সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে লীগ-বিএনপির কুতর্ক

কাজী সিরাজ

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে লীগ-বিএনপির কুতর্ক

আরেকটি ভালো নির্বাচন দেখলাম আমরা। ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক এ নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো পক্ষ কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি তোলেনি। এ নির্বাচনটির ওপর তীক্ষ নজর ছিল জাতীয়-আন্তর্জাতিক নানা মহলের। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর ‘কুসিকের’ এ নির্বাচন ছিল প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের জন্য, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল কর্তৃক দলবাজ বলে কঠোরভাবে সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য এটা ছিল একটা পরীক্ষা। বলা চলে সে পরীক্ষায় তিনি ভালোভাবে পাস করেছেন। তবে এই একটি নির্বাচন দিয়েই নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অনুকূল সিদ্ধান্তে পৌঁছতে রাজি নন অনেক পর্যবেক্ষক। কলেজের শেষ পাবলিক পরীক্ষায় সন্তানের জিপিএ-৫, গোল্ডেন-৫ ফল নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষকরা আনন্দিত হন, উত্ফুল্ল হন। নানা অনুষ্ঠানাদিরও আয়োজন হয়। কিন্তু সেই ‘অসাধারণ’ রেজাল্ট করা সন্তান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারে না তখন পূর্ববর্তী পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ আগামী জাতীয় নির্বাচনটি নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় পরীক্ষা বা আসল পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় পাস করতে না পারলে নির্বাচন কমিশন শুধু বিতর্কিতই হবে না, কঠোরভাবে সমালোচিত ও নিন্দিতও হবে। গণরোষ তৈরি হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে। এমন কি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গণরোষ ক্ষমতাসীন সরকারকেও স্পর্শ করতে পারে। আরেকটি ভালো নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছি শুরুতে। সেটি ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সদ্য বিগত নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়েছে সেই নির্বাচন। এককথায় বলতে গেলে চমৎকার নির্বাচন ছিল ‘নাসিক’ নির্বাচন। সেই নির্বাচনও ছিল অংশগ্রহণমূলক ও উৎসাহ-উদ্দীপনাময়। শাসকদলের জনপ্রিয়-প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তাতে স্বস্তিদায়ক ব্যবধানে জিতেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন সৎ, সজ্জন ও অবিতর্কিত প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু টুকটাক সমালোচনা ছাড়া ওই নির্বাচনের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করেননি। তার দলের কিছু ‘গলাবাজ’ ইসি ও সরকারের মৃদু সমালোচনা করলেও দলগতভাবে বিএনপি নাসিক নির্বাচনের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো অবস্থান নেয়নি। তারা মোটামুটি স্বীকার করেছে যে, সেই নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনটি দলীয়ভাবে হলেও মেয়র পদে প্রার্থীর বিষয়টিও ভোটাররা বিবেচনা করেছে। ডা. আইভীর বিরুদ্ধে অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত ‘সমান্তরাল’ প্রার্থী ছিলেন না তা বিএনপিও জানত। অবশ্য নন-লোকাল হলেও ডা. আইভীর বিরুদ্ধে শাখাওয়াতের মতো একজন সৎ ও অবিতর্কিত প্রার্থীই প্রয়োজন ছিল বিএনপির। বিএনপি সেই নির্বাচনটি গ্রহণ করেছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে শক্তি যাচাইয়ের নির্বাচন হিসেবে। তারা বোধহয় এক্ষেত্রে সফল হয়েছে; প্রায় এক লাখ ভোট পেয়েছে তাদের মেয়র প্রার্থী। এসব ভোটই বিএনপির, ধানের শীষের। ডা. আইভী আওয়ামী লীগ ও নৌকার ভোটের বাইরেরও ভোট পেয়েছেন। তার নিজস্ব একটা ভোট ব্যাংকও আছে। যে ভোট ব্যাংকের সমর্থনে গেলোবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। আইভী নৌকার প্রার্থী না হলে ফলাফল অন্যরকমও হতে পারত। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ জিতলেও কমিশনার পদে বিএনপি আওয়ামী লীগকে টেক্কা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী কমিশনারদের ভোটের যোগফল আওয়ামী লীগের বিজয়ী মেয়রের ভোটকে চ্যালেঞ্জ করার মতো। বলতে চাইছি, নির্বাচনটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছিল বলে ফলাফল এমন হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সবাই তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এ জন্য, অর্থাৎ কার্যকালের শেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটি খুব ভালোভাবে পরিচালনার পরও রকিবউদ্দীন আহমদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কোথাও একটা প্রশংসাবাক্য উচ্চারিত হয়নি। এর কারণ, তাদের আমলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন, কয়েকটি সিটি নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপ ছাড়া বাকি সব ধাপ এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সীমাহীন কারচুপিই নয়, বলা হচ্ছে নির্বাচনী দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে প্রকাশ্যে। অপরাধীদের বুক ফুলিয়ে অপরাধ সংঘটনে জড়িত হওয়ার ও পার পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে সেই নির্বাচন কমিশন। দেশ-দুনিয়া বলেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। রকিব কমিশন বলেছে খুব সুষ্ঠু হয়েছে নির্বাচন। ভোটার উপস্থিতি নিয়েও হাস্যকর কথা বলেছে ওই নির্বাচন কমিশন। বলেছে শতকরা ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে। অনেকে রসিকতা করে বলেছেন, জিন-ভূতরা ছিল ওই হিসাবের মধ্যে। মোট কথা রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি সিটি নির্বাচনে ভালো ভূমিকা রাখার পরও মূলত দশম সংসদ নির্বাচনে মহাবিতর্কিত ভূমিকার জন্য একটি ব্যর্থ, মেরুদণ্ডহীন, দলবাজ কলঙ্কিত নির্বাচন কমিশনের দুর্নাম নিয়েই বিদায় নিয়েছে। তারা জাতির বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শুরু থেকেই সমালোচনামুখর। বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, তিনি আওয়ামী  লীগ সমর্থিত জনতার মঞ্চের সমর্থক ছিলেন। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর খালেদা জিয়ার ছবি নামিয়ে দিয়েছিলেন তার কার্যালয় থেকে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। বিএনপি দলগতভাবে না বললেও তাদের কোনো কোনো দায়িত্বশীল ‘নেতা’ স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, এই সিইসি ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। কিন্তু তার সময়ে অনুষ্ঠিত প্রথম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটি যতদূর সম্ভব নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এই নির্বাচনটি নেহাতই একটি স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন। এই নির্বাচনে হার-জিতের ওপর সরকারের উত্থান-পতন নির্ভর করে না। কিন্তু তারপরও কুমিল্লার এই সিটি নির্বাচন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই দলের ‘প্রেস্টিজ ফাইট’।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের পর সরকার পক্ষের মধ্যে একটা আত্মপ্রত্যয় জেগেছে যে, কুমিল্লায়ও তারা জিতবে। তারা নারায়ণগঞ্জে ডা. আইভীর ব্যক্তিগত প্লাসপয়েন্টগুলো বিবেচনা করেনি। ওটা ছিল আওয়ামী লীগ + (প্লাস) আইভীর সম্মিলিত শক্তির বিজয়। তাও মেয়র পদে। দলের পক্ষে রায় হলে অধিকাংশ কমিশনারও আওয়ামী লীগ থেকেই জেতার কথা ছিল। তাছাড়া আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা দেশে প্রচুর  উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, তাই জনগণ যে কোনো নির্বাচনেই তাদের পক্ষে রায় দেবে। কুমিল্লায় সাংগঠনিক শক্তি নিয়েও বড়াই আছে আওয়ামী লীগের। কিন্তু তাদের কোনো হিসাব ‘কুসিক’ নির্বাচনে মেলেনি। তারা সেখানে বিজয় অর্জন করে প্রমাণ করতে চেয়েছে তারা নিবিড়ভাবে গণসংশ্লিষ্ট, তাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দল কর্তৃক উত্থাপিত গণবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ সত্য নয়। কুমিল্লায় এত মন্ত্রী-এমপি থাকার পরও ‘কুসিক’ নির্বাচনে পরাজয় তাদের ইজ্জতবিনাসী হবে বলে ভেবেছিল সরকার পক্ষ। সরকারি দল সেখানে সরকারি ও দলীয় সম্ভাব্য সব শক্তিই ব্যবহার করেছে। বিএনপিও ‘ইজ্জতের সওয়াল’ হিসেবে নিয়েছিল এ নির্বাচনকে। তারাও দলের সম্ভাব্য সব শক্তি কাজে লাগিয়েছে। সবচেয়ে বড় যে কাজটি হয়েছে, কুমিল্লায় দ্বিধাবিভক্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করা গেছে। নির্বাচনের দুই দিন আগে পার্টি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ মনিরুল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে রহস্যজনকভাবে মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার ঘটনা ছাড়া আর কোনো সাংগঠনিক বিপর্যয় বিএনপিতে হয়নি। অবশ্য নারায়ণগঞ্জে লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতো কুমিল্লা সিটিতে জেতার পেছনে মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত ইমেজও কাজ করেছে। এর আগেরবার সাক্কু স্বতন্ত্রভাবে মেয়র পদে নির্বাচন করে জেলা সভানেত্রী রাবেয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিনের সরাসরি বিরোধিতা গুঁড়িয়ে দিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিজস্ব একটা ভোটব্যাংকও আছে।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। নির্বাচন কমিশনের আচরণে তারা উভয়পক্ষই নেতিবাচক কথাবার্তা বলেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম প্রকাশ্যেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে বিএনপির কোনো কোনো নেতাও জনগণকে এমন একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, সিটি নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে না। প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নেতিবাচক বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। হতে পারে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য তারা তা করেছে। নির্বাচন কমিশন যে তাদের আস্থায় নেই তা প্রকাশ পেয়েছে বারবার। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের ওপর এখনো কোনো দোষারোপ না করলেও দলীয় কোন্দলের কথা বলছে। বিএনপি বলছে ভোট যদি আরও সুষ্ঠু হতো তাহলে তারা আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিততে পারত। এটা আবার নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলছেন না, বলছেন ‘ঢাকাইয়া নেতারা’। সাক্কু একজন দক্ষ রাজনীতিকের মতো ভোটের পরদিনই বলেছেন, এখন আর এসব ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলবেন না। বিজয়ী প্রার্থীর যথার্থ বক্তব্যই তিনি দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন কুমিল্লার নির্বাচনে কী আচরণ করেছে তা ঢাকার ‘বাবুদের’ চেয়ে প্রার্থী বেশি দেখেছেন ও অনুভব করেছেন। সরকার পক্ষ কী চেয়েছিল তা স্পষ্ট হয়েছে মন্ত্রী পর্যায়ের একজন উপদেষ্টার নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকাকে কটাক্ষ করে প্রদত্ত বক্তব্যের মাধ্যমে। বিএনপি প্রার্থীর কর্মী হয়রানির ও গ্রেফতারের বিরুদ্ধে একজন ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহারের পরই সরকারি দলের কারও কারও গায়ে জ্বালা ধরে। অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসির সুপারিশে আরও প্রায় দুই ডজন ব্যক্তিকে অপসারণ করা হয়। বোঝাই যায় সরকারি দল নির্বাচনে কী করতে চেয়েছিল। কুমিল্লার দুই মন্ত্রী সম্পর্কেও অভিযোগ আছে। তবে আশা ও ভালোলাগার কথা হচ্ছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের পরামর্শ সরাসরি অগ্রাহ্য করার সাহস দেখিয়েছেন বলে মিডিয়া কর্মীদের মুখে শোনা গেছে। নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে যে দৃঢ় ভূমিকা দেখিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে সততা ও আন্তরিকতাপূর্ণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে পরবর্তী নির্বাচনসমূহে, বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই ভূমিকা পালন করলেই ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টে যাবে। তখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও বাদানুবাদ দুর্বল হয়ে যাবে।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ যে দলীয় কোন্দলের তর্ক উত্থাপন করেছে তা নেহায়েতেই মুখ রক্ষার কৌশল। ইজ্জতের লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার একটা জ্বালা তো আছেই। স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে তারা অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে চায়। তাহলে মন্ত্রী লোটাস কামালের এলাকায় লীগ প্রার্থী হারলেন কেন? কুমিল্লা শহরে বিএনপি সমর্থকের সংখ্যা বিপুল তা অতীতে প্রমাণিত। ৫৫ হাজার সংখ্যালঘু আর ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের গল্প শুনিয়ে আওয়ামী লীগ নিজের ক্ষতি নিজে করেছে। সংখ্যালঘু ভোটাররা কারও সমর্থক হতে পারেন, কিন্তু দাস নন। তারা স্বাধীন। সাক্কুর রাজনৈতিক গুরু কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন আওয়ামী লীগের ‘সংখ্যালঘু ভোটপাড়া’ ভেঙে দিয়েছেন। কর্নেল আকবরের একটা নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাংক ছিল তার ব্যক্তিগত বহু সংখ্যালঘু বন্ধুর নেতৃত্বাধীন সেসব ভোট। কুমিল্লার তরুণদের ওপর পুনর্নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর প্রভাবের বিষয়ও বিবেচনা করেনি শাসক দল। এ ৯৩ হাজার ভোট আওয়ামী লীগের হলে তারা ৫৮ হাজার ভোট পেলেন কেন? তাদেরতো লক্ষাধিক ভোট পাওয়ার কথা। কুমিল্লা সিটি নির্বাচন বলছে, সংখ্যালঘু আর নতুন প্রজন্ম হলেই নৌকার ভোট এটা এখন আর বলা বোধ হয় ঠিক নয়। দলের ভিতরকার কিছু সমস্যা বিএনপি প্রার্থীও মোকাবিলা করেছেন। মনিরুল হক চৌধুরীর কথা উল্লেখ করেছি। জনপ্রিয় আরও দু-একজনও বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু যেহেতু নির্বাচন হয়েছে নৌকা আর ধানের শীষে তাই ওইসব ফ্যাক্টর কাজ করেনি। সঙ্গে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ক্যারিশমাতো ছিলই। বিএনপির কোনো কোনো নেতা কুসিক নির্বাচন নিয়ে এখনো যেসব নেতিবাচক কথাবার্তা বলছেন তাদের উচিত সামনের দিকে তাকানো। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করা যায় সে চেষ্টা করা। লেখা শেষ করব নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ দিয়ে তাদের দৃঢ় ভূমিকার জন্য। স্বীকার করব প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইচ্ছার কথা। তিনি চেয়েছেন বলেই কুসিক নির্বাচনও নাসিক নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ফলাফল যা হওয়ার গণপ্রত্যাশা অনুযায়ী তাই হয়েছে। খুঁত বের করে তা নিয়ে কূটতর্ক মানুষের বিরক্তির কারণ হবে।

            লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

            ই-মেইল : [email protected]        

সর্বশেষ খবর