শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোরআন তেলাওয়াতে শান্তিময় জীবন লাভ করা যায়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

কোরআন তেলাওয়াতে শান্তিময় জীবন লাভ করা যায়

মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন— আল্লাহ ইমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদের পরিশোধন করেন এবং  তাদের কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সূরা আলে-ইমরান : ১৬৪)।  আলোচ্য আয়াতে মহান রব্বুল আলামিন নবী প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মহানবী (সা.)-এর প্রেরণ উম্মতের ওপর আল্লাহর এক বিশাল নেয়ামত। মানুষ যদি শুধু দুনিয়ার পেছনে না পড়ে এক আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কে চিন্তা করত তাহলে বিষয়টি অতি সহজে বোধগম্য হতো যে, হজরত রসুলে আরাবি (সা.) কেয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতের জন্য কত বড় নেয়ামত। তিনি মুমিন বান্দাদের আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান। যাতে মুমিনদের ইমান আরও বাড়তে থাকে। অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে— যারা ইমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় আয়াতসমূহ তখন তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (সূরা আনফাল : ০২)। বস্তুত পবিত্র কোরআন এমন এক আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব যে কিতাবের প্রতিটি সূরা, আয়াত, শব্দ ও হরফের মধ্যে অসংখ্য অগণিত সওয়াব রয়েছে। যেমন আলিফ, লাম, মিম। এখানে আরবিতে তিনটি হরফ রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি এ তিনটি হরফ পাঠ করে বা পাঠ শ্রবণ করে তাহলে তার আমলনামার মধ্যে মহান রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তিনশ নেকি লেখা হয়। তা হলো : আলিফে দশ নেকি, লামে দশ নেকি এবং মিমে দশ নেকি। মোট ত্রিশ নেকি।

আবার হাদিসে এসেছে, কোনো ব্যক্তি যদি একটি নেক কাজ করে তাহলে তাকে দশটি নেকির সওয়াব দেওয়া হবে। তাই এখানে ত্রিশকে দশ দ্বারা গুণ দিলে তিনশ হয়। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যখন আলিফ, লাম ও মিম তেলাওয়াত করবে তখন তাকে তিনশ নেকি দেওয়া হবে। সুবহানাল্লাহ। মানুষ দুনিয়াতে বাস করে। দুনিয়াকে বসবাসযোগ্য করার জন্য রাত-দিন একাকার করে গবেষণা বা রিসার্চ করে যাচ্ছে কীভাবে দুনিয়ার জিন্দেগি সহজ ও আনন্দময় হয়। এক সময় ছিল মানুষ বিশ্ব ভ্রমণ করত উট আর ঘোড়া দ্বারা। দিনের পর দিন মানুষকে রাস্তায় থাকতে হতো। এ বিষয়টির ওপর চিন্তা ও গবেষণা করে মানুষ সহজতর যানবাহনের আবিষ্কার করেছে। ফলে বর্তমানে মানুষ সারা বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। কিছু দিন আগেও পরস্পর খোঁজখবর নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল পত্র আদান-প্রদান। আর বর্তমানে মানুষের হাতের মুঠোয় সারা বিশ্ব চলে এসেছে। মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের সংবাদ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও আরও অন্যান্য বস্তুর ওপর গবেষণা করে মানুষ উন্নতি করেছে। মানুষের দুনিয়াবি জীবনের রূপ পাল্টে গেছে। অনুরূপ মানুষ যদি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের ওপর চিন্তা ও গবেষণা করত এবং কোরআনের আয়াত ও সূরাসমূহ তেলাওয়াত ও আমলে রূপান্তরিত করত তখনও মানুষের দীনি তারাক্কি ও উন্নতি হতো। তাদের জীবনের রূপ পাল্টে যেত। তারা দুনিয়াতে মনেপ্রাণে এক অজানা শান্তি অনুভব করত। যারাই কোরআনকে আঁকড়ে ধরেছেন, আমলে বাস্তবায়ন করেছেন এবং বেশি বেশি তেলাওয়াত করেছেন তারা তা পেয়েছেন। কোরআনের মধ্যে মহান রব্বুল আলামিন এমন শক্তি রেখেছেন। শান্তি রেখেছেন ইমান ও কোরআনের মধ্যে। কোনো ব্যক্তি কখনো কোনো কারণে টেনশনে থাকলে ওই ব্যক্তি পূর্ণ ইমান নিয়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার তামাম টেনশন দূর করে দেবেন। তার মনে এক অজানা তৃপ্তি দান করবেন। কোনো নামাজি ব্যক্তির যদি নামাজে মন না বসে বা তৃপ্তি না পায় তার উচিত কালামে পাকের তেলাওয়াত বাড়িয়ে দেওয়া।

 

 

আল্লাহপাক অবশ্যই তার নামাজে মনযোগিতা এবং তৃপ্তি দান করবেন। পবিত্র কোরআন এমন এক কিতাব, যে কিতাবটি তেলাওয়াত করলেও সওয়াব, শুনলেও সওয়াব। তাই যে মুসলিম ভাইয়েরা এখনো তেলাওয়াত শিখেননি, তাদের তেলাওয়াত শিক্ষার চেষ্টা করা উচিত। শিখার দিনগুলোতে অন্যদের থেকে তেলাওয়াত শুনি। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন ব্যক্তির ইমান আনয়নের পর, পরের  কাজটিই হলো কালামে পাক শিক্ষা করা। সাহাবায়ে কেরাম বলতেন, ‘তা’ল্লামনাল ইমান ছুম্মা তা’ল্লামনাল কোরআন’ আমরা আগে ইমান শিক্ষা করেছি পরে কোরআন শিক্ষা করেছি। তাই তো হাদিসেপাকে এসেছে, হজরত রসুলে আরাবি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যিনি কোরআনে মাজিদ শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ প্রিয় পাঠক! উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বোঝা গেল, কোরআন শিক্ষা বা তেলাওয়াত দ্বারা ইমান বাড়ে। সর্বোত্তম জাতিতে রূপান্তরিত হওয়া যায়। এক কথায় কালামেপাকের তেলাওয়াতে জীবনের রূপ পাল্টে যায়। পরকালে কবর ও জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যার বক্ষে ইমান আছে, কোরআন আছে এবং কোরআনের ওপর আমল ও তেলাওয়াত আছে। আর ইমান নিয়ে ইন্তেকাল করে তাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবে না। এমনটিই আল্লাহর ঘোষণা। এক বুজুর্গ ছিলেন। তিনি কোনো কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাওয়ার সময়  কবরবাসীকে সালাম দিতেন এবং কবর জিয়ারত করতেন। একবার তিনি এক কবরস্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন। সালাম দিলেন ও জিয়ারত করলেন। তখন তিনি কাশফের দ্বারা জানতে পারলেন, এখানে একটি কবর আছে যেখানে একজন বুজুর্গ শায়িত আছে। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, আল্লাহ যেন তাকে এ বুজুর্গের কবরের হালাত জানান। আল্লাহপাক তার দোয়া কবুল করলেন। বুজুর্গ ব্যক্তিটি স্বপ্নযোগে জানতে পারলেন, কবরে ওই বুজুর্গ ব্যক্তিটি স্বর্ণাক্ষরে মোড়ানো কোরআন তেলাওয়াত করছেন। তাকে বুজুর্গ ব্যক্তিটি জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কীভাবে এ পুরস্কার পেলেন? তিনি বললেন, মহান রব্বুল আলামিন আমাকে মাফ করে দিয়ে বললেন বান্দা তুমি এখন আমার কাছে কী চাও? যা চাইবে তাই আমি তোমাকে দান করব।

আমি বললাম, আল্লাহ আমি দুনিয়াতে আপনার হুকুম পালন করার পর বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতাম। তাই আমি এখানেও তেলাওয়াত করতে চাই। আল্লাহপাক আমাকে তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দান করলেন। তাই আমি এ পর্যন্ত সত্তর হাজার বার কোরআনপাকের খতম করেছি।  সুবহানাল্লাহ। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সব মুসলিম ভাইকে বেশি বেশি কালামে পাকের তেলাওয়াত ও আমলের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি লাভের তৌফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর