শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে অকারণ হত্যাকাণ্ড কবিরা গুনাহ

মাওলানা মুহম্মদ জিয়াউদ্দিন

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্ট জীবকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা গুরুতর অপরাধ বা কবিরা গুনাহ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানিরা গণহত্যা ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি)

একজন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানব জাতিকে হত্যা করারই নামান্তর। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে সবচেয়ে বড় গুনাহ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নরহত্যার ভয়ানক পরিণাম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৩২)

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি আসমান-জমিনের সব অধিবাসী একজন মুসলমানকে অবৈধভাবে হত্যা করার জন্য একমত পোষণ করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ) অকারণ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভণ্ড প্রতারকরা ইসলাম রক্ষার নামে যে, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায় তার পরিণাম তাদের জন্য ভালো হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা শাস্তি। পবিত্র কোরআনের ভাষায় ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত : ৪২)

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এ স্বাধীনতা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। স্বাধীনতাকে কণ্টকমুক্ত করতে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ ভূমিকা ছিল ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মভূমির প্রতি তার বাসিন্দাদের পবিত্র দায়িত্ব। কারণ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী স্বাধীনতা আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। ইসলামে দেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, শাশ্বত সত্য বলে ইসলামে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দেশ রক্ষার্থে একদিন এক রাতের প্রহরা ক্রমাগত এক মাসের নফল রোজা এবং সারা রাত ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়ার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের মতো সাহস প্রদর্শনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকার তৌফিক দান  করুন।

     লেখক :  ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর