শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মাদকদ্রব্য ও তার কুফল

মুফতি এহসানুল হক জিলানী পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

অগণিত প্রশংসা সেই আল্লাহতায়ালার, যিনি আমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল ও অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যেভাবে আদেশ করেছেন, সেভাবে আপনার অসংখ্য প্রশংসা করছি। আর যে কাজে আপনি খুশি ও সন্তুষ্ট, সে কাজ করার তৌফিক কামনা করছি। আমরা সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই; তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুহাম্মদ (সা.) তারই বান্দা ও রসুল। হে আল্লাহ! আমাদের সরদার মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তোমার সৃষ্টির সেরা, সর্বশেষ নবী। তার পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীদের ওপর দরুদ, সালাম ও বরকত নাজিল করুন।

আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করুন, আর মুসলমান না হয়ে কোনো অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা আপনাদের সবাইকে সেসব বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনারা জানতেন না, আপনাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন, আর অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এবং পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েতের দিকে নিয়ে এসেছেন। তিনিই আমাদের ওপর শরাব ও সব ধরনের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম করেছেন, তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন— কোন জিনিস আমাদের জন্য উপকারী ও কোন জিনিস অপকারী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য। অতএব, তোমরা এগুলো পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। অবশ্য শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদের আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়। অতএব, তোমরা কি নিবৃত্ত হবে না?’

আপনারা অন্যায় ও সব ধরনের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য পরিহার করে স্বীয় ইমানের হেফাজত করুন। আর জেনে রাখুন, মদ্যপানকারী তার ধর্ম, বিবেক ও শরীর বিনষ্টকারী। আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের জন্য হালাল খাদ্যদ্রব্য বৈধ করেছেন এবং তাদের ওপর সব ধরনের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম করেছেন। হাদিসে আছে, রসুলুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সব ধরনের নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘শরাবখোর বেহেস্তে প্রবেশ করবে না।’ আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার হাবিব রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মদ্যপান করো না, কেননা তা হচ্ছে সব পাপের চাবি।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার ওয়াদা আছে, যে ব্যক্তি নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য পান করবে, তিনি তাকে তিনাতুল খাবাল থেকে পান করাবেন। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ! তিনাতুল খাবাল কী? উত্তরে বললেন, তা হলো দোজখিদের পুঁজ।’

হে সঠিক জ্ঞানের অধিকারীগণ! আপনারা অপবিত্র ও নেশা উদ্রেককারী দ্রব্যাদি পরিহার করুন। কেননা, সব ধরনের নেশা উদ্রেককারী দ্রব্য শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, এতে ধনসম্পদ ধ্বংস হয় ও জ্ঞান এবং লজ্জাশরম বিনষ্ট হয়।

হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনাদের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা রাগান্বিত অবস্থায় সাক্ষাতের আগেই তার সমীপে খালিস তওবা করুন। আল্লাহ আপনাদের অপবিত্র-অপছন্দনীয় ধ্বংসাত্মক এবং শরীরের ক্ষতি সাধনকারী দ্রব্যাদি পরিহারে সাহায্য করবেন। আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ কোরআনের বরকত আমাদের ও আপনাদের দান করুন। আমি অভিশপ্ত শয়তানের প্রতারণা থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘হে রসুল! লোকেরা আপনাকে শরাব ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর