বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জমির সুষ্ঠু ব্যবহার

আইন প্রণয়নের উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য

নগর শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও বাড়িঘর নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজে ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে আইন প্রণয়নের পথে হাঁটছে সরকার। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ আইন পাস হলে নগরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বাড়িঘর নির্মাণ এবং যে কোনো উন্নয়ন কাজে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হবে। দেশে প্রতি বছরই কমছে কৃষিজমি। অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি নদীভাঙনেও চাষযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণে ক্রমান্বয়ে কমছে কৃষিজমি। চিংড়ি চাষ ও ইটের ভাটা কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষিজমির অস্তিত্ব। গত ৪৫ বছরে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণে দেশের প্রায় অর্ধেক কৃষিজমি ব্যয় হয়েছে। বছরে যে পরিমাণ কৃষিজমি কমছে, তার অর্ধেকই চলে যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। এ প্রেক্ষাপটে কৃষি জমি রক্ষায় বাড়িঘর ও উন্নয়ন কাজে ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহারে বাদ সাধতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। দেশে কৃষি জমি সংরক্ষণে ইতিপূর্বে আইন থাকলেও তার প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সুফল অর্জিত হয়নি। এ অবস্থার অবসানে উর্বর ও কৃষি উপযোগী জমির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সক্ষম এমন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা ছিল অনস্বীকার্য। ভূমি জরিপ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর; ২০০৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর। গত ১৪ বছরে তার পরিমাণ আরও হ্রাস পেয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতি বছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর, রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে।  অকৃষি খাতে কৃষিজমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বহুতল আবাসন প্রকল্প গ্রহণের কথা ভাবতে হবে। কৃষি জমিতে ইটের ভাটা কিংবা চিংড়ি চাষ যাতে না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। দেশের সমুদ্র উপকূলে ক্রসবাঁধ দিয়ে ভূমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। জমির অপব্যবহার রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে আমাদের অভিনন্দন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর