দীনের প্রচার বিশেষ করে দীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে সহজ-সরল ভাষার আশ্রয় নিতে হবে। জটিলভাবে কারোর কাছে দীনের শিক্ষা উপস্থাপন করা যাবে না। দীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে উত্তেজিত অসহিষ্ণু হওয়া থেকেও দূরে থাকতে হবে। দীনের প্রচারের গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে সূরা নাহলের ১২৫তম আয়াতে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হে নবী! তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও হিকমত ও নসিহতের সাহায্যে আর লোকদের সঙ্গে পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। তোমার রবই অধিক অবগত আছেন কে তার পথ হতে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর কে সঠিক পথে রয়েছে।’
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দীনের জ্ঞান শিক্ষা দাও ও সহজ করে পেশ কর। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। তুমি উত্তেজিত হয়ে পড়লে নীরবতা অবলম্বন কর। এ কথাও তিনি দুবার বলেছেন (ইমাম বুখারির আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থ থেকে)। মানুষকে ওয়াজ নসিহতের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ওয়াজ নসিহতের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন কারোর বিরক্তি উৎপাদনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। তাবিঈ শাকিক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসিহত করতেন। এক ব্যক্তি তাকে বলল, হে আবদুর রহমানের পিতা! আমার আকাঙ্ক্ষা এই যে, আপনি যদি প্রতিদিন আমাদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসিহত করতেন। তিনি বলেন, একটা আশঙ্কাই আমাকে তা করতে বাধা দেয়। তোমাদের বিরক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি দৈনিক ওয়াজ-নসিহত করা পছন্দ করি না। এ ব্যাপারে আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীতি অনুসরণ করি। পাছে আমরা তার নসিহতে বিরক্ত হয়ে যাই সেদিকে তিনি খেয়াল রাখতেন। (বুখারি, মুসলিম থেকে মিশকাতে)।
দীনের প্রচার তথা ওয়াজ-নসিহতের সময় মানুষ যাতে সহজভাবে দীনের বিষয় বুঝতে পারে সে কৌশলও অবলম্বন করতে হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো কথা বলতেন তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করতেন, যাতে ভালোভাবে বোঝা যায়। তিনি যখন কোনো সম্প্রদায়ের কাছে যেতেন তাদের তিনবার সালাম করতেন (বুখারি থেকে মিশকাতে)। কোরআন, হাদিস বা দীনের বিষয়ে কোনোভাবেই দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলা যাবে না। না বুঝে-শুনে কোনো কথা বলা থেকেও বিরত থাকতে হবে। কোরআন, হাদিসের বিষয়ে বিরোধে লিপ্ত হওয়া থেকেও দূরে থাকতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন সম্পর্কে নিজের কথা বলল সে যেন দোজখে নিজের ঠিকানা করে নিল। অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি না জেনে-বুঝে কোরআন সম্পর্কে কথা বলল সে নিজের ঠিকানা দোজখে বানিয়ে নিল (তিরমিজি)।আল্লাহ আমাদের সবাইকে দীনের প্রচারে ভূমিকা রাখার তাওফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামী গবেষক।