বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিহিংসার কুফল

মুফতি মাও. মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিহিংসার কুফল

কারও ভালো কিছু দেখে অসহ্যবোধ করা বা তার অকল্যাণ কামনা করা কিংবা ওই ব্যক্তির ভালো বিষয়টির ধ্বংস চাওয়াকে হিংসা-দ্বেষ ও ঈর্ষা বলে। একজন মুমিন কখনই আরেক ভাইয়ের ভালো ও কল্যাণের বিষয় দেখে অসহ্যবোধ কিংবা হিংসাতুর হতে পারে না। এতে করে যে নিজের ক্ষতিই সাধিত হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেকিকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে অর্থাৎ জ্বালিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ : ৪৯০৩)। হিংসার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সহি মুসলিম শরিফে একটি হাদিস এসেছে। এটিও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরকে হিংসা কর না। একে অপরের প্রতি বিদ্বেষভাব রেখ না। একজন আরেকজন থেকে আলাদা হয়ো না। বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (মুসলিম : ৬৩৫৩)। হিংসা কত বড় গুনাহ তা বুঝাতে গিয়ে ইমাম গাজ্জালী (রহ.) লেখেন, ‘পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাপ হলো হিংসা। বাবা আদম (আ.)-এর মর্যাদা দেখে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় ইবলিস। ঈর্ষা ও হিংসা থেকেই ইবলিসের মনে জন্ম নেয় অহঙ্কার। আর অহঙ্কারের কারণেই সে আদম (আ.)-কে সিজদা করতে অস্বীকার করে। ফলে সে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত ও মরদুদ হয়ে যায়।’ এর পর ইমাম গাজ্জালী আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি লেখেন, ‘একবার মুসা (আ.) দেখলেন এক ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ায় বসে আছেন। তিনি ভাবলেন, এ ব্যক্তি নিশ্চয় খুব বুজুর্গ লোক হবে। তাই তার এত মর্যাদা। মহান আল্লাহকে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এ ব্যক্তির নাম-ঠিকানা কী? আল্লাহতায়ালা তার পরিচয় না বলে বললেন, মুসা! এ লোক কোন আমলের দ্বারা এত মর্যাদা পেয়েছে জান? সে কখনো কারও প্রতি ঈর্ষা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করেনি। তাই আমার কাছে সে এত বড় মর্যাদা পেয়েছে। (কিমিয়ায়ে সাদাত : ৪র্থ খণ্ড, ৯২-৯৩ পৃ.)। অন্যের ভালো দেখে অন্তর্জ্বালায় ভোগা মুনাফিকের চরিত্র। আর এমন পরিবেশে মুমিনের কর্তব্য হলো ধৈর্য অবলম্বন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ভালো কিছু হলে তারা কষ্ট পায় আর তোমাদের কোনো বিপদ দেখলে তারা আনন্দিত হয়। (এমন পরিস্থিতিতে) তোমরা অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে এবং তাকওয়ার সঙ্গে কাজ করবে। তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সূরা আলে ইমরান : ১২০)। পাশাপাশি আরেকটি কাজ করতে হবে। যা প্রিয়নবী (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, (হে নবী আপনি বলুন!) আমি হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাই যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা ফালাক : ৫)। সব সময় আল্লাহর কাছে এভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। কারও ভালো কিছু দেখে তা নিজের জন্য কামনা করা ক্ষতির নয় যদি এতে অন্যের জন্য অমঙ্গল কামনা করা না হয়। বরং ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রে এমন মনোভাব খুবই প্রশংসনীয়। রসুল (সা.)-এর হাদিসের প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জন্য হিংসা জায়েজ নেই।  প্রথম সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং আল্লাহর পথে দান করার জন্য তাকে নিয়োজিত করেছেন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন,  ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, খতিব, মনিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর