তোলাই জরুরি। আমরা নতুন পাঠক সৃষ্টিতে বিশ্বাসী। শুধু অগ্রসর নয়, সমাজের অনগ্রসর মানুষও তাদের পত্রিকা হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন সব মানুষের পত্রিকা। প্রয়াত বিচারপতি মোস্তফা কামাল একবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি অনুষ্ঠানে আসেন। অনুষ্ঠানটি ছিল, ভাষা সংগ্রামী আবদুল মতিন, সাংবাদিক এবিএম মূসার সম্মাননা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে এসে তিনি বললেন, সকালে মসজিদে নামাজ শেষে দেখি ইমাম সাহেব কাগজটি পড়ছেন। বাড়ি ফিরে দেখি নিচে ড্রাইভার, দারোয়ান পত্রিকাটি পড়ছে। ঘরে আমার স্ত্রীও এই কাগজ পড়েন। তাই বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভালোবাসায় ছুটে আসা। আমার আরেক ব্যবসায়ী বন্ধু বললেন, এই কাগজটি গাড়িতে, বাড়িতে, অফিসে সবখানে রাখতে হয়। ঘরে স্ত্রীর জন্য। গাড়িতে আমার জন্য। অফিসে সহকর্মীদের প্রিয় পত্রিকা।

বিশ্বজুড়ে মিডিয়ার কঠিনতম সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতি এই ভালোবাসায় আমরা সিক্ত। আমরা চেষ্টা করি প্রতিটি ঘটনা সবার আগে তুলে ধরতে। আমাদের পাঠকরাও সব খবর এক কাগজে চান। পাঠকদের কথা চিন্তা করেই সাজানো হয় বাংলাদেশ প্রতিদিন।

কিছু দিন আগে এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকার শীর্ষ একজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বললেন, আনন্দবাজার সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশ করছে। একটা সময় ছিল সর্বাধিক প্রচার সংখ্যার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার গর্ব নিয়ে চলত। পশ্চিমবঙ্গের এই কাগজটিও এখন টের পাচ্ছে সার্কুলেশন ধরে রাখার কাঠিন্য। এই কাঠিন্যকেই জয় করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। আমাদের বিশ্বাস মিডিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘটনার বাস্তবতায় থাকা। পাঠকের চিন্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। পত্রিকা হতে হবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেই তা সম্ভব। গণতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে শক্তিশালী গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় জাপানের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ইয়োমিউরি শিম্পজুনজির প্রতি পাঠকের আগ্রহের এখনো কমতি নেই। এই পত্রিকার সকাল, সন্ধ্যা দুটি সংস্করণ এখনো জনপ্রিয়। একইভাবে ভারতের হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক জাগরণের বিশাল প্রচার সংখ্যা আমাদের বিস্মিত করে। এর বিপরীতে বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় পত্রিকা তাদের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়েছে। অনেকে ছাপার পরিবর্তে চলে গেছে অনলাইনে। হাতে হাতে মোবাইল, ইন্টারনেটে বদলে যাচ্ছে মিডিয়া সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার গতি। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, দেশের সবচেয়ে সফল শিল্পোদ্যোক্তা আহমেদ আকবর সোবহান একটি কথা বলেন, ‘সাফল্য অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। এই কঠিনকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নামই সাফল্য।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন এই দিকনির্দেশনা সামনে রেখে এগিয়ে চলছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে এবং বাস্তবায়ন করতে পছন্দ করি। গণমাধ্যমের সামাজিক ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধের প্রশ্নে আমরা সচেতন। আমরা চোখ রেখে চলি পাঠকের চাহিদার দিকে। পাঠকের চিন্তাকে সামনে রাখার কারণেই আজ বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন। আমাদের শুধু প্রিন্ট ভার্সন নয়, আমাদের অনলাইনও সমানভাবে জনপ্রিয়। আমাদের সাফল্যের অপার রহস্য আমরা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে কুণ্ঠিত নই। আমরা অন্যায়ের সঙ্গে আপস করি না। আমরা মনে করি না শুধু নেতিবাচক খবরই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য। মানুষ এখন ভালো খবরও শুনতে চায়। পড়তে চায়। হলি আর্টিজানের পর পত্রিকার প্রথম পাতায় শুধুই ইতিবাচক খবর প্রকাশ করলাম। পাঠকরা আমাদের এই উদ্যোগে স্বাগত জানালেন। বিজ্ঞাপনদাতারাও অভিনন্দন জানালেন। বললেন, আপনার এই ধারা অব্যাহত রাখুন। আমরা দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থার খবর তুলে ধরি, তেমনি ভালো খবরগুলো পাঠকের সামনে নিয়ে আসি। আমরা বিশ্বাস করি, একটি পত্রিকার জবাবদিহিতা তার পাঠকের কাছে।

আমাদের পথ চলা সুন্দর আগামী ও সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য। কথা দিচ্ছি, অসত্যের বিরুদ্ধে আমাদের সাহসী উচ্চারণ অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাহসী চোখ খোলা থাকবে সব অন্যায়, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে। মিসৌরি স্কুল অব জার্নালিজমের প্রফেসর লরির বক্তব্য মনে পড়ছে। অনেক দিন আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন, সাহস করে, সত্য উচ্চারণ করতে পারলে সেই মিডিয়া টিকে থাকবে। আমরাও বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ অবস্থানে দাঁড়িয়ে সাহস করে সত্য উচ্চারণ করতে পারলেই একটি মিডিয়া টিকে থাকতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিদিন তার সাহসের অবস্থান থেকে সরবে না। কোনো হুমকি, ভীতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে থামাতে পারবে না। পাঠকদের ভালোবাসাই একটি কাগজের জন্য সবকিছু। এই ভালোবাসা অব্যাহত থাকলে কারও ঈর্ষার আগুনের আঁচ স্পর্শ করতে পারবে না আমাদের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গভীর কৃতজ্ঞতা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানসহ গ্রুপের সব পরিচালকের প্রতি। বসুন্ধরার সাহসী বিনিয়োগ, আহমেদ আকবর সোবহানের দেখানো পথ আমাদের সাফল্যকে এগিয়ে নিয়েছে। আগামীর পথ চলাকে ত্বরান্বিত করেছে।  বিশাল হৃদয়ের সফল শিল্পোদ্যোক্তা সায়েম সোবহান আমাদের পথ চলার নিত্যসঙ্গী। এই দিনে আরও কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, সংবাদপত্র বিক্রয় এজেন্ট, হকার্স ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও মাঠের প্রতিনিধিসহ সবার কাছে। আপনারা সব সময় আমাদের পাশে ছিলেন। আশা করছি আগামীতেও একইভাবে থাকবেন। কৃতজ্ঞতা বাংলাদেশ প্রতিদিন মগবাজার অফিস থেকে এই পর্যন্ত যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন, আছেন, সব সহকর্মীর প্রতি। সবার অবদানেই বাংলাদেশ প্রতিদিন আজকের অবস্থানে।

আমরা চেষ্টা করছি, মানুষের কথা তুলে ধরার জন্য। সমস্যা ও দুর্ভোগ তুলে ধরার জন্য। আমাদের লড়াই মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আমরা চাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও কল্যাণকর হোক। বাংলাদেশ প্রতিদিন আগামীতেও গণমানুষের দৈনিক হিসেবে কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কথা বলবে। এ দেশের ইতিবাচক রাজনীতি, ইতিবাচক অর্থনীতি, ইতিবাচক সমাজব্যবস্থা এবং পজিটিভ এক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে।  পাঠক আমরা আপনাদের কাছে ভালোবাসা চাই যাতে সুন্দর একটি পজিটিভ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আপনাদের সঙ্গে, আপনাদের চিন্তাকে লালন করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

     লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর