শিরোনাম
শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্পদ বিষয়ে কী বলেছে ইসলাম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সম্পদ বিষয়ে কী বলেছে ইসলাম

অর্থনৈতিক জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামে রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা; যা মেনে চললে পৃথিবীতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অভুক্ত আর থাকবে না।  কিন্তু আমরা ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ না করে নিজেদের মতো অর্থনৈতিক বিভিন্ন মতবাদ বানিয়ে নিয়েছি। এ রকমই একটি অর্থব্যবস্থার নাম পুঁজিবাদ। অর্থনীতির ভাষায়— ‘যে অর্থব্যবস্থায় বাজার অর্থনীতিতে মুনাফা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবসা, কারখানা এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণ থাকে তাকে পুঁজিবাদ বলে।’ শুরুর দিকে পুঁজিবাদ খুব জনপ্রিয়তা পেলেও ক্রমেই এর ক্ষতির দিক মানুষের সামনে উঠে আসতে শুরু করে। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের বিষফোঁড়া ও ক্ষত বাড়তেই থাকে। যে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

পুঁজিবাদের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এ অর্থব্যবস্থা ধনীকে আরও ধনী আর গরিবকে আরও গরিব করে দেয়। এ বছরের ১৬ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সম্পদ আটজনের হাতে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ। ৩৬০ কোটি মানুষের সম্পদ ভোগ করছে মাত্র আটজন মানুষ! এ সংবাদের পর অর্থনীতি বিশ্লেষকরা স্বীকার করে নিয়েছেন, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার বিষফোঁড়াই বিশ্ববাসীর জন্য বেঁচে থাকার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অর্থব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে পারেনি বরং বাড়িয়েছে বহুগুণ। তাই দারিদ্র্যমুক্ত আজকের পৃথিবী গড়তে হলে আল কোরআন ও রসুল (সা.) প্রদর্শিত অর্থব্যবস্থার অনুসরণ-অনুকরণের বিকল্প নেই।

সম্পদের মালিক ব্যক্তি নিজে। এ সম্পদে আর অন্য কারও অধিকার নেই। ব্যক্তি চাইলে যে কোনো উপায়ে সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে। তার অধীন শ্রমিকদের খাটিয়ে-ঠকিয়ে যেভাবে খুশি পুঁজি বাড়ানোই পুঁজিবাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কোরআন বলছে— না। তোমার উপার্জিত সম্পদের একচ্ছত্র মালিক তুমি নও। কারণ তোমার উপার্জনের পেছনে এ সমাজের মানুষের অবদান আছে। অবদান আছে তোমার মা এবং বাবার। তাই তোমার সম্পদ সমাজ ও দেশের কল্যাণেই ব্যয় করতে হবে। ‘ওয়া ফি আমওয়ালিহিম হাক্কুস সা ইলি ওয়াল মাহরুম’। অর্থাৎ বিত্তবানদের সম্পদে অভাবীদের অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া সম্পদের মালিক কখনই ব্যক্তি নিজে হতে পারে না। কারণ তার দেহ, কর্মশক্তি, চিন্তাশক্তি এসব একজন স্রষ্টার দান। এতে তার নিজের কোনো অবদান নেই বললেই চলে। তাই সেই স্রষ্টাই তার উপার্জিত সম্পদে অভাবীদের অংশ সাব্যস্ত করেছেন। সাব্যস্ত করেছেন উত্তরাধিকারীদের অংশও। সে হিসেবেও সম্পদের একক মালিকানা ভোগের দর্শন সঠিক নয়।

সম্পদ উপার্জনে অবাধ স্বাধীনতার স্লোগানও কোরআন সমর্থিত নয়। কোরআন বলছে, ‘ওহে ওই সব লোক যারা ইমান এনেছ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। তবে পরস্পরের রাজি-খুশির মাধ্যমে ব্যবসা করাতে দোষ নেই। তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময়।’ (সূরা নিসা : ২৯)। এ আয়াতে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে জুলুম-বাড়াবাড়ি নিষেধ করে হালাল ব্যবসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায় ধোঁকাবাজির আশ্রয় যাতে নেওয়া না হয় তাই ‘পরস্পরের রাজি-খুশির’ শর্তারোপ করা হয়েছে। কারণ ধোঁকা-প্রতারণায় একপক্ষ লাভবান হয়, অন্যপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, প্রতরণার ব্যবসায় কখনই ‘পরস্পর রাজি-খুশি’ থাকে না। সম্পদ উপার্জনে কোনোভাবেই অবৈধ পন্থা সমাজ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। সম্পদ সিন্দুকভর্তির পক্ষে পুঁজিবাদীরা। এভাবে সম্পদ কুক্ষিগত করা স্পষ্ট হারাম। সম্পদ জমা করার ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের মধ্যে যারা লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের ফিরিয়ে রাখে, আর সোনা ও রুপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দিন। (সূরা তাওবাহ : ৩৪)।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

            www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর