সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠবে

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আসন্ন রাষ্ট্রীয় সফর এখন বাংলাদেশের রাজনীতি ও মিডিয়ার অন্যতম আলোচনার বিষয়। একইভাবে ভারতেও এটা নিয়ে অনেক লেখালেখি ও আলোচনা চলছে। সবাই এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তাই এটা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন। ৭-১০ এপ্রিল এ সফরের সময়সূচি নির্ধারিত আছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নবযাত্রার সূচনা হয়। তারপর সাত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং ২০১৫ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে তলানিতে চলে গিয়েছিল সেখান থেকে গত সাত বছরের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন গতি ও মোমেন্টামে নবদিগন্তের পথে চলমান। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ২০১০ পর্যন্ত ৩৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে যা হয়নি গত সাত বছরে তার থেকে অনেক বেশি হয়েছে। সহযোগিতার ক্ষেত্র, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ এবং কানেকটিভিটির প্রসার ও বিস্তার ঘটেছে বহুগুণ। এ সময়ে শুধু ভারত নয়, এশিয়ার অপর দুই বড় শক্তি চীন ও জাপানের সঙ্গেও বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নত হয়েছে। তাতে এশিয়া অঞ্চলের তিন পারস্পরিক প্রতিযোগী রাষ্ট্রের সঙ্গে একই তালে বাংলাদেশ লক্ষণীয় মাত্রায় সম্পর্ক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। এখানেই শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত সফলতার পরিচয়। তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা বিশেষ গুরুত্ব ও জায়গা রয়েছে। বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মানুষের রক্তের মিশ্রণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সম্প্রতি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া হাউসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের স্মৃতি আমরা ভুলতে পারি না। বাংলাদেশের উন্নয়ন ছাড়া ভারতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সফল। ভারতের জনগণ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তিনি পাবেন অনন্য সম্মান।’ আলোচ্য সফরের সময় দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক ২০-২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। তবে তিনটি ইস্যু, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির কী হবে এবং চীন-বাংলাদেশের চলমান সম্পর্ক ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়েই প্রধানত দুই দেশের মিডিয়া ও সুধী সমাজে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রথমত, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টি বিশ্ব অঙ্গনে এবং বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সময়ের ব্যবধানে ও প্রয়োজনে এই সহযোগিতা ক্ষেত্রের বিস্তৃতি ও প্রকার ভেদের তারতম্য দেখা যায়। বিশ্বে বর্তমান সময়ে সামরিক সহযোগিতার যে চিত্রটি রয়েছে তার ওপর একটু নজর দিলে বাস্তবতটা সহজে বোঝা যাবে। এ সময়ের বড় সামরিক জোট ন্যাটোর সরাসরি সদস্য সংখ্যা ২৮। ন্যাটোর সঙ্গে জোটবদ্ধ নয়, তবে আরও বৃহত্তর আমব্রেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সামরিক সহযোগিতা সংস্থার নাম অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। ন্যাটোর ২৮টি দেশসহ মোট ৫৬টি দেশ এ সহযোগিতা সংস্থার সদস্য। তারপর ইউরোপের বাইরে থেকে আরও ১৫টি রাষ্ট্র ওএসসিই-এর ৫৬টি দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক কাঠামোর আওতায় যুক্ত। অর্থাৎ ন্যাটো এবং তার আউটরিচ কর্মসূচির আওতায় ভিন্ন ভিন্ন চুক্তি ও মর্যাদার ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে সামরিক সহযোগিতায় যুক্ত আছে মোট ৭১টি রাষ্ট্র। সব দেশের নাম এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে এ প্রান্তে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। অন্যদিকে ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত নয়টি দেশ নিয়ে ২০০২ সালে রাশিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে সামরিক সহযোগিতামূলক কাঠামো কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও)। ইরানসহ আরও অন্য ছয়টি দেশ এ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আবার সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সংস্থার চীন-রাশিয়াসহ ছয়টি পূর্ণ সদস্য এবং পর্যবেক্ষক ও ডায়ালগ সদস্য হিসেবে আছে ভারত, পাকিস্তানসহ আরও আটটি দেশ। জঙ্গিবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এ সংস্থাটি গঠিত হয় ২০০১ সালে। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলো আঞ্চলিকভাবে যেমন সমমনা দেশসমূহ একত্রে সামরিক সহযোগিতায় যুক্ত আছে, তেমনি অনেক রাষ্ট্র এককভাবে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারতের সঙ্গেও সামরিক সহযোগিতায় জড়িত। ল্যাটিন আমেরিকায় কিউবা, ভেনেজুয়েলাসহ আটটি দেশের সামরিক সহযোগিতা সংস্থার নাম বলিভারিয়ান ব্লক। আফ্রিকায় আছে অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটি, যার ব্যানারে কেনিয়াসহ কয়েকটি দেশের সেনাবাহিনী বর্তমানে সোমালিয়ায় জঙ্গি সংগঠন আল শাবাবের বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়োজিত আছে। উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের দিকে তাকালে বোঝা যায় অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সামরিক খাতের বেলায়ও বিচ্ছিন্ন থেকে একলা চলার দিন নেই। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। সামরিক জোট বা প্যাক্ট আর সহযোগিতা সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন বিষয়। ন্যাটো, পূর্বের ওয়ারশ প্যাক্ট এবং অধুনা বিলুপ্ত সিয়েটো, সেন্টো, এগুলো সামরিক জোটের উদাহরণ। এর বাইরে একটু আগে যে সংস্থাগুলোর কথা উল্লেখ করেছি, সেগুলো সামরিক সহযোগিতার উদাহরণ। চীনের সঙ্গে রয়েছে আমাদের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক, জোট নয়। বাংলাদেশের জন্য সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি নতুন নয়। স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারের সময়ই ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং পরবর্তীতে চীনের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার সহযোগিতা অব্যাহত আছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রটি বর্তমানে যেখানে আছে তার চাইতে ভারতের সঙ্গের ক্ষেত্রটি এখনো অনেক ক্ষুদ্র। তাই প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে সহযোগিতার ক্ষেত্রটিকে আরও কিছুটা প্রসারিত ও বিস্তৃত করার সম্ভাবনার কথা মিডিয়ার মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে।

কৌশলগত কারণে সামরিক সরঞ্জামাদির সাপ্লাই সোর্স কখনোই একটি দেশের ওপর নির্ভরশীল বা একমুখী হওয়া মোটেই ঠিক নয়। তাই সাপ্লাই সোর্সকে বহুমুখীকরণের জন্য চীনের মতো একই রকমের সহযোগিতা ভারতের সঙ্গে থাকলে কোনো ক্ষতির কারণ নেই, বরং সেটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। কেউ কেউ বলছেন, ভারতের সরঞ্জামাদির মান চীনের সমকক্ষ নয়। তাহলে তো এ কথাও ঠিক ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করলে চীনের মান এখনো অনেক নিম্নমানের। মনে রাখা দরকার সামরিক সরঞ্জামাদি আমরা ইচ্ছা করলেই যে কোনো দেশের থেকে কিনতে পারব না। আর সব দেশ আমাদের কাছে তা বিক্রয় করার জন্য রাজিও হবে না। সর্বোপরি আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টি তো রয়েছেই। একেবারে সরাসরি নিকট প্রতিবেশী, তারপর সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, জাতিগত বন্ধন এবং সম্পর্ক বর্তমান সময়ে যে উচ্চতায় উঠেছে তা বজায় থাকলে এবং এ অবস্থায় ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক সাশ্রয়ী হবে, আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির সমীকরণে আমাদেরকে শক্তিশালী করবে।

নিরাপত্তার প্রধান হুমকি সশস্ত্র জঙ্গি দমনে বিশাল ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, আরও বৃহত্তর দৃষ্টিতে উপমহাদেশকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদের উত্থান ঠেকাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়— এই মৌলিক নীতিতে বিশ্বাসী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন একটি জোট বা একটি মাত্র রাষ্ট্রের বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশকে তিনি নিবেন না। তারপর দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার মতো রাজনৈতিক সৎ সাহসের প্রমাণও শেখ হাসিনা রেখেছেন। ২০০০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ৫০ বছরের গ্যাস রিজার্ভ নিশ্চিত না করে বাংলাদেশ গ্যাস রপ্তানি করবে না। দেশের স্বার্থ রক্ষায় সেদিন তিনি কত বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন তা এখন সবারই জানা। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য আস্থা রাখার মতো দৃশ্যমান কাজ করেছেন এমন নেতৃত্বের প্রতি ভরসা রাখা আবশ্যক। চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন ভাবনা বাস্তবতার সঙ্গে মিলে না। প্রসঙ্গত, ভারতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা চীনের সমান নয়, এটা ভারতও বোঝে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ যত সমৃদ্ধ হবে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, সেটি একই মাত্রায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সার্বিকভাবে জঙ্গি দমনে সহায়ক হবে। অন্যদিকে ২০৩০ সাল নাগাদ অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যেখানে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে সেটি এবং তার সঙ্গে বিশাল ও অফুরন্ত সমুদ্র সম্পদ যে কোনো আগ্রাসী শক্তির জন্য নিঃসন্দেহে ঈর্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা এমন একটা পর্যায়ে থাকা বাঞ্ছনীয় যাতে যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যেন কার্যকর একটা ডেটারেন্স বা নিরোধক ব্যবস্থা তৈরি হয়। ভারত ও চীনের মধ্যে সীমানা দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা থাকলেও দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং বুদ্ধিজীবী সমাজ অনেক পরিপক্ব, তারা ভালো করে জানেন অন্য কোনো শক্তির প্ররোচনায় এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হলে তাতে চীন ও ভারতের সমানভাবে অসহনীয় ক্ষতি হবে। পশ্চিমা বিশ্ব ইরাক-ইরান যুদ্ধ উসকে দিয়ে কীভাবে ইরাককে ধ্বংস করেছে, আবার চীন-সোভিয়েত দ্বন্দ্ব বাধিয়ে কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে দিয়েছে সেটি উপলব্ধি করার মতো বিচক্ষণতা ভারত ও চীন দুই পক্ষেরই আছে। সুতরাং চীন ও ভারতের সঙ্গে সমানতালে সম্পর্ক বজায় রাখলে তাতে কোনো দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হবে না, বরং তা হতে পারে আঞ্চলিক শান্তি ও সহযোগিতার অনুঘটক। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয় সামান্য একটু আলোকপাত করেই লেখাটি শেষ করব। তিস্তা নদীর পানির হিস্যা বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা। নিজেদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতকে এটা দিতে হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং সুশীল সমাজ এটা উপলব্ধি করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলাদেশের জামায়াতের অনুসারী উগ্রবাদী সাপের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য যে কতবড় হুমকি সে কথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিজেই উল্লেখ করেছেন। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিজেপির ক্ষমতা যেভাবে ক্রমশ সুদৃঢ় হচ্ছে তাতে নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশীর কাছে ক্রেডিবিলিটি রক্ষার জন্য হলেও নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন। তাই নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। হয়তো কিছু সময়ের ব্যাপার। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের ক্ষেত্র ব্যাপকভাবে প্রসারিত ও বিস্তৃত হলে জনগণ এবং (স্টকহোল্ডারদের প্রভাবে শুধু তিস্তা নয়, অন্য যে কোনো জটিল সমস্যার সমাধানও সহজ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের একটি বড় পক্ষ, একটি মিডিয়া হাউস এবং এদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে এমন কিছু ভারতীয় ব্যক্তিবর্গ ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ককে বিনষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু সেটি তারা পারবে না। উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে দুই দেশের কম্পালশন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিঘন পরিবেশের পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যে সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, পথিমধ্যে অনেক উত্থান-পতনের পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ও ভারতের শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে সম্পর্ককে পূর্ণতায় নিয়ে যাবেন। তাই আশা করা যায় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও এক ধাপ উচ্চতায় উঠবে।

লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

নিউ অরলিনস, ইউএসএ।

সর্বশেষ খবর