সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাউয়া-খাউয়ারা বড় দুই দলে ঘুণ ধরাচ্ছে

কাজী সিরাজ

কাউয়া-খাউয়ারা বড় দুই দলে ঘুণ ধরাচ্ছে

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের উঁচু-নিচু সব সাংগঠনিক কাঠামোতেই এখন সত্যিই ‘হাইব্রিডদের’ ছড়াছড়ি। আমার যতদূর মনে পড়ে রাজনৈতিক দলে এই ‘হাইব্রিড’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তখন তিনি সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ছিলেন না। কিন্তু এমন কেউ কেউ মন্ত্রী ছিলেন যারা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী পরিবারের লোক ছিলেন না। ব্যক্তিগত-পারিবারিক সম্পর্ক, দল বদল ইত্যাদির সুযোগ নিয়েছেন তারা। বঞ্চিত হয়েছেন দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব কাঠামোতেও নবাগত বা অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরা দলেরই কোনো প্রভাবশালীর পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দখল করে নেন। জেলার নেতৃত্বেই যাদের খবর ছিল না তেমন কেউ কেউ হয়ে যান কেন্দ্রীয় নেতা। বাপ দল করতেন, কিন্তু পুত্র-কন্যা কী করতেন দলের লোকজন জানেন না, দলের কোনো কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি; পিতার মৃত্যুর পর বা পিতার অবর্তমানের ওইসব ভাগ্যবান-ভাগ্যবতী ‘পুত্র-কন্যাদের’ সঙ্গে দেখা মেলে দলীয় বড় বড় পদে কিংবা মন্ত্রিসভার বৈঠকের ছবিতে। দলে এদের যেমন অতীত-অবদান বলতে কিছু নেই, নেতা-মন্ত্রী হয়েও এরা শুধু নেনই, দিতে পারেন না কিছু— না দলকে, না দেশকে। সমৃদ্ধ রাজনৈতিক অতীতের অধিকারী ও একজন দক্ষ, পরীক্ষিত সংগঠক ওবায়দুল কাদের এই কিসিমের হঠাৎ নেতা, হঠাৎ-এমপি, হঠাৎ-মন্ত্রীদেরই ‘হাইব্রিড’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন বলে আমার ধারণা। দলের গঠনমূলক সমালোচনায় সবসময় তাকে সোচ্চার দেখা গেছে। ভয়কে জয় করে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে দলের ভিতরে-বাইরে দুই জায়গায়ই তিনি লড়াই করেছেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তোলাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দল-অঙ্গদলের জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোজাসাপ্টা কথা বলেছেন। দলে দুর্বৃত্তায়নের অনুসারী এবং তাদের গডফাদাররা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন বলে শুনেছি, কিন্তু তিনি পরোয়া করেননি। কাউকে কাউকে এমনও বলতে শুনেছি যে, ওবায়দুল কাদের তো বিরোধী দলের নেতার মতো কথা বলছেন, তিনি দলের ক্ষতি করছেন দলীয় ফোরামের বাইরে দলীয় বা অঙ্গদলীয় লোকদের কিছু কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্য সমালোচনা করে। কিন্তু একজন ওবায়দুল কাদের দলের বহুজনের এমন সমালোচনা গ্রাহ্য করেননি। দলে তার অবস্থান অটুট থাকায় বোঝা গেছে, তার দলের স্বার্থে গঠনমূলক সমালোচনাধর্মী প্রকাশ্য বক্তৃতা-বক্তব্যের প্রতি নেত্রী শেখ হাসিনার প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ দলের কিছু লোকের দুষ্কর্মের কঠোর সমালোচনা করেছেন। প্রথমবার সরকার গঠনের পর ছাত্রলীগের অপকর্ম এত বেড়ে গেল যে, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক স্বনামে পত্রিকায় প্রথম পাতায় লিখেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, ছাত্রলীগকে থামান’। প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ মানেনি ওরা। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী তার প্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। ধারণা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সেই ভূমিকা ওবায়দুল কাদেরকে অনুপ্রাণীত করেছে। বোধের জায়গাটা খুবই স্পষ্ট যে, দল ক্ষমতায় থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তোলাবাজি, অস্ত্রবাজি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা দলকে জনবিচ্ছিন্ন করে, দলীয় সরকারকে দুর্বল করে, রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে খারাপ বার্তা দেয়, সর্বোপরি দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দেশ ও জাতির সর্বনাশ করে। আদর্শবাদী, নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা সাধারণত ওপরে বর্ণিত খারাপ কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় না। দলের রাজনীতি ও আদর্শের অনুরাগীরা দলের বদনাম হোক, ক্ষতি হোক তা চায় না। নীতি-আদর্শহীন অনুপ্রবেশকারী এবং দলের প্রতি দরদহীন ব্যক্তিরাই সব প্রকার দুর্বৃত্তায়নে জড়িত হয়। আবার যোগ্যতাহীন, অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিরা বড় পদ-পদবির জন্য, নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের জন্য দলের ভিতর একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে সখ্য গড়ে, দলে তাদের অবস্থান তৈরি করে দেয়, শত্রু-শিবিরের নেতা-কর্মীদেরও দলে ভেড়ায়। দল তখন চলে যায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, দলের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। প্রতিপক্ষ এই সুযোগ কাজে লাগায়। আমার ধারণা, এসব বিষয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুভব করেছেন অনেক আগে থেকে এবং তা ছিল যথার্থ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটা ‘মানসিক চিন্তার ঐক্য’ অজান্তেই বোধহয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। একটা রূঢ় কথা বলতেই হয় যে, আমাদের দেশের সব প্রকাশ্য দলই মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে; কিন্তু কোনো দলের অভ্যন্তরেই গণতন্ত্রের ন্যূনতম চর্চা ও অনুশীলন নেই। দল সম্পর্কে দলের সমালোচনামূলক কথা দলীয় লোক বা বাইরের শুভানুধ্যায়ী-বুদ্ধিজীবীরা বাইরে বললেই বলা হয়, দলীয় ফোরামে বললেন না কেন? কিন্তু কোনো দলের ভিতরে সমালোচনা-আত্মসমালোচনার কোনো সুযোগ কি আছে? নেতা-নেত্রীরা কি সমালোচনা সহ্য করেন? বরং বাইরের কিছু গঠনমূলক সমালোচনা দলের নীতিনির্ধারকদের ওপর একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে, জনমত গড়ে ওঠারও সুযোগ থাকে। যে নেতৃত্ব দলীয় নানা সীমাবদ্ধতার কারণে কোনো প্রকার সমালোচনা বা পরামর্শ শোনেন না বা পান না; অথচ কিছু করতে চান, তিনি বা তারা দলীয় ফোরামের বাইরের গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ কাজে লাগিয়ে বা ব্যবহার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। ওবায়দুল কাদেরের প্রথম ব্যবহার করা ‘হাইব্রিড’ শব্দ রাজনৈতিক বাজার বেশ পেয়েছে, অর্থাৎ যুৎসই হিসেবে তা বাজারে ‘খেয়েছে’। নীতিনির্ধারকরাও নিশ্চয়ই বাস্তবতা অনুধাবন করছেন।

ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক মর্যাদা ও সাংগঠনিক অবস্থান অনেক উন্নীত হয়েছে। তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, আওয়ামী লীগের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। বুঝে নিতে কি কারও কষ্ট হয় যে, ওবায়দুল কাদেরের এসব প্রাপ্তিযোগের আগের যে ভূমিকা ও অবস্থান, তারই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এখন তিনি কার সমালোচনা করবেন, কাকে পরামর্শ দেবেন? তিনি এখন দলের নির্বাহী প্রধান। নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পরও তিনি মুখ বন্ধ করেননি। ‘বাজিকর’দের বিরুদ্ধে সমালোচনার চাবুক হেনেই চলেছেন। আওয়ামী লীগে কারা ‘হাইব্রিড’, কারা দুষ্টক্ষত তিনি এখন আরও ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারার কথা। সম্ভবত তিনি তা করতে পেরেছেন এবং হয়তো এমন আতঙ্কও বোধ করছেন যে, ত্যাগী নিষ্ঠাবান কর্মী-নেতাদের স্থলে কৃত্রিম প্রজননের ‘হাইব্রিড’ ‘ফলনের’ ঢুকে যাওয়া নয়, নোংরা আবর্জনা খাওয়া, যেখানে সেখানে ঠোকর মারা ‘লোভী কাউয়াও’ দলে ঢুকে অন্যায় অনৈতিক পথে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ও নানা ফায়দা লুটে খাচ্ছে, সর্বনাশ করছে দলের। কাউয়া বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন তা সাধারণ মানুষেরও বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তবে একটা কথা যদি তিনি অস্বীকার করেন তাহলে তিনি পুরো সত্য না বলে আংশিক সত্য বলেছেন বলে সমালোচিত হবেন। যে কারণে তিনি দলে কাউয়া ঢুকেছে বলে মন্তব্য করেছেন সেই দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তোলাবাজি, দখলবাজি, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর, সম্পত্তি দখল ইত্যাদি তার দলীয় সরকারের চেহারা যে বিবর্ণ করে ফেলছে তিনি কি এসবের সম্পূর্ণ দায় ‘কাউয়া’দের ওপর চাপিয়ে দিয়ে দলের অন্য জড়িত ব্যক্তিদের আড়াল করতে চাচ্ছেন? দলের পুরনো লোকরা কিছু করছে না, ‘হাইব্রিড’ আর কাউয়ারাই সব দুর্বৃত্তপনার সঙ্গে জড়িত বলে দলের ভাবমূর্তি-সংকট মোকাবিলা করতে চাচ্ছেন? হ্যাঁ, এটা তার একটা প্রকাশ্য কৌশল হতে পারে, কিন্তু কার্যত কঠোরতা পরিহার করা হবে না কারও ব্যাপারেই— নিজের এ ভালো অবস্থানটা যেন নষ্ট না হয়। কৌশলটা যেন শেষে নীতিতে পরিণত না হয়। অবশ্য আপাতত এ কাউয়া সামাল দেওয়া জরুরি। এ কাউয়ারা আওয়ামী লীগের জন্য আসলেই একটি বড় সমস্যা। এরা দলে অনেক ভারী হয়ে গেছে। দলবদ্ধ কাউয়ারা কিন্তু শক্তিমান মানুষের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া সমস্যা’র মতো বিএনপিকে চিবিয়ে খাচ্ছে ‘খাউয়া’ সমস্যা। কাউয়া আর খাউয়ার রং আর শাব্দিক সাযুজ্য না থাকলেও আচরণগত কোনো পার্থক্য নেই। কাউয়া আর খাউয়া- দুইয়ের চরিত্রই একেবারে ‘ফুলের মতো পবিত্র’। লুটেপুটে খাওয়া এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কাউয়া এমন কোনো জিনিস নেই যে তাতে ঠোকর মারে না। পচাগলাটা যেমন খায়, ভালোটাও ছাড়ে না। খাউয়াদের স্বভাবতো বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। ওদের পেট যেন ভরেই না। আওয়ামী লীগে কাউয়াদের উপদ্রব দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই শুধু নন, দেশের মানুষও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এদের শক্তির উৎস সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২৪ মার্চ সংখ্যায় ‘আওয়ামী লীগে কাউয়া কারা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা নিজ এলাকায় ভিত্তি মজবুত করতে জামায়াত নেতাদের ফুলের মালা দিয়ে আওয়ামী লীগে বরণ করে নেন। শুধু জামায়াতই নয়, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিভিন্ন বাম  সংগঠনের নেতারা গণহারে আওয়ামী লীগে যোগদান করে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তারা স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী, নেতাদের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মামলা থেকে বাঁচতে নৌকায় চড়েন।’ দলীয় সূত্রমতে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু ‘হাইব্রিড’ প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের দল ভারী করার লক্ষ্যে দলে ‘কাউয়াদের’ অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছেন। কোথাও কোথাও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসাচ্ছেন। ফলে দলের প্রবীণ-পুরাতন আদর্শ ও নীতিতে অবিচল ত্যাগীরা গুরুত্ব হারাচ্ছেন। হাইব্রিড ও কাউয়াদের জন্য একদিকে দল দুর্বল ও গণবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, অপরদিকে তাদের অনৈতিক কাজকর্মে দল নিন্দা কুড়াচ্ছে। এ ‘কাউয়ারা’ দলে জায়গা করতে না পারলে আগে-পিছে লীগ, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম এবং হালে জয়ের নাম যুক্ত করে নানা কিসিমের সংগঠন গড়ে তুলছে। দলে তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ওইসব সংগঠনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের গুরুত্ব বাড়ায়, চাঁদার রেট বাড়ায়, আওয়ামী লীগের ‘পরিচয়ের চাদর’ পরিয়ে দেয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২৪ মার্চ সংখ্যায় এ ধরনের প্রায় শ’খানেক ভুঁঁইফোড় সংগঠনের নাম ছাপানো হয়েছে। একেবারে তরতাজা একটি সংগঠনের নাম ‘জয় ডিজিটাল মাতা শেখ হাসিনা আইসিটি লীগ’। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসব সংগঠনের কেউ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করতে গেলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। এটা কিন্তু নতুন কথা নয়। এর আগেও দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্বৃত্তায়নে লিপ্তদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দলের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছিল। এমন একটি খবরও পাওয়া যায়নি যে, তেমন কাউকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব এখন দলের নির্বাহী প্রধান। তার হুঁশিয়ারিও যদি বিফলে যায় তাহলে কী দাঁড়াবে আওয়ামী লীগের অবস্থা? আওয়ামী লীগ নেতা তার দলের অবস্থা অকপটে স্বীকার করলেও বিএনপি কখনো তাদের ‘খাউয়া’দের নিয়ে কোনো সতর্কবাণী উচ্চারণ করেনি। অথচ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, একই অবস্থা বিএনপিতেও। দলের আদর্শবাদী, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দলে তারা কোণঠাসা। যথার্থ মূল্যায়ন নেই। হাইব্রিড ও ‘খাউয়া’দের জয়জয়কার। কোনো বৈধ আয়ের উৎস ছাড়াই অনেকে কোটি কোটি, শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বারবার ভুল হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের কোনো ভূমিকা পালনের সুযোগ না থাকার কারণে। দল ক্ষমতায় থাকতে এ ‘খাউয়া’রা দলের ও দলীয় সরকারের বারোটা বাজিয়েছে যেমন বাজাচ্ছে আওয়ামী লীগের ‘কাউয়ারা’। বিএনপির ‘খাউয়া’রা এখনো দাপটের সঙ্গে আছে দলে। এরাই দলের কমিটি বাণিজ্য, পদ-পদবি বেচা-কেনা, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন সওদাগরির সঙ্গে জড়িত থেকে দলের অনেক ক্ষতি করেছেন বলে ত্যাগী দলানুরাগীরা অবিরাম অভিযোগ করে চলেছেন। কিন্তু দলের নীতি-নির্ধারকরা সতর্ক হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। তবে কি শর্ষেতেই ভূত! আওয়ামী লীগে আপাতত সাংগঠনিক সংকট একটি— ‘কাউয়া’ প্রতিরোধ ও বিতাড়ন; বিএনপিতে সংকট দুটি— ১. শর্ষের ভূত তাড়ানো, ২. ‘খাউয়া’ প্রতিরোধ ও বিতাড়ন। এদের কার্যকরভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে এই কাউয়া-খাউয়ারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির সর্বনাশের কারণ হবে। দুই দলেই এরা ঘুণ ধরাচ্ছে।

            লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর