অপরিকল্পিত নগরায়ণের ধকল সইতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকার লাখ লাখ মানুষকে। বুধবার বিকালের টানা দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছিল জলজট আর যানজটের নগরীতে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই চৈত্র শেষের বৃষ্টিতে রাজধানীতে সৃষ্ট জলজট-যানজট নগরবাসীর উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। রাজধানীজুড়ে যে রাস্তা কাটার মহোৎসব চলছে তাতে বর্ষা মৌসুমে জনভোগান্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়া গত কয়েক বছরের অনিবার্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো এলাকা দিনের পর দিনও জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। কেড়ে নেয় রাস্তাঘাটের আয়ু। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কারণে দেখা দেয় যানজট। বুধবারের বৃষ্টিপাত এবং তারপর সৃষ্ট জলজট-যানজট যেন জানিয়ে দিয়েছে সামনের বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে ঘোর দুর্দিনের সম্মুখীন হতে হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, খাল সংস্কার, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা সত্ত্বেও দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো সুফল অর্জিত হয়নি। বুধবারের দেড় ঘণ্টা বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যানজটের নগরীতে তা বাড়তি আপদ হয়ে দেখা দেয়। রাজধানীতে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো নগরায়ণের সব ক্ষেত্রে যে অব্যবস্থাপনার ছাপ রয়েছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হতো বেশ কিছু প্রাকৃতিক খাল। এসব খালের সিংহভাগই বেদখল এবং ভরাট হয়ে গেছে। অদ্ভুত এই দেশে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাল এমনকি নদীও বেদখল হয়ে যায়। যারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হন, সরকারের ভূমি দফতরের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তা আত্মসাতের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে একশ্রেণির খালখেকো লুটেরার দল। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীতে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় নগরজীবনে। নাগরিকদের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। আমাদের মতে, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার এবং দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বেদখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজে জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী ভূমিকাও কাম্য।
