বাংলাদেশ বিমানের সব ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিমানকে জরুরি সেবা ঘোষণা করে ছয় মাসের জন্য এ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে সভা সমাবেশ মিছিল মিটিং ধর্মঘটে বাদ সাধা হয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে। বিমানের সব চাকরি জরুরি সেবার আওতায় নেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে কর্মীদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেওয়া দায়িত্ব পালন করতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বিমানের দুটি ট্রেড ইউনিয়ন ও তিনটি শ্রমিক সংগঠনের যথেচ্ছতা বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কথায় কথায় ধর্মঘট মিছিল মিটিংয়ের প্রবণতা এবং সিবিএ নেতাদের ডিউটি না করেও বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ঐতিহ্যে হাত দেওয়া হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে— ১৯৫৮ সালের এসেনসিয়াল সার্ভিস অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতাবলে বিমানের কর্মীদের চাকরিকে জরুরি সেবার আওতায় আনা হলো। কোনো কর্মী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেওয়া দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। স্মর্তব্য, এ নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন বিমান শ্রমিক লীগ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিমান শ্রমিক লীগ নেতাদের হাতে জিম্মি। কাজ না করেই তারা বেতন-ভাতা, ওভার টাইমের সুযোগ ভোগ করেন। বিমানের সব পদোন্নতিতে থাকে অতি ক্ষমতাধর শ্রমিক নেতাদের হাত। সোনা চোরাচালানসহ নানা অপকর্মেও শ্রমিক সংগঠনের ক্ষমতাধর নেতাদের সংশ্লিষ্টতাও ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশ বিমানকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পেছনে ট্রেড ইউনিয়ন সংশ্লিষ্টদের অবদান বেশি। কাজের বদলে তারা লুটেপুটে খাই-কে নীতি হিসেবে বেছে নেওয়ায় লোকসানের কবল থেকে বিমানকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। শ্রমিক নেতাদের প্রায় সবাই কোটিপতি বনেছেন ট্রেড ইউনিয়ন নামের আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে। ইতিমধ্যে ১৭ জন প্রভাবশালী ট্রেড ইউনিয়ন নেতার ফাইল তলব করেছে দুদক। আরও ১১ জনের ফাইলও তলব করা হবে। বিমানকে লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র থেকে উদ্ধারের চেষ্টায় এর সব কার্যক্রমকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা আশা করব বিমানে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বস্তরে জেঁকে বসা ‘থিফ অব বাগদাদ’ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।