সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

১০ এপ্রিল-কে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করা হোক

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

১০ এপ্রিল-কে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করা হোক

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমেই মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ঘোষণাপত্র নতুন রাষ্ট্রের পত্তন করে, বঙ্গবন্ধুকে নতুন রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে; ঘোষণাপত্র বাংলাদেশকে ‘প্রজাতন্ত্র’রূপে প্রতিষ্ঠা করে; ঘোষণাপত্র জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ঘোষণা করে; ঘোষণাপত্র বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অবিসংবাদিত নেতা The Undistputed Leader হিসেবে মর্যাদা প্রদান করে অর্থাৎ ঘোষণাপত্র জাতি-রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সব আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতা দিয়েছে, আইনগত ও নৈতিক বৈধতা দিয়েছে। ঘোষণাপত্রটি (Proclamation of Independence) স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রাজনৈতিক দলিল। ঘোষণাপত্র জাতির শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক প্রাপ্তি আর ১০ এপ্রিল জাতির মহৎ দিন।

বিশ্বের বহু মুক্তিকামী দেশে স্বাধীনতার জন্য Declaration of Independence বা Proclamation of Independence জারি করার দিনটিকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ বা ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ বা ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়, সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানসহ অনেক রাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবসের বাইরেও প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়। মুক্তি-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্রসমূহের মাঝে দুর্ভাগ্যজনক দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। আজ পর্যন্ত ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ বা ‘জাতীয় দিবস’ বা ‘বাংলাদেশ দিবস’ কোনোটিই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করাও হয় না। এদিনের তাৎপর্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা বিষয়ে ইতিহাসে বা পাঠ্যপুস্তকে কোনো কিছুই বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি, এ দিনে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়নি। ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতেই সংবিধান প্রণয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালিত হবে— এটাই ছিল রাষ্ট্রের দায়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে গত ৪৬ বছর এ দায় বহন না করে মুক্তিযুদ্ধ থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্র আলাদা নয় অভিন্ন। এই ঘোষণাপত্রই হচ্ছে বাংলাদেশ নামক জাতি-রাষ্ট্রের বৈধ ভিত্তি। আর এই ঘোষণার ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছে এবং এই সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। বৈধতার ভিত্তিতে প্রবাসী সরকার গঠিত না হলে সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালাত পাকিস্তানি শাসকরা।

স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্রই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান। ঘোষণাপত্রকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের মূল সূচনা হিসেবে (Genesis of the Constitution) আখ্যায়িত করেছে। সুতরাং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত দলিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারির দিবস বা ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এত স্বল্প জায়গায়, এত অল্প দিনে, এত ভয়াবহ গণহত্যা বাংলাদেশে সংঘটিত হলেও ৪৫ বছর পর গণহত্যা দিবস পালনের কথা মনে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে লেগেছে ৪০ বছর। আর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় দর্শন— এটা উপলব্ধি করতে এ জাতির আর কত বছর লাগবে?

রুয়ান্ডায় ১০০ দিনে ১০ লাখ লোক হত্যা করা হয়েছে। রুয়ান্ডার গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রুয়ান্ডা তাদের গণহত্যাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে। আর আমাদের ৩০ লাখ শহীদের রক্তে নিমজ্জিত রাষ্ট্রের সংবিধানে ‘গণহত্যা’ শব্দটি একবারও উচ্চারণ হয়নি।

 

ঘোষণাপত্রের আলোকেই সংবিধান প্রণীত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ঘোষণাপত্রের মৌলিক ৪টি বিষয়কে অস্বীকার করে ৭২-এর সংবিধান প্রণীত হয়েছে। অস্বীকৃত বিষয়গুলো হচ্ছে : ১. ঘোষণাপত্রে গণহত্যার কথা বারবার বলা হয়েছে কিন্তু ৭২-এর সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ কোথাও এত বড় ভয়াবহ গণহত্যার টুঁ-শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি ২. ঘোষণাপত্র বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাকে সমর্থন ও অনুমোদন দিয়েছে কিন্তু তা ৭২-এর সংবিধান স্বীকার করেনি ৩. ঘোষণাপত্র জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলেও ৭২-এর সংবিধানে তা অনুপস্থিত। ৪. ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা উল্লেখ করে উচ্চতম মর্যাদা প্রদান করেছে কিন্তু ৭২-এর সংবিধান বঙ্গবন্ধুর অবদান তো দূরের কথা নামও উচ্চারণ করেনি।

ঘোষণাপত্রে ঘোষিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার— এ তিনটি রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে ৭২ এর সংবিধান গ্রহণ করেনি। এই তিনটি আদর্শ ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র। এটা ঘোষণা, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি। ত্রি দর্শন থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা করা যাবে না- পৃথক করা যাবে না। এই তিন আদর্শকে সুরক্ষিত করতে হবে। সাম্য ছাড়া, মানবিক মর্যাদা ছাড়া, সামাজিক সুবিচার ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র অর্থহীন হয়ে পড়বে। আদর্শ বাদ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি-নির্ধারণ করায় এখন রাষ্ট্রের কোনো আদর্শও নেই আর ৭২ এর সংবিধানে যে নীতি প্রণীত আছে তার ভিত্তিতে দেশও চলছে না। সংবিধান এখন অসহায়। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে সংবিধান প্রণীত হয়নি। এতবড় ভুলের দায়বোধ কেউ স্বীকার করে না। আমরা ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছি- পরিত্যাগ করে যাচ্ছি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লক্ষ্য অর্জন আবশ্যক, রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশকে সেই পথে এগিয়ে নেওয়ার কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। ফলে বিদ্যমান রাজনীতি এবং যে ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে তা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে বিশ্বাসঘাতকতা। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে তিন আদর্শের মাঝে সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের স্বপ্ন নিহত। কারণ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে জনগণ মুক্তি-সংগ্রামে রূপান্তর করেছিল শুধু স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ নয় একেবারে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্র আলাদা নয়- অভিন্ন। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধের পর পরই মুক্তিযুদ্ধকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে ফেলি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মানবিক চেতনার বিস্ময়কর উত্থানে রূপান্তর করা এবং মানুষকে আলোকিত করার জ্ঞান জাতির মর্মমূলে প্রবিষ্ট করার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি, এমনকি জ্ঞান বিভাসিত দর্শন আহরণে কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। কেবলমাত্র পুরনো প্রশাসন নয়, পুরনো রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থা নয়- সমাজের পুরনো রূপের বিলোপ করাই ছিল মুক্তি-সংগ্রামের কাম্য। আমরা স্বাধীনতার পর পরই ঘোষণাপত্রের গভীরতম অঙ্গীকার পরিত্যাগ করে ফেলেছি।  তিন আদর্শের দার্শনিক ভিত্তি পর্যালোচনা করে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি-নির্ধারণ করতে হবে। সাম্যর মৌলিক দিক হচ্ছে তিনটি ১. আইনগত সাম্য অর্থাৎ সব মানুষ একই আইন ধারা নিয়ন্ত্রিত হবে। ২. রাজনৈতিক সাম্য অর্থাৎ আইন প্রণয়ন ও নেতৃত্ব নির্বাচনে সব মানুষের সমান অধিকার ৩. সামাজিক সাম্য অর্থাৎ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর প্রতি সমান অধিকার। দার্শনিক জন লকের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল সাম্য। আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রয়েছে সমান মর্যাদার ভিত্তিতেই সব মানুষের সৃষ্টি। আব্রাহাম লিংকন গেটিজ বার্গ বক্তৃতায় বলেছেন অষষ সধহ ধত্ব পত্বধঃবফ বয়ঁধষ। মানবিক মর্যাদা হচ্ছে জন্মগত প্রকৃতিগত- এটা অবিচ্ছেদ্য। রাষ্ট্র জরুরি অবস্থা জারি করার সময় মৌলিক অধিকার বা বাক, ব্যক্তির স্বাধীনতা স্থগিত করতে পারে কিন্তু মানবিক মর্যাদা বিপন্ন করার এখতিয়ার রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববহির্ভূত। জার্মান সংবিধানে মৌলিক অধিকারের শীর্ষে রয়েছে মানবিক মর্যাদা। এতে বলা হয়েছে মানবিক মর্যাদা অলঙ্ঘনীয়। একে রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। সামাজিক সুবিচার সাধারণভাবে সমাজে ব্যক্তির ভূমিকার পূর্ণতা আনে এবং সমাজ থেকে তার প্রাপ্য নিশ্চিত করে। সামাজিক সুবিচার আর মানব উন্নয়নের লক্ষ্য অভিন্ন। আইএলও’র মুখবন্ধে বলা হয়েছে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিত্তি হচ্ছে সামাজিক ন্যায়বিচার।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ত্রি আদর্শ ছিল আমাদের রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি। দার্শনিক ভিত্তি ছাড়া একটি রাষ্ট্রকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না, দিকনির্দেশনা দেওয়া যায় না। দার্শনিক ভিত্তির অভাবে আমাদের মনন অবক্ষয়প্রাপ্ত, মূল্যবোধ ভেঙে পড়ছে এবং আইনের শাসন লণ্ডভণ্ড। মানুষ বিভক্ত ও নৈতিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাঙালি সংস্কৃতি বিপন্ন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে দৈন্য গ্লানি অতিক্রম করে স্বাধীনতার জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুকেই জীবিত থাকা অবস্থায় সাংবিধানিকভাবে ন্যূনতম মর্যাদা দিতে পারেনি এই জাতি। পরিশেষে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।’ কী নির্মম সত্য যা উপলব্ধি করেছিলেন আর শেষে জীবন দিয়ে সেই উপলব্ধির প্রমাণ জাতির জন্য রেখে গেছেন। এই পরশ্রীকাতরতার জন্যই কী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারকে আড়াল রাখা হচ্ছে- এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই কী ছাত্রসমাজের অবদান, নিউক্লিয়াস ও সিরাজুল আলম খানের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে অনীহা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার মূর্খতা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এ উপলব্ধি অনেকের নেই। 

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নির্যাস হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণাপত্রই হচ্ছে রাষ্ট্রের আলোকবর্তিকা বা প্রদীপ। আর সেই প্রদীপের আলোয় আলোকিত হবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। কিন্তু আমাদের ভুল রাজনীতি, দার্শনিক প্রজ্ঞার অভাব এবং পরশ্রীকাতরতার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রদীপকে সরিয়ে দিচ্ছি, দূরবর্তী করে দিচ্ছি, আড়াল করে দিচ্ছি। ফলে রাষ্ট্র আলোকিত হতে পারছে না বরং অন্ধকারের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। সংবিধানে নির্দেশনায় যদি ত্রি আদর্শ থাকত তাহলে সে সংবিধান হতো Mirror of social and National aspiration জনগণ এই আকাঙ্ক্ষা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো,  জনসাধারণের ধ্যান-ধারণা মূল্যবোধ সংবিধানের নির্দেশনা মতো গড়ে উঠত।

রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের আলোকে আলোকিত করার জন্য যা জাতির জরুরি কর্তব্য তা হচ্ছে : ১. মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের দর্শনে গণতান্ত্রিক-নৈতিক ও মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। ঘোষণাপত্রের তিন আদর্শকে প্রজাতন্ত্রের আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করা। ২. সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক পর্যালোচনা করে রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি উদ্ভাবন করা এবং জনগণের অভিমত গ্রহণে ‘গণভোট’ অনুষ্ঠান করা। ৩. সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে ঘোষণাপত্রের তিন আদর্শ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার উপযোগী সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসম্পন্ন রাষ্ট্র-সমাজ নির্মাণ করা। ৪. সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও মর্যাদা অন্তর্ভুক্ত করা। সংবিধানের প্রস্তাবনায় সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পরিক্রমায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ২ মার্চ, ৩ মার্চ ও ৭ মার্চের কথা লিপিবদ্ধ করা এবং ২৫ মার্চের গণহত্যাকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা। ৫. ১০ এপ্রিল-কে বাংলাদেশের ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করা। ৬. ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা-বিচারব্যবস্থা-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা-আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে স্বাধীন দেশের উপযোগী করা। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক, নৈতিক ও মানবিক রাষ্ট্র, এ প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা অবিচ্ছেদ্য-অলঙ্ঘনীয়। এই তিন আদর্শ সূর্যালোকের মতো। এই তিন আদর্শের আলোকেই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।

লেখক : গীতিকবি।

[email protected]

সর্বশেষ খবর