রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বীরাঙ্গনাদের দুরবস্থা

ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও থামেনি বীরাঙ্গনাদের কান্না। বর্বর পাকিস্তানি হানাদাররা একাত্তরে তাদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। তারপর থেকে যে জীবন তারা বহন করে চলছেন, সে জীবনের কাছে মৃতরাও ঈর্ষার পাত্র। তথাকথিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানকে রক্ষার নামে অসভ্য বর্বর নৃশংস পাকিস্তানি সৈন্যরা একাত্তরের ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুরু করেছিল গণহত্যা। দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে হায়নাদের তাণ্ডব। নারীদের সম্ভ্রমহানিতে মেতে ওঠে তারা। প্রায় তিন লাখ জায়া-জননী-কন্যা হানাদার ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু লাঞ্ছিত নারীদের বীরাঙ্গনা বলে অভিহিত করে সম্মান দেন। কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ তাদের প্রতি সব সময় তাকিয়েছে বাঁকা চোখে। নিজেদের যে মা-বোন, স্ত্রী-কন্যা হানাদারদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে তাদের পরিবারে বা সমাজে সসম্মানে ঠাঁই দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্যের কখনই অবসান হয়নি। সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও সম্মানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো সবাইকে সে সম্মান দেওয়া সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে যারা সবচেয়ে বেশি সর্বনাশের সম্মুখীন হয়েছেন তারা হলেন সম্ভ্রম হারানো নারীরা। তাদের অনেকেরই স্বামী গণহত্যার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন বাবা, ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৪৬ বছর ধরে তারা বহন করে চলেছেন অসহনীয় এক কষ্টকর জীবন। বীরাঙ্গনাদের কষ্টকর ও গ্লানিময় জীবন থেকে রেহাই দিতে জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে এ প্রত্যাশা প্রতিটি বীরাঙ্গনার। সারা জীবন দুঃখ আর গ্লানিতে ভুগলেও শেষ জীবনে তারা ক্ষুধায় অন্ন, থাকার জন্য আশ্রয় এবং চিকিৎসার সহযোগিতা পাবেন এমনই আশা করেন সরকারের কাছ থেকে। জনকল্যাণে বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার এ যাবৎ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বীরাঙ্গনার ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়নে যে শ্লথ গতি চলছে তার অবসান হওয়া দরকার।  জাতি হিসেবে নিজেদের কৃতজ্ঞ ভাবলে স্বাধীনতার জন্য যারা অসামান্য আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতেই হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর