শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

গণহত্যা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা

তোফায়েল আহমেদ

গণহত্যা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা

১৯৭১-এর ২৫ মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সাবেক বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠকে কর্নেল ওসমানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ডু ইউ থিঙ্ক দ্যাট টুমরো উইল বি এ ক্রুসিয়াল ডে?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, ‘নো, আই থিঙ্ক, ইট উইল বি টুয়েন্টি ফিফথ।’ তখন ওসমানী সাহেব পুনরায় তীক্ষ স্বরে তার কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কাল তো তেইশে মার্চ। পাকিস্তান দিবস। সে উপলক্ষে ওরা কি কিছু করতে চাইবে না?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছু করতে পারে। তার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। আসলে আমরা যতটা এগিয়ে গেছি এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কাও বোধ করছি। সে কারণে ওরাও কম শঙ্কিত নয়। ওরা জানে অ্যাডভার্স কিছু করার অর্থই সব শেষ করে দেওয়া।’ কী নিখুঁত হিসাব বঙ্গবন্ধুর। হিসাব করেই তিনি বলেছিলেন, ২৫ মার্চেই পাকিস্তানিরা ক্র্যাকডাউন করবে। এটা আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠল দুপুর ১২টায় যখন আমরা জানতে পারলাম প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার দলবলসহ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছেন। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আলোচনা করতে আসা সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও ইতিমধ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এদিন বেলা ১১টায় সেনাবাহিনীর একটা হেলিকপ্টারে মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এবং জেনারেল ওমর রংপুর গেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে গণহত্যার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা রংপুর ত্যাগ করেন। রংপুর থেকে সোজা রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন শেষে বিকালে ঢাকা ফেরেন। এদিকে সর্বত্র চাউর হয়ে যায়, ইয়াহিয়ার প্রধান সাহায্যকারী উপদেষ্টা এম এম আহমদ গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে আমরা জানতে পারি, সব সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গোপনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া করাচির উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। এরপর ইয়াহিয়ার আরেক উপদেষ্টা এ কে ব্রোহিও ঢাকা ত্যাগ করেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থমথমে রূপ ধারণ করে। আলোচনার নামে কালক্ষেপণকারী কুচক্রী মহলের ষাড়যান্ত্রিক নীলনকশা বাস্তবায়নের ভয়াল রাত ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকে। ২৫ মার্চের রাতে ঢাকা নগরীর নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বর পাকবাহিনী ট্যাঙ্ক, ভারী অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে। কামানের গোলা, মর্টারের শেল আর মেশিনগানের ভয়াল গর্জনে রাত ১২টার পর পুরো নগরীই জাহান্নামে পরিণত হয়। চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। শুরু হয় বাঙালি নিধনে গণহত্যা।

বিলম্বে হলেও দীর্ঘ ৪৬ বছর পর আমরা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে প্রতি বছর পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ’৭১-এর ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। মার্চের ২৫ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত কালপর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি নিধনে নয় মাসব্যাপী বর্বর গণহত্যা পরিচালনা করে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নীলনকশায় ঢাকার চারটি স্থান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে ১. বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ৩. রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং ৪. তৎকালীন পিলখানা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)। রাত ১২টায় অর্থাৎ জিরো আওয়ারে এই চার জায়গায় অতর্কিতে আক্রমণ চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দসহ ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ও জগন্নাথ হলের অনেক ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ঢাকার এই চারটি স্থান ছাড়াও রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর-সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আওতাভুক্ত এলাকা। ২৫ মার্চ বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘কালরাত’ হিসেবে আগে থেকেই চিহ্নিত। আর এখন থেকে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হবে।

আমি অকপটে স্বীকার করি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। বহুবিধ কারণে এটি সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। পাকিস্তানের জুনায়েদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : মিথস্ এক্সপ্লোডেড’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। যে বইয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দোষারোপ করা হয়েছে এই বলে যে, ২৫ মার্চের গণহত্যার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী। তারাই নিরীহ-নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করি। সেই সভায় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ দুজন বিদেশি উপস্থিত ছিলেন। সেদিন তারা এই দিনটির যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন তাতে আমি নিজে বিব্রতবোধ করেছি এবং লজ্জিত হয়েছি। আমার অনুশোচনা হয়েছে যে, কেন আমরা এই দিনটিকে এতদিন ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করিনি। সভাস্থলে বসেই যখন জুনায়েদ আহমেদ লিখিত বইটির পাতা উল্টে দেখছিলাম তখন বিস্মিত হয়েছি এই ভেবে যে, কীভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে! বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ’৭১-এর গণহত্যার যেসব হৃদয়বিদারক ছবি মুদ্রিত হয়েছিল, সেসব ছবি বইটিতে সংকলিত হয়েছে এবং প্রতিটি ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে এসব হত্যাকাণ্ড মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্ট। বইটিতে এসব মিথ্যাচার দেখে আমার মন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং সেদিনই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগদান করে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করি এবং উক্ত বই থেকে কিছু কথা উদ্ধৃত করে বক্তৃতায় বলি যে, ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হোক। সেদিন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন এবং একটি দিন নির্ধারণ করে আলোচনার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাননীয় স্পিকার একটি দিনের কথা ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যেই ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের জন্য জাসদের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার সংসদে নোটিস জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এ নোটিসটি সামনে নিয়ে ১১ মার্চ শনিবার আলোচনার দিন নির্ধারিত হয়। নির্ধারিত দিনে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাবের ওপর ৫৬ জন সংসদ সদস্য দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার আগে অধিবেশনকক্ষে পিনপতন নীরবতার মধ্যে ’৭১-এর গণহত্যার ১৮ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়া অসংখ্য নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ দেখে অধিবেশনকক্ষের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে এবং জাতীয় সংসদে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচারের কঠোর সমালেচনা করে হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও উন্নত হচ্ছে। কোনো অপশক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না।’ অতঃপর সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত মহান জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়।

পাকিস্তান ’৭১-এর গণহত্যাকে ভিন্ন খাতে চালিত করার জন্য যে অপকর্ম করে থাকে, দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে, এজন্য আমাদের দেশের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দায়ী, বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যেদিন তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে তার প্রশ্ন আছে, সেদিন থেকে পাকিস্তান এসব লেখাপত্র প্রকাশ করতে সাহস পেয়েছে। অথচ ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ যে শহীদ হয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে তৎকালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা হেরাল্ড ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুসারে ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ লোককে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন ’৭১ সালে। তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ড্যান কগিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক, একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘We can kill anyone for anything. We are accountable to no one.’ বিশ্বখ্যাত এই পত্রিকাটির একটি সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল, ‘It is the most incredible, calculated thing since the days of the Nazis in Poland.’ আন্তর্জাতিক মহলের মতে ’৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘৩ মিলিয়ন’ বা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই সংখ্যার সমর্থন রয়েছে Encyclopedia Americana এবং National Geographic Magazine-এ। এসব রিপোর্টে লেখা আছে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাজি বাহিনীর বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ। এই গণহত্যা সম্পর্কে পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী তার ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘paint the green of East Pakistan red’ অর্থাৎ তিনি বাংলার সবুজ মাঠকে লাল করে দেবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হেরাল্ড ট্রিবিউন ’৭১-এর ১ জুন লিখেছে, ‘পাকিস্তানের গণহত্যা থেকে রেহাই পেতে লাখ লাখ উদ্বাস্তু মুসলমান এবং অন্যরা স্রোতের মতো ভারতে চলে আসছে।’ মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভের এক মাস পর ২৬ এপ্রিল নিউজউইক লিখছে, ‘ইসলামাবাদ হাইকমান্ডের নির্দেশে সৈন্যরা পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং নেতৃত্ব প্রদানে সম্ভাবনাময় এমন সব লোককে পাইকারি হারে হত্যা করছে।’ রবার্ট পেইন তার ‘Massacre’ গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানকে উদ্ধৃত করে লেখেন, ‘Kill three million of them and the rest will eat out of our hands.’ ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘Among the genocides of human history, the highest number of people killed in lower span of time is in Bangladesh in 1971. An average of 6000 (six thousand) to 12000 (twelve thousand) people were killed every single day. …This is the highest daily average in the history of genocides…’

সুতরাং বেগম খালেদা জিয়া বা তার দোসররা যতই ’৭১-এর গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বিতর্কিত করে অস্বীকার করার চেষ্টা করুক না কেন তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ, তৎকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত অসংখ্য পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গণহত্যার চিত্র লিপিবদ্ধ আছে এবং এখন তা ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়েছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে গণহত্যা তদন্তে পাকিস্তানে যে ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ গঠিত হয়েছিল, সেই কমিশন তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশে গণহত্যার কথা স্বীকার করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কথা বলেছে। আমাদের এখন সোচ্চার কণ্ঠে দাবি তুলতে হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী কর্মকর্তা, যাদের আমরা গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছি তাদের বিচার করতে হবে। ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে সিমলায় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তাতে পাকিস্তান অঙ্গীকার করেছিল এই সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করবে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তা করেনি। সেই ঘৃণিত গণহত্যাকারী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার দাবিতে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সৃষ্টি করতে হবে।

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করব। যেভাবে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার ওপর যত প্রামাণ্যচিত্র, আলোকচিত্র রয়েছে সেগুলো জনসম্মুখে দেখানো হবে এবং এসব প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সত্যিকারের ইতিহাস সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম আরও সচেতন হবে এবং যাবতীয় কুতর্ক ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে। প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হলে তরুণ প্রজন্মের চেতনায় স্বাধীনতার সত্যিকারের চিত্র ফুটে উঠবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বুকে ধারণ করে প্রতিটি মানুষ বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে গর্বের সঙ্গে শামিল হবে। ঐতিহাসিক কতকগুলো কাজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর। যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের, যারা মাকে ছেলেহারা, বোনকে স্বামীহারা, বাপকে পুত্রহারা করেছে— বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই কুখ্যাত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে এবং অন্যদের বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে। বঙ্গবন্ধু যেমন ধাপে ধাপে কর্মসূচি গ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যাও তদ্রূপ জাতির পিতার আদর্শ সামনে রেখে ধাপে ধাপে জনহিতকর ঐতিহাসিক সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। যারা আমাদের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, যারা একদিন আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেছিল বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি, বাংলাদেশ হবে দরিদ্র রাষ্ট্রের মডেল— তারা যখন দেখছে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক সব সূচকে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে, তখন ষড়যন্ত্র আরও বেশি করে হচ্ছে এবং আমাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাঙালিদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না’। আমরাও মনে করি, আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার শক্তি কারুর নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। সেই কাজটিই দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে চলেছেন।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

[email protected]

সর্বশেষ খবর