মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

তবে কি মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

তবে কি মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু?

বেশ কিছুদিন ভাবছি মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লিখব। বিশেষ করে তালিকা প্রস্তুত ও তাদের সম্মানী ভাতা নিয়ে যে মাদারীর খেল চলেছে তার ওপর। স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। কোনো স্বাধীন দেশেই হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান করা হয় না, মাছের বাচ্চার মতো করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে যে ওসি ছিল, স্বাধীনতার পর সে যে মর্যাদা পেয়েছে, ৯ মাস বনেবাদাড়ে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা ওসি সেই গুরুত্ব ও সমাদর পায়নি। যে কজন ডিসি, এসপি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে যারা পাকিস্তান প্রশাসন টিকিয়ে রেখেছিল তারা অনেক বেশি গুরুত্ব ও সম্মান পেয়েছে, প্রমোশন পেয়েছে, এসবই স্বাধীনতার কেরামতি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই অনেক মুক্তিযোদ্ধার হানাদারদের কাছ থেকে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনা অস্ত্র পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত পুলিশের হাতে জমা দিতে হয়েছে। সেদিক থেকে আমরা কিছুটা ভাগ্যবান, জাতির পিতার আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধ করে তার পদতলে বিছিয়ে দিয়েছি। ’৭২-এর ২৪ জানুয়ারি বিন্দুবাসিনী স্কুলমাঠে জাতির পক্ষ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান দেওয়া হবে। আজ অনেক ক্ষেত্রে তাদের সর্বনিম্ন মর্যাদাও নেই।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের ভাতা বা সম্মানী বঙ্গবন্ধুর সময়ই হয়েছিল। আর কোথাও কাজ হোক বা না হোক আমার ভগ্নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কোনো কিছু ভালোভাবে বোঝাতে পারলে অবশ্যই কাজ হয়। আমি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি মাসে ২০০০ টাকা সম্মানী চেয়েছিলাম, এ নিয়ে গঙ্গা-যমুনার পানি অনেক গড়িয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত হয়েছে। আগে যুদ্ধাহতদের সম্মানী দেওয়া হতো। পরে জননেত্রী শেখ হাসিনার সময় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদেরও সম্মানী দেওয়া শুরু হয়। সর্বশেষ উদ্যোগ, যারা বীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছেন তাদের সম্মানীর ব্যবস্থা। শুনছি, সেখানে নাক গলিয়েছেন এক রাজাকারপুত্র মহামান্য সাবেক সচিব। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী, যুদ্ধাহত সম্মানী, সর্বোপরি খেতাবপ্রাপ্তের সম্মানী। ভদ্রলোক নাকি বলে দিয়েছেন এই তিন সম্মানীর মধ্যে যেটা সর্বোচ্চ শুধু সেই একটা সবাই পাবেন। মানে নামাজ পড়বেন, অজু করবেন না। মুক্তিযুদ্ধ গেজেট, নীতিমালা, কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গঠন— এসবের কাগজপত্র সংগ্রহ করে ১০-১২ দিন পর ঠিক করেছিলাম বিষয়টি দেশবাসী এবং পাঠকদের সামনে তুলে ধরব। কিন্তু সমসাময়িক কয়েকটি জঘন্য ঘটনার জন্য এবার তা তুলে ধরা গেল না। তারা বলেছেন, তাদের এটা দলীয় ব্যাপার। নেতা তো কর্মীদের চড়-থাপড়-লাথি-গুঁতা দিতেই পারেন। এ নিয়ে অন্য কারও কিছু বলার-কওয়ার নেই। এটা যে মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইল, শামসুল হকের টাঙ্গাইল, জননেতা আবদুল মান্নানের টাঙ্গাইল, সাবেক বিচারপতি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর টাঙ্গাইল, সর্বোপরি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র রচয়িতা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টাঙ্গাইল, অনেকে তা ভুলেই গেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালোত্তীর্ণ ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের ইলিশগুলো পদ্মার হলেও মাঝিরা সব টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরীর পাড়ের। বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর পি সি সরকারের টাঙ্গাইলের মানুষ চড়-থাপড়-লাথি খায় নেতার কাছে— ভাবতেই যেন কেমন লাগে। টাঙ্গাইলের মানুষ মনে মনে ফুঁসলেও বাইরে কিছু করেনি। অসন্তোষ আছে, জ্বলন আছে, কিন্তু তার প্রতিকার নেই— কেমন একটা গুমোট ভাব।

বর্বর পাকিস্তান হানাদাররা নারী নির্যাতন করেছে, মানুষ মেরেছে— সেসব নির্যাতনের কোনো জুড়ি নেই, ব্যাখ্যাও নেই। তবে তবু ছেলে দিয়ে মায়ের সম্ভ্রম নষ্ট করিয়েছে মুক্তিযুদ্ধেও আমার জানা ছিল না। কিন্তু বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কালিহাতী, লতিফ সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজের কালিহাতীতে সরকারি দলের গুণ্ডারা সে প্রয়াসও নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ করলে কালিহাতী থানার পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে প্রায় ৭০ জনকে আহত করে। তার চারজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার পরও পুলিশ প্রকাশ্যে বলাবলি করছিল, তাদের কে কী করবেন? কেউ কিছু করতে পারবে না। কেউ ভোট দিয়ে সরকার বানায়নি। তারা সরকার বানিয়েছে। তার পরও প্রচণ্ড প্রতিরোধ-প্রতিবাদ হওয়ায় ওসিসহ ১৩ জনকে নানা মেয়াদে নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবু দইয়ের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো একটা কিছু হয়েছে। বছর চার আগে টাঙ্গাইল সদরের এক রিকশাওয়ালার ময়না নামের এক মেয়েকে মধুপুরে নিয়ে কয়েক তস্কর ধর্ষণ করেছিল। সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার কর্মী ও আমাদের প্রতিবাদের ফলে সরকারি দলের হওয়ার পরও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পারেনি। সরকারি পিপি, এপিপিদের ভিকটিমের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু তারা বিপুল টাকা খেয়ে ভিকটিমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। প্রচুর টাকা খরচ করে টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে ধর্ষিতার আলামত গায়েব করেছিল। তার পরও ঢাকা মেডিকেলের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানোয় তার ধর্ষণের সব আলামতই পাওয়া যায়। এই কদিন আগে গাজীপুর কোর্টে বিত্তশালী সব কজন ধর্ষকেরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। টাকা থাকলেই যা খুশি তা করা যায় না। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকেও সব সময় লুটতরাজ, ধর্ষণ করে পার পাওয়া যায় না— এটা তার এক ছোটখাটো নজির বা প্রমাণ।

কোথাও কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। আমার জন্ম নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটিতে। সেই ইউনিয়নে ১৪ তারিখ অমন এক ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলে একেবারে হতদরিদ্র রমেছার মেয়ে মর্জিনাকে ইউপি চেয়ারম্যান মিল্টন সিদ্দিকী তার পাণ্ডা মনিরকে পাঠিয়ে আনে। অভিযোগ, নাগবাড়ীর চেয়ারম্যান তার অফিসের কথা বলে এলেঙ্গা রিসোর্টে নিয়ে ধর্ষণ করে পাছ চারানের রাস্তার মোড়ে ফেলে চম্পট দিলে আশপাশের লোকজন তার মা রমেছা আক্তারকে খবর দিয়ে এনে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে বিবরণী দেয়। ভিকটিম খুবই অসুস্থ থাকায় তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হাসপাতালে যাই। ভিকটিমকে তখন পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। সাধারণ ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে ফেলে রাখা হয় এবং তাকে তখন পর্যন্ত একটা ভিটামিন ট্যাবলেটও দেওয়া হয়নি। ভিকটিমের মা অভিযোগ করায় ১৯ তারিখ বিকালে ভিকটিমের জামা-কাপড় জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু তখন পর্যন্ত ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। শোনা যায়, ধর্ষক এরই মধ্যে হাসপাতালের সঙ্গে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ সব রকম বন্দোবস্ত করে ফেলে। ধর্ষক মিল্টন সিদ্দিকীর শ্যালিকা ডেইজী ১০-১২ জন নার্স নিয়ে ধর্ষিতাকে মামলা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় কিছু হবে না, তাই মামলা করে কোনো লাভ নেই বরং আপস করলে ধর্ষিতাকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ভিকটিম একেবারে গরিব মানুষ। তারা আর কিছু চায় না, তারা শুধু বিচার চায়। শুনেছি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ভালো মানুষ এবং খুবই আন্তরিক। তার পরও দিনদুপুরে শুধু টাকার জোরে এমন জালিয়াতি কল্পনারও বাইরে। বয়স হয়েছে, সারা জীবন অনেক হাটঘাটের পানি খেয়েছি, তাই অনেক কিছু চোখে লাগে। অনেক বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে ছিলাম। অনেক তদন্ত করেছি, অনেক উপকমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারি হাসপাতালের নিয়ম-অনিয়ম দেখেছি। কিন্তু কোনো ধর্ষিতার কেসে টাঙ্গাইল হাসপাতালের মতো টাকা খেয়ে এমন জালিয়াতি করতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি। লোকজন বলাবলি করছে, নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক পুতুল রায় মহাশয়কে ১০ লাখ এবং অন্যদের আরও ১৫ লাখ দেওয়া হয়েছে। আর এসবের সমন্বয় করছেন ডাক্তার জাকিয়া। আরও লাগলে আরও পাবেন— ধর্ষকদের এই প্রস্তাবে হাতে হাতে ফল দিয়েছে। সেই প্রবাদের মতো, ল্যাংড়া জামাই এক পায়ে খাড়া, মেয়ের তো কোনো কথাই নেই। কারণ মেয়ে বোবা। ওসির ব্যাপার, তার তো ধর্ষকের সঙ্গে নেশা করার কথা শোনাই যায়। এখন ডিসি, এসপি যদি একটু তাদের লাইনে থাকত তাহলে তো কোনো কথাই ছিল না। কিন্তু তারা তাদের লাইনে নেই বলে নাকি সামান্য অসুবিধা। শোনা যাচ্ছে, তারা প্রচুর টাকা ঢেলেছে। আগেও শুনতাম এসব ঘটনায় টাকার ছড়াছড়ি। কিন্তু একেবারে বুড়ো বয়সে অনেকটা প্রত্যক্ষ করলাম। এসব ঘটনায় থানায় এজাহারের সঙ্গে সঙ্গে আসামিকে ধরার চেষ্টা করা হয় বা পারলে ধরা হয়— তার কিছুই হয়নি। মজার ব্যাপার, টাঙ্গাইল হাসপাতাল বলতে গেলে প্রায় সবটা কিনে ফেলেছে। ভিকটিমকে নিরিবিলি আলাদা রুমে রাখা হয়, সেটাই আইন। জায়গা না থাকলে ডাক্তারের রুমে রাখার দরকার। কিন্তু তাকে আলাদা রাখা হয়নি, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। একবার ঢাকা পাঠাবে বলছে, আবার না করছে। মিডিয়ার সামনে আরএমও বলেছে, পুলিশ প্রোটেকশন চেয়ে পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, প্রোটেকশন চাওয়া হয়নি। মাদারীর খেলার যেন শেষ নেই। সারা জীবন পরিশ্রম করে উপার্জনের টাকার চেয়ে এ তো দেখছি গাঁজার টাকার জোর বেশি। ভিকটিমকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। মানবাধিকার কর্মী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নেওয়ায় হতদরিদ্র দুস্থ মেয়েটিকে এখনো হাসপাতাল থেকে বের করে বা ছেড়ে দেওয়া হয়নি। আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর সুনজরে পড়ে তাকে কিছু জমিজমা কিনে দিয়ে ধর্ষক খুব অল্প সময়ে বিত্তবান হয়েছে। ঠিকানাহীন লোকের হঠাৎ টাকা হলে যা হয়, ভদ্রলোকও তার ব্যতিক্রম নয়। এলাকায় গাঁজা-মদ নেশার সব ব্যবসা এখন তার নিয়ন্ত্রণে। গাঁজার টাকা মসজিদে, ক্লাবে ঢেলে চেয়ারম্যান হয়েছে। ভদ্রলোক এতদিন ছিলেন লতিফ সিদ্দিকীর এক নম্বর, এখন নতুন এমপি সোহেল হাজারীর এক নম্বর। এদের নম্বর কাটে না। এরা ক্ষমতার সন্তান। ঘটনা শোনার পর সাবেক মন্ত্রী বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী ঝিন্টু সিদ্দিকীকে বলেছেন এসব দুর্বৃত্ত যাতে ছাড় না পায় তা তাকে দেখতে।

১৮ তারিখ রাতের খবর, মিল্টন সিদ্দিকীর শ্যালিকা আবার কয়েকজন নার্স এবং আরও অন্যদের নিয়ে ভিকটিম মর্জিনাকে ১০-১৫ লাখ যা দরকার সে টাকা ও তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। গরিবরা সাধারণত নির্লোভ এবং সাহসী হয়। এই মেয়েটিও অনেকটা তাই। পরে কী হবে জানি না। এখন পর্যন্ত সে লোভের কাছে মাথা নত করেনি। শ্রীমতী পুতুল রায়েরা টাকা খেয়ে যাই করুন, ডিএনএ টেস্টে সবকিছু বের হয়ে যাবে। সেটা দু-এক বছরের পুরনো হলেও কাপড়-চোপড়, হাতে পায়ে চিহ্ন থাকবেই থাকবে। কালিহাতীর ওসি গাঁজা ব্যবসায়ী মিল্টনের সঙ্গে ওসব খাওয়া, ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগে অভিযুক্ত। বেড়ায় খেত খেলে কৃষক কী করবে— এখানে ব্যাপারটা প্রায় সেই রকম। পুতুল রায় দেখতেও পুতুলের মতো, সরকারি চাকরি করলেও ২০-২৫ বছর কোন জাদুর বলে টাঙ্গাইলে আছেন কেউ জানে না। এসেছিলেন ছেঁড়া ঝুলি নিয়ে। এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ইনকাম ট্যাক্স, দুদকের কোনো ব্যাপার নেই।

এসব কেসে হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমকে আলাদা করে রাখার কথা। অন্যান্য রোগী এবং লোকজনের সামনে ভিকটিমকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা তার অধিকার ক্ষুণ্নের শামিল। কেন তাকে আলাদা রাখা হলো না, ওষুধপথ্য দেওয়া হলো না? আমি তার হাতে মুখে বেশ ক্ষত দেখেছি, ডাক্তারি পরীক্ষায় সেসব উল্লেখ আছে কিনা কিছুই জানি না। কেন এমন হলো? এসব কেসে যে নিয়ম কেন পালন করা হলো না? তবে কি সবই গৌরি সেনের টাকার বল? নিয়ম হলো ভিকটিমকে আলাদা পরদায় রাখতে হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য যদি তাকে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান ্বপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠাতে হয়, সরকারি খরচে পুলিশ নিরাপত্তায় পাঠাতে হবে। দেশে একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী থাকার পরও মহিলাদের যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে আমরা মুখ দেখাব কী করে? তাই স্বস্তি পাচ্ছি না। যদি এমন হয় সত্যিই ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি, তাহলে কী হবে? তাহলে কি চেয়ারম্যান ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে যাবে? মেয়েটির বাড়ি নাগবাড়ী ইউনিয়নের বেড়বাড়ী। তাকে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী মনির প্রথম বেড়বাড়ীতে আনতে গেছে। বেড়বাড়ীতে না পেয়ে তার নানাবাড়ি সখীপুরের আমবাগ যায়। মনির তার হোন্ডায় করে মর্জিনাকে যখন নিয়ে আসে তখন নানা-নানী, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা ছিল। তারা যখন জিজ্ঞাসা করেছে, কোথায় নিয়ে যান? সে বলেছে, ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে চেয়ারম্যান সাহেব আছেন। সেখানে মর্জিনার মাও আছে। বিচারের জন্য মর্জিনাকে দরকার। মর্জিনাকে হোন্ডায় তুলে নাগবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের দিকে না গিয়ে অন্যদিকে যাওয়ার সময় মর্জিনা জানতে চায়, এদিকে কেন যাচ্ছেন? সে সঙ্গে সঙ্গে মাকে ফোন করে দু-এক কথার পরপরই মনির ফোন কেড়ে নেয়। ফোনকল বের করলেই তো সব বেরিয়ে যাবে। গ্রামের অসহায় মেয়েকে তুলে এনে অপমান-অপদস্থ-ধর্ষণের যে অভিযোগ; ডাক্তাররা টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিলেও ফৌজদারি আইনে নানা-নানি, আত্মীয়স্বজনের সামনে মিল্টন সিদ্দিকীর তস্কর মর্জিনাকে যে তার অমতে উঠিয়ে এনেছে শুধু এতটুকুর জন্য মিল্টন সিদ্দিকী এবং মনিরের যাবজ্জীবন অথবা ১২ বছরের জেল হতে পারে। ডিএনএ টেস্টের কাপড়-চোপড়ে, তার শরীরে ধর্ষণের, ধর্ষণ কেন শুধু ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেলে পুতুল রায়ের কী হবে? তার সঙ্গে যারা টাকা খেয়েছে তাদের কী হবে? এত বছর এক জায়গায় থেকে কোটারি বানিয়ে এই যে দিনের পর দিন অন্যায় করে চলেছে এর প্রতিকার কী হবে? বিষয়গুলোয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করছি। এভাবে চললে সমাজ তো জঙ্গল হয়ে যাবে। মনসুর ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে কোনো দিন তার অফিসে যাইনি। তার সঙ্গে দেখা করার সময় চাইব। পেলে এসব অনিয়মের কথা বলব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একজন সুহৃদ ব্যক্তি। তাকে ঘটনাটি জানাব। চেষ্টা করব আইজিকে বলতে। কারণ এসব অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া সমাজকে ধ্বংস করার শামিল।

 

            লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর