মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাকে বড় বেশি মনে পড়ে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মাকে বড় বেশি মনে পড়ে

আজ মা’র মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল আমাদের মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। দেখতে দেখতে কত বছর হয়ে গেল। কীভাবে সময় চলে যায়। মনে হয় এই সেদিন বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মায়ের পায়ের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখতে দেখতে যুগ পার হয়ে গেল তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সৌভাগ্য মা’র মৃত্যুবার্ষিকীতে পর্বটি পড়েছে। সব ভাই-বোন হয়তো আজ মা-বাবার কবরে যাবে না। কানাডা থেকে ছোট বোন শুশু এসেছে, ও যাবে। বেগমকে নিয়ে আমিও যাব। কুড়ি ইংল্যান্ডে, দীপ-কুশিও যেত কিন্তু কুশির পরীক্ষা, তাই ওরা ভাই-বোন যেতে পারবে না। আমরাই কবরের পাশে মসজিদে বাদ আসর মিলাদ পড়ব। মা’র ইচ্ছায় ছাতিহাটি বাবার পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। আমিও আশা করি, মা-বাবার পায়ের কাছে আমার একটু জায়গা হবে। মা শুধু আমাদের জন্য, রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য সারা জীবন ভীষণ কষ্ট করেছেন। প্রিয় পাঠক, দয়া করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন আমাদের বাবা-মাকে যেন দয়াময় প্রভু ক্ষমা করেন, তাদের বেহেশতবাসী করেন।

আমি আর পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাই না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার জন্য আওয়ামী লীগ ছেড়েছি, অনেক গালাগাল শুনেছি, কালো পতাকা দেখেছি, রাজাকারের আখ্যা পেয়েছি। তবু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা হয়েছে। সেটাই বড় কথা। পুলিশ, মিলিটারি, বেসরকারি কর্মচারী চাকরিতে বেতন ও অবসরে ভাতা পান। তাহলে মুক্তিযোদ্ধারা কিছু সম্মানী পেলে অসুবিধা কোথায়? এখন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। যদি সম্মানই দেবেন একজন মুক্তিযোদ্ধা তার পরিবার নিয়ে যাতে সম্মানে থাকতে পারে সেরকম অন্তত ৫০ হাজার টাকা দিন। সরকারি কর্মচারীদের যেমন বছর বছর বেতন বাড়ানো হয়, তাদেরও সেরকম সম্মানী বাড়ান। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার শেষ পর্যন্ত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীর ব্যবস্থা করেছেন। যেটা স্বাধীনতার পরপরই করা উচিত ছিল। ‘সাহসী খেতাব’ কোনো ফেলনা নয়। এক ক্লাসে শতজন পরীক্ষা দেয়, প্রথম হয় একজন। খেতাবও ঠিক তেমনি। খেতাবপ্রাপ্তরা ভালো আছে কী মন্দ, তা দেখার বিষয় নয়, সরকার, দেশ তাদের কতটা সম্মান দেখাচ্ছে সেটাই বিবেচ্য। কয়েক লাখ যোদ্ধা যুদ্ধ করেছে, তার মধ্যে খেতাব পেয়েছেন ৬-৭শ। গুণ বা যোগ্যতা না থাকলে তারা তা পেতেন না। পৃথিবীর সব দেশে ভালো কাজের পুরস্কার আছে। এখনো কত পুরস্কার দেওয়া হয়— স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পুরস্কার আরও কত কী। যারা মুক্তিযুদ্ধে অহংকার করার মতো কাজ করেছেন, সম্মান পেয়েছেন তাদের সম্মানী দিতে কৃপণতা হবে কেন? জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেই যুক্তিযুক্ত কাজটিই করেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোনো এক সাবেক সচিব রাজাকারের সন্তান মহাপণ্ডিত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার প্রশ্নে সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলে দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত এবং খেতাবপ্রাপ্ত এই তিনটির যে সম্মানী পরিমাণে বেশি তিনি শুধু সেই বেশিটিই পাবেন। মানে সচিব সাহেব সরকারের থেকে বড়, সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার থেকে বড় বা অনেক বেশি ক্ষমতাবান।

বেশ কিছু বছর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানী দেওয়া শুরু হয়েছে। আমি দুই হাজার টাকা সম্মানী দাবি করেছিলাম অনেক বছর আগে। তখন দুই হাজার টাকায় একটা পরিবার যেভাবে চলত এখন ৫০ হাজার টাকায়ও সেভাবে চলতে পারবে না। যদিও মহামহিম সরকার ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের এখন ১০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু এখনকার ১০ হাজার তখনকার পাঁচশ টাকার সমানও না। স্বাধীনতার পরপর মাননীয় মন্ত্রীদের বেতন ছিল দুই হাজার। এখন লাখ টাকা। তখন দুই হাজার টাকায় তারা যেভাবে চলতেন এখন লাখ টাকায়ও সেভাবে চলতে পারেন না। সে জন্যই সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দর-দামের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না। তাই আন্তরিকভাবেই সাধুবাদ জানাই। কিন্তু নানা অসঙ্গতি মুক্তিযোদ্ধাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। সবার মনে রাখা দরকার- এক ফুল গাছে ফুলের বাগান হয় না, এক দলে দেশ চলে না। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো যে পূর্ণাঙ্গ নয় এটা শতসিদ্ধ সবার জানা। এটা দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, জাতীয় দৃষ্টি নিয়ে আন্তরিকভাবে এর সমাধান করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বিরক্ত হয়ে গালাগাল করলে যারা সারাদিন কড়কড়ে রোদে পুড়েন তারা কী করবে? ধৈর্য মস্তবড় শক্তি। ধৈর্যের চেয়ে বড় কিছু নেই। আর আচার-ব্যবহারে বংশ পরিচয়। কত মানুষ কত আশা নিয়ে আসে তাকে হেয় বা ছোট করা কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাজ নয়। তাদের গালাগাল করা তো নয়-ই, রাজাকার-আলবদর-আলশামসে নাম নেই এমন মানুষকে সব সরকারের সবসময় সম্মান করা উচিত। তারা প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ না করলেও অন্তত মুক্তিযোদ্ধাদের ছায়া মাড়িয়েছেন। তাই প্রবীণদের ছোট করা উচিত নয়।

যখন যৌবন ছিল, ছোট ছিলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তখন কিছুটা গৌরববোধ করতাম। কেন যেন সেই গৌরবও ফিকে হতে চলেছে। যে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি, সেই দেশ এখন খুব একটা ভালো নেই। দেশ ভালো থাকুক, ভালো চলুক একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সে জন্য মনটা যে কতটা আকুলি-বিকুলি করে কাউকে বলে কয়ে বোঝাতে পারব না। সারা জীবন দেখেছি মুমূর্ষু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায়। র‌্যাবের পরিচালক কর্নেল আজাদকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে সিএমএইচে রাখা হয়েছিল। মানে তিনি নেই চলে গেছেন, তবু সময়ের আগে বলা যাবে না। সেদিন কুমিল্লা নির্বাচন হলো। এতকাল শুনেছি পরাজিত প্রার্থী নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এবার বিজয়ী প্রার্থী অভিযোগ এনেছে। তার কথা একেবারে ফেলে দিলে চলবে না। চিন্তা করা দরকার। আরও চিন্তার বিষয়, ৭ তারিখ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত যাবেন। কী পাবেন তা তিনিই জানেন। কারণ দেশ পরিচালনায় দেশের মালিক জনগণ কিছুই জানে না। সব কিছু অবাক করার মতো! মুক্তিযুদ্ধে ভারত ছিল আমাদের প্রথম এবং প্রধান বন্ধু। নানা কারণে ভারত এখন সেই অবস্থানে নেই। তেমন থাকার সুযোগও নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময়, চীন, আমেরিকা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। সেই চীন-আমেরিকা এখন আমাদের কাছে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ। দক্ষ যোগ্য অভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী কী করবেন তা তিনিই জানেন। তবে কোনো সামরিক চুক্তি করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেটা খুবই অস্বস্তির হবে। স্বাধীনতার পরপর ২৫ বছরের ভারত-বাংলাদেশ শান্তি ও সহযোগিতা চুক্তি হয়েছিল। ওপেন চুক্তিকে গোপন বলে কত বদনাম করা হয়েছিল। এত বছর পর যদি সত্যি সত্যি কোনো সামরিক চুক্তি হয় সেটা কেমন হবে, বলা মুশকিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভেবেচিন্তে পা ফেলবেন। আমাদের পরামর্শের দরকার হবে না।

 

 

গত পর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সমস্যা অনেক। সমাধান খুব কঠিন নয়। কিন্তু সমাধানের ক্ষমতা থাকতে হবে। সেটাই বড় কথা। যাদের হাতে দায়িত্ব তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে এমন হবে কেন? একটা ভালো তালিকা হওয়া দরকার। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে যত্রতত্র অভিযোগের অবসান হওয়া উচিত। কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সন্দেহ করলে প্রমাণের দায়িত্বও তার থাকা উচিত। যদি তিনি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, অভিযোগ মিথ্যা হয় অভিযোগকারীর যাবজ্জীবন না হোক ১০ বছর তো হবে। তেমনটা তো আশা করতেই পারি। এখন স্বাধীনতাবিরোধীরাও যেখানে সেখানে হুটহাট বলে, অমুক মুক্তিযোদ্ধা নয়। ভুয়া। ব্যাপারটা বেদনাদায়ক, বিব্রতকর ও বড়ই অশান্তির। বর্তমানে জঙ্গি তত্পরতা সম্পর্কে কে কতটা জানে? এখন তো তবু সরকারকে সাবধানে রইয়ে-সইয়ে চলতে হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের কোনো ব্যাপারে সাবধানে চলতে হয়নি। যাকে খুশি যখন খুশি ধরে নিতে পারত, গুলি করত। মুক্তিযোদ্ধা হওয়া অত সহজ ছিল না, যার তার জানার কথাও ছিল না। এখন ভদ্রলোকরা কী করে জানে অমুক মুক্তিযোদ্ধা অমুক মুক্তিযোদ্ধা নয়। কারণ কেউ তো কাউকে বলে-কয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি? আর শুধু মুক্তিযোদ্ধা হলেই যে বিপদ তা নয়। কেউ যদি কারা মুক্তিযোদ্ধা এটা জেনে সরকারকে না জানাত তা হলেও তার সাজা হতো। তাই এখন যে কারও অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করা ঠিক নয়। কিছুদিন আগে মন্ত্রীর সহায়তায় এমন এক ঘটনা মোকাবিলা করেছি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেই তিনশ টাকা থেকে নিয়মিত ভাতা পেয়ে এসেছেন। তিনি মারা গেলে তার স্ত্রী উত্তরাধিকার হিসেবে প্রায় চার-পাঁচ বছর পেয়েছেন। হঠাৎ কে বলেছে, তার লাল-নীল খাতা নেই, তাই ভাতা পাবে না। যা কাগজপত্র ছিল সব নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দালালের হাতে দিয়েছে। এখন সেই কাগজপত্রেরও খবর নেই। সব গায়েব। এখন খবর দালালকে ৫০ হাজার টাকা দিলে আর কোনো অসুবিধা নেই। টাকা না দিতে পারায় দুই বছর ভাতা বন্ধ। অথচ সরকারি কোষাগার থেকে এই দুই বছরের টাকা সমাজকল্যাণে গেছে, সেখান থেকে ব্যাংকে জমা হয়েছে। এরকম প্রতারণা এবং বিড়ম্বনা যে কত হচ্ছে বলে-কয়ে শেষ করা যাবে না।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের ভাতা বা সম্মানী শুরু হয়েছিল সেই ’৭৩-এর জানুয়ারিতে। যুদ্ধাহত ৭৫ এবং শহীদ পরিবার ১০০ টাকা। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ভাতা ছিল না। সেটাও বর্তমান সরকার ৮-১০ বছর আগে শুরু করে। এখন যেটা ১০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। প্রায় বছর দুই হয় খেতাবপ্রাপ্তদেরও সম্মানী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে খেতাবপ্রাপ্তদের স্বাধীনতার পরপরই সম্মানী দেওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও সেই উচিত কাজটি খুবই প্রশংসনীয়। তবে এখানেও ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়া হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত বা গেজেট হয়েছে, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত, সর্বোপরি খেতাবপ্রাপ্তদের সম্মানী। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, এক রাজাকারের ছেলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নির্দেশ জারি করেছেন- মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্তের মধ্যে যে ভাতার পরিমাণ বেশি শুধু সেই একটাই একজন পাবেন। ছেলেবেলায় শুনেছিলাম, শিয়াল পণ্ডিতের বুদ্ধি বেশি, এখন দেখছি রাজাকারের পুত্রের বুদ্ধি তারচেয়েও বেশি। যারা যুদ্ধাহত তারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবেন না। কারণ যুদ্ধাহত ভাতার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা কম। যুদ্ধাহত যারা তারা যদি খেতাবপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন বেশিসংখ্যক খেতাবপ্রাপ্তরা ভাতা পাবেন না। কারণ কোনো কোনো খেতাবপ্রাপ্তের  চেয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় সম্মানী বেশি। তাহলে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিল খেতাবপ্রাপ্তদের সম্মানী দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত মাঠেমারা যাবে। জানি স্বাধীনতার পক্ষে খুব বেশি লোক ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সরকার হলেই সব আমলা স্বাধীনতার পক্ষে এটা ভাবার কারণ নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাচ্ছন্দ্য দেখলে তাদের বুকে জ্বালা করে। সরকার যা কিছুই করতে চান ডালপালারা কোনোক্রমেই সহজে তা করতে দিতে চান না। কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র নেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের কথা পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে চালিয়ে দেওয়া হলো। ’৭২-এর পর বঙ্গবন্ধু কতবার বলতেন, সব মুক্তিযোদ্ধার না পারি, যারা খেতাব পেয়েছে তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেব। প্রত্যেককে শ্রেণিমতো বাড়ি দেব, আজীবন সরকারি খরচে গাড়ি দেব, বাড়ি দেখাশোনার জন্য লোক দেব, সম্মানজনক সম্মানী দেব। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করলে আমি কারাগার থেকে ফিরতে পারতাম না। তার কথামতো টাঙ্গাইল ক-৩ জিপ বাবর রোডের বাড়ি, প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা দিতেন, কীভাবে দিতেন জানি না কিন্তু দিতেন। আজ সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কী দুর্দশা! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগী হয়ে সম্মানী বরাদ্দ করেছেন। সরকারি খরচে এখনো বাড়ি-গাড়ি, দেখাশোনার জন্য লোকজনের ব্যবস্থা করেননি তাতেই কত জিলেপির প্যাঁচ। সরকার খেতাবপ্রাপ্তদের সম্মানী দিয়েছে, মন্ত্রণালয় অথবা মন্ত্রণালয়ের কোনো সচিবের ইচ্ছায় সে সিদ্ধান্ত যদি অকার্যকর হয় তাহলে ক্ষতি কার? মুক্তিযোদ্ধাদের, নাকি যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের? সেখানে আবার গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নামে দুবার খেতাব আছে। সেখানে বলা হয়েছে একটি খেতাবের পাবেন, দুটির পাবেন না। কেন তেমন হবে? যদি ভুল করে একজনের নাম দুবার উঠে থাকে তাহলে তা সংশোধন করুন। আর যদি ভুল না হয়ে থাকে দুটি ঘটনার জন্য দুবার খেতাব পেয়ে থাকেন তাহলে তিনি দুবারই সম্মানী পাবেন। একজন শিক্ষার্থী দুই বিষয় এমএ করলে তাকে যদি ডাবল এমএ বলা যায়, তিন বিষয় করলে ট্রিপল এমএ হয়, তাহলে খেতাবের ক্ষেত্রে কেন হবে না? মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী এবং কোনো মুক্তিযোদ্ধা আহত হলে যুদ্ধাহত সম্মানী ও সর্বোপরি তিনি যদি খেতাবপ্রাপ্ত হন, সে সম্মানী একসঙ্গে পাবেন- এতে কোনো বাধা থাকার কারণ দেখি না। কিছু পণ্ডিতের কারণে রাষ্ট্রের অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীর ক্ষেত্রেও তাই। যেহেতু তিনটি বিষয়ই সম্পূূর্ণ আলাদা। একজন মুক্তিযোদ্ধা না হলে তিনি যুদ্ধাহত হতেন না। আর খেতাব সে তো আরও বড় কথা। তখন ফাঁকিঝুঁকির সুযোগ ছিল না। যারা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তারা খেতাব পেয়েছেন। এ নিয়ে যদি কারও কোনো আফসোস থাকে, তারা অপেক্ষা করুন। আবার কোনো জাতীয় দুর্যোগ এলে না পালিয়ে তারাও সাহসিকতার পরিচয় দেবেন, দেখবেন তারাও খেতাব পেয়েছেন। অযথা মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্কিত করবেন না।      লেখক : রাজনীতিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর