বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংক ঋণের নামে লুটপাট

বাংলাদেশ ব্যাংককে সজাগ হতে হবে

ব্যাংক থেকে যে ঋণ বিতরণ করা হয় তা ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা কারোর পৈতৃক অর্থ নয়, গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা। এ টাকার মালিক মোক্তার সাধারণ গ্রাহক, বড় মাপে দেশের সাধারণ মানুষ। ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে মুনাফার আশায়। এ বাবদ তারা যে সুদ বা সার্ভিসচার্জ পায় তা ব্যাংকের মূলধন বাড়ায়। এ অর্থ সঞ্চয়ীদের মুনাফাও নিশ্চিত করে। নিশ্চিত করে সঞ্চিত অর্থের নিরাপত্তা। এ নিরাপত্তা ব্যাংকগুলোকে শিল্প খাতে বা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন নতুন ঋণদানের সক্ষমতা জোগায়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুরু থেকেই বেপরোয়া লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় তা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে লুটপাটের প্রক্রিয়ায় প্রতিবছরই হাজার হাজার টাকা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি কোনো কোনো ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত লুটেরারা লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তাদের ব্যাংকে। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো যেন এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের  প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দানের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা ব্যাংকিং খাতেরই এক সাধারণ চিত্র। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান নিজেই এই বিশাল অঙ্কের ঋণদানের কলকাঠি ঘুটিয়েছেন। যে প্রতিষ্ঠানকে তিনি ঋণ দিয়েছেন, আদতে সেটি তাদের নিজেদেরই প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রীকে দৃশ্যত তিনি ২০০ কোটি টাকা পাইয়ে দিয়েছেন তিনি তারই আপন ভাইয়ের কন্যা। এ ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম মানা হয়নি। ঋণ অনুমোদনের পরপরই তা গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে ব্যবহার না করে ঋণের অধিকাংশই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন লকপুর গ্রুপের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটিকে বিরূপ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এখন আবার ওই একই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নতুন করে ঋণ অনুমোদনের কসরত চালাচ্ছেন। ঋণ বিতরণের নামে লুটপাটের অপখেলা ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থায় চিড় ধরাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির জন্য সৃষ্টি করছে বিসংবাদ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সজাগ হবে এমনটিই কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর