শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

কোরআনের সবক নিজকে জানা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআনের সবক নিজকে জানা

‘ইন্নাদ দ্বীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম। নিশ্চয়ই! আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় একমাত্র জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম।’ যে পথ ও মত আদম সন্তানকে  শান্তির পায়রা হতে শিখিয়েছে তারই কোরানিক নাম ইসলাম।  কালো-ময়লা জীবনের মানুষ শুভ্র-সফেদ পায়রা হয়ে শান্তি বিলানোর সবক পেয়েছিল হেরার সাধক মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকে। তার অগণিত সাহাবি পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যেখানেই বসতি গড়েছেন শান্তি বিলিয়েছেন অন্যের দুঃখ কুড়িয়ে নিয়েছেন। কোনো সাহাবিকে যদি জিজ্ঞেস করেন— ‘হে শান্তি সংঘের সদস্য সফেদ পায়রা! দুঃখ কুড়িয়ে শান্তি বিলানোর এ সবক তুমি কোথায় পেয়েছ? জবাবে তিনি বলবেন, ‘শান্তির দূত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে পেয়েছি। কখনো কোরআনের আয়াত বলে, কখনোবা নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করে আর সবসময় জীবন্ত কোরআন হয়ে তিনি আমাদের পাঠ দিয়েছেন শান্তি-সুখের পৃথিবী গড়ার।’

‘হে দুনিয়ার মানুষ শোন! আমি মুহাম্মদের হাতে গড়া শান্তির পায়রা বলছি। আমাকে ভাবতে পার আবু বকর-ওমর-ওসমান কিংবা আলীও। অথবা আদনা কোনো শান্তি পাখি রসুলের সাহাবি। আমার কোনো ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। নেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো বিচিত্র পড়াশোনা। প্রযুক্তির ছোঁয়া তো দূরে থাক, বাতাসও লাগেনি আমাদের গায়ে। আমরা শুধু পড়েছি কোরআনের বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের শিক্ষাগুরু ছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। আমাদের শিক্ষার বিষয় ছিল ‘মানুষ হও’। প্রেমিক হও। তোমাদের তুলনায় আমরা মূর্খই বটে। তাই তো তোমাদের মধ্যে যার সার্টিফিকেট যত বড় তার পশুত্ব তত স্পষ্ট। কিন্তু আমাদের বেলায় যে যত বড় মানুষ ছিলেন তার সাধনাও তত গোপন ছিল।’

‘হে পৃথিবীর মানুষ! তোমাদের যত চেষ্টা-প্রচেষ্টা সবই সুখময় জীবনের প্রয়োজনের আয়োজন। তোমাদের আয়োজন দেখে বড্ড হাসি পায়। আবার ঘোর লেগে যায়। তোমরা মূর্খ নাকি আমরা? একটি মাত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন করে আমরা হয়েছি ওমর-আলী, তৈরি করেছি গাজালী-রাজীসহ কত জ্ঞানী-গুণী। যারা ছিলেন সত্যিকারের মানুষ। মানুষের দরদে যাদের প্রাণ ছিল ব্যাকুল। আর তোমরা? কত জ্ঞান! কত প্রযুক্তি তোমাদের আয়ত্তে! তারপরও তোমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ নেই? মানবতাবোধের অভাবই যে তোমাদের পৃথিবীর বড় সমস্যা এও তোমরা বুঝতে পারছ না। নিত্য-নতুন আবিষ্কার তোমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে কিন্তু মানুষের দুঃখ তোমাদের কাঁদিয়ে দিতে পারছে না।’

‘শোন হে মানুষ! জীবনে যদি শান্তি চাও, আত্মায় যদি প্রশান্তির অনুভূতি পেতে চাও তবে প্রেম গ্রন্থ কোরআন হাতে নাও। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআন থেকে পাঠ নাও। তোমাদের আবিষ্কার, তোমাদের প্রযুক্তি সব কিছুতেই কোরআনের সুইচ লাগাও। দেখবে জীবন হবে আলোকিত। জীবন হবে কত শান্তি ও প্রশান্তির। কত বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য। কত মহান ও মহৎ। যদি তা করতে না পার তবে প্রযুক্তি যত উৎকর্ষতা লাভ করবে তোমাদের জীবন তত অনিরাপত্তা ও অশান্তিতে ভরে উঠবে। দুই চোখ মেলে জাপানের দিকে তাকাও। প্রযুক্তিতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র এটি। কিন্তু তাদের আত্মায় কোনো শান্তি নেই। তাই তো একটা সময় জীবনের প্রতি তারা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা দেখে তার পাশে কেউ নেই। সব প্রযুক্তিতে ডুবে আছে। কোনো অফিস কিংবা বাসায় যদি দশজন মানুষ থাকে তবে দশজনই অনলাইন চ্যাটিং-গেমিংয়ে মেতে থাকে। বাস্তব জগতের মানুষটির দিকে ফিরেও তাকায় না কেউ। এমন জীবন তো থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। তাই তো জাপানের মানুষ আত্মহত্যায় পৃথিবীর যে কোনো দেশের মানুষের চেয়ে এগিয়ে।’

একটি মাত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন করে আমাদের খলিফা ওমর যদি পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায়ের রাজ্য কায়েম করতে পারেন তবে কেন তোমরা বেহুদা মরীচিকার পেছনে ছুটছ? কেন তোমরা কোরআনের ছায়ায় আসছ না? নবীর নীতি কেন জীবনে অনুসরণ করছ না? হায়! তোমাদের জন্য বড় আফসোস! পৃথিবীর উন্নতির সঙ্গে নিজেদের উন্নত করতে মরিয়া হয়ে আছ তোমরা। অথচ জানতেই পারলে না ‘নিজকে জানা’ কাকে বলে? নিজের উন্নতি কোন পথে? সত্যিকারভাবে যদি নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়তে চাও তবে কোরআনের আলোয় আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর আর কোনো মত ও পথ তোমাকে মানুষ বানাবে না।  তাই হে মানুষ! আস কোরআনের পথে। আস কল্যাণের পথে। যে পথ চলে গেছে পৃথিবী থেকে সোজা জান্নাতের দিকে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর