শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই

মুফতি মাও. মুহাম্মদ মানজুর হোসাইন

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই

‘ত্রাস’ শব্দ থেকে এসেছে সন্ত্রাস। ত্রাস মানে ভয়। সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করাকেই সন্ত্রাস বলে। সমাজ ও দেশে ভয়ভীতি-আতঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করার নাম সন্ত্রাসবাদ। ‘বিশ্ব মুসলিম সংস্থার’ অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ফিকহ কাউন্সিলের মতে, ‘কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা রাষ্ট্র কোনো মানুষের ধর্ম, বিবেক-বুদ্ধি, ধনসম্পদ ও সম্মান-মর্যাদার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে যে শত্রুতার চর্চা করে তাকে সন্ত্রাস বলে।’ জঙ্গিবাদ শব্দের উত্পত্তি ফারসি ‘জঙ্গ’ শব্দ থেকে। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ-লড়াই, হানাহানি-মারামারি ইত্যাদি। যিনি ‘জঙ্গ’ বা যুদ্ধ করেন তাকে বলে জঙ্গি। আর যুদ্ধ-সৈনিক ও তাদের সার্বিক কার্যক্রমকে বলে জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদের আরেকটি সংজ্ঞা হলো— ধর্মীয় কারণে রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে চোরাগোপ্তা হামলা, অতর্কিত আক্রমণ, আত্মঘাতী হামলা অথবা হত্যা কিংবা কোনো নির্দিষ্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে জঙ্গিবাদ বলে।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। অথচ এ ইসলামের নাম করেই বিশ্বব্যাপী চালানো হচ্ছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রম। ইসলাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ও ইসলামকে দায়ী করা হচ্ছে। হত্যা-নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ব্যাপারে কোরআন যে কত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তা না জানার কারণেই একশ্রেণির অজ্ঞ মুসলমান এবং অমুসলিমরাও অশান্ত যে কোনো পরিবেশের কারণে ইসলামকে দায়ী করছে। মোদ্দা কথা, ইসলামের নামে যে কেউই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করলে মনে করতে হবে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু। কারণ, ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দূরতম সম্পর্কও নেই। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত পাঠক সমীপে পেশ করছি। ‘নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে হত্যা করল।’ (সূরা মায়েদাহ, আয়াত : ৩২)। আর যে ব্যক্তি জ্ঞাতসারে কোনো মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হচ্ছে দোজখের আগুন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত বর্ষিত হতে থাকবে। আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। (সূরা নিসা, আয়াত : ৯৩)। একজন মানুষকে হত্যা করা বিশ্বের সব মানুষ হত্যা করার মতোই গুরুতর অপরাধ। তাই যে ব্যক্তি এ ঘোরতর অন্যায় কাজ সংঘটিত করবে তার শাস্তি জাহান্নাম ছাড়া আর কী হতে পারে?  জঙ্গিরা বলে, জান্নাতের আশায় তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকে। তাদের আশায় গুড়েবালি দিয়েছে কোরআনের এ আয়াতগুলো।

লেখক : খতিব, বাইতুদ দাউদ জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর