শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জীবনের সর্বস্তরে সুন্নতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

আল্লাহর নবীর অনুসরণ শুধু ব্যক্তিজীবনের জন্য নয়। ব্যক্তিজীবনের মানুষ যে চরিত্রের অধিকারী হয় সমাজ সে চরিত্রে গড়ে ওঠে। যে সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তি অধার্মিক হয়, সে সমাজটাও অধার্মিক সমাজ হয়ে যায়। ব্যক্তি নিয়েই তো সমাজ, আলাদা তো কিছু নয়। ব্যক্তিজীবন এক ধরনের হবে আর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন হবে অন্য ধরনের, এমন ধারণা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই শান্তির যে তালা এতদিন বন্ধ হয়ে আছে, তা খুলতে হবে এই সুন্নতের চাবি দিয়ে; রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতসিক্ত আদর্শ দিয়ে। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত গুণীজন বলেন : ধর্মের অনুশীলন ব্যক্তিজীবনের জন্য, ঘরের জীবনের জন্য; সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মকে টেনে আনা ঠিক নয়। বিদ্বানরা এমন বস্তাপচা কথা কীভাবে বলে সেটা ক্ষুদ্রজ্ঞানে বুঝে আসে না। সমাজ কি ব্যক্তি ছাড়া? রাষ্ট্র কি ব্যক্তি ছাড়া?

সমাজ ও রাষ্ট্র যদি ব্যক্তি ছাড়া না-ই হয়ে থাকে, তাহলে এরা এতকাল কথিত বিদ্বানের আড়ালে মূর্খতাই বহে চলছে। ভূত তাড়াতে সরষের ব্যবহার করা হয় জানতাম কিন্তু ‘সরষে ক্ষেতেই ভূত’ লুকিয়ে থাকে, তথাকথিত বিদ্বানদের এমন কথা শুনলে তা মনে পড়ে যায়। ব্যক্তিজীবন যেমন হবে সমাজ জীবন তেমন হবে, আবার সমাজজীবন যেমন হবে ব্যক্তিজীবনও তেমন হবে, এটা বাস্তবতা। ব্যক্তি ও সমাজ একে অপরের পরিপূরক। যে জাতির বুদ্ধিজীবীরা এমন বাস্তবতাবহির্ভূত উক্তি ধারণ করে যেখানে সেখানে তা উদগিরণ করে, সে জাতির কিসের উন্নয়ন আর কিসের সফলতা! ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের যৌক্তিক আইনকানুন ও দিকনির্দেশনা রয়েছে। আমরা যদি আখেরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনকে নিজেদের জীবনের জন্য মডেল বানিয়ে নিই, তাহলে শান্তির জন্য এত হা-হুতাশ করার প্রয়োজন হবে না। কারণ মহান আল্লাহ বলেন— ‘যারা আল্লাহতায়ালা ও রোজ কেয়ামতের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।’ (সুরা আহযাব : ২১)।

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঐতিহাসিক জীবনযাপন করে গেছেন। তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন এখনো মানুষের জন্য মডেল হয়ে আছে। তাদের সেই সোনালি যুগের কথা মানুষ এখনো বলে এ জন্য যে, তারা প্রথমে বকরি-উট চরানোর দল ছিল। নিজেদের মেয়ে সন্তানদের জীবন্ত কবর দিত। তাদের ইতিহাস সবারই জানা। সে সময়ে তাদের মধ্যযুগীয় বলে ঘৃণা করা হতো। কিন্তু তারাই যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতসিক্ত আদর্শকে মুখে স্বীকার করে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে শুরু করলেন, তখন দুনিয়ার সামনে তারা সর্বোত্তম মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং সারা পৃথিবী তাদের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হলো। নিন্দুকেরাও তখন তাদের বরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করল। এদেশ তো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। কিন্তু এদেশের ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনের সুন্নতের প্রতিফলন নেই বলে করুণ অবস্থা!  কেন আমরা সাহাবায়ে কেরামের মতো ভূমিকা পালন করে মানুষের শীর্ষে পৌঁছতে পারছি না।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর