রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাওরে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি

গরিবদের বাঁচাতে উদ্যোগ নিন

অসময়ের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল হাওর এলাকার ১২ লাখ কৃষক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। বছরের মাত্র একটি ফসলের ওপর হাওর এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। সে বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার আগেই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চার হাজার ৬২৫ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে হাওর এলাকার কৃষকরা। দেশের সার্বিক ধান উৎপাদনের ওপরও তা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি বছর হাওর এলাকার সাত জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯ লাখ ৩০ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। চাষকৃত জমির ৩৫ ভাগ ফলস পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। চালের হিসাবেই ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ টন। তবে কৃষকদের মতে, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। হাওর এলাকায় ফসল ডুবে যাওয়া নতুন কিছু নয়। আগাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্রায়ই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কৃষকরা। তবে এ বছর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। হাওর এলাকায় এবার ফসলের যে সমূহ ক্ষতি হয়েছে তার কারণ বাঁধ ভেঙে যাওয়া। প্রতিবছর হাওর এলাকার বাঁধ তৈরি ও মেরামতের জন্য শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও তা নিয়ে চলে লুটপাট। টেকসই বাঁধ তৈরির বদলে যেনতেনভাবে বাঁধ বেঁধে বরাদ্দকৃত টাকার হরিলুট চলে এমন অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। হাওর এলাকার মরা নদী খাল খনন করে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। হাওর এলাকার বাঁধ তৈরিসহ ফসল রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে কৃষকদের জড়িত করতে হবে। এটি সম্ভব হলে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থের প্রায় শতভাগই ফসল রক্ষার কার্যক্রমে ব্যবহূত হবে। বাঁধ তৈরি বা মেরামতের টাকা হরিলুটের সুযোগও অনেকাংশে লোপ পাবে। হাওর এলাকা যেহেতু এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল সেহেতু ফসল রক্ষায় টেকসই কৌশল অবলম্বনে নজর দিতে হবে। পাহাড়ি ঢল এবং বর্ষণ শুরু হওয়ার আগে ধান কেটে গোলায় তোলা যায় এমন কলাকৌশল উদ্ভাবনেও নজর দেওয়া দরকার।  বিশেষত এ বছর হাওর এলাকার যে লাখ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের দিকে সরকারকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে।  হাওর এলাকার গরিব মানুষ যাতে অনাহার-অর্ধাহারের শিকার না হয় সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর