বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলা নববর্ষের উৎস রসুল (সা.)-এর হিজরত

আবদুর রশিদ

বাংলা সন হলো ইসলামী হিজরি সনের সৌরবর্ষীয় সংস্করণ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় থেকে হিজরি সনের শুরু। বাংলা সনের উেসও রয়েছে হিজরতের সেই পবিত্র স্মৃতি। ভারত বর্ষে মুসলিম শাসন কায়েম হওয়ার পর হিজরি সন অনুসরণ করা হতো। খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি সনের উৎস ঠিক রেখে সৌরবর্ষীয় বাংলা সনের উৎপত্তি। মোগল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা সন শুরু হয়। সে সময় কৃষককে হিজরি সন অনুযায়ী খাজনা দিতে হতো। হিজরি চান্দ্র বছরের সঙ্গে বাংলা ঋতু চক্রের হিসাব এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় কৃষক বিপাকে পড়ে যেত। সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করে এ সমস্যাটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তিনি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৯১২ হিজরি সনে প্রখ্যাত ইরানি জোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজিকে সৌরবর্ষীয় সন তৈরির দায়িত্ব দেন। আমির ফতেহ উল্লাহ হিজরি সনের সঙ্গে মিল রেখে সৌরমাসভিত্তিক ফসলি সন প্রণয়ন করেন। এ সন হিজরি সনের আদলেই শুরু হয়। ৯৩৬ হিজরি সনে বাংলা সনের জন্ম বছর হলেও তা ৯৩৬ বঙ্গাব্দ হিসাবে গণনা শুরু করা হয়। শুধু তাই নয়, হিজরি সনের সঙ্গে মিল রাখার জন্য বাংলা সনের প্রথম মাস চৈত্রের পরিবর্তে বৈশাখ করা হয়। কারণ ৯৩৬ হিজরি সনের পয়লা মহররমের সঙ্গে পয়লা বৈশাখের মিল ছিল। সে থেকেই পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। সুতরাং বলা যায়, বাংলা সনের সঙ্গে ইসলামী ঐতিহ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলা নববর্ষ পালনে ইসলামী ঐতিহ্যের ব্যত্যয় যাতে না ঘটে সে দিকে নজর দিতে হবে।

পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলাভাষী মানুষের সিংহভাগ যেহেতু মসুলমান সেহেতু এ উৎসব থেকে তাদের দূরে থাকার সুযোগ নেই। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে শরিয়তের বৈধ সীমায় আনন্দ-উৎসব করা দোষের নয়। বৈধভাবে নববর্ষ উদ্যাপনের অনেক পথও রয়েছে। শুকরিয়ার নামাজ, দান-সদকা, নফল রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে নববর্ষ উদ্যাপন করা যেতে পারে। নতুন বছরের নতুন দিনে কোনো অভাবীর অভাব পূরণ করে কিংবা ঋণগ্রস্তকে সাহায্য করে অথবা নিরক্ষর হৃদয়ে অক্ষরের আলো জ্বেলে নতুন বছর শুরু করা যেতে পারে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েও নববর্ষ উদ্যাপন করা যেতে পারে। নতুন বছর আমাদের জন্য শান্তিময় হোক। কল্যাণের বার্তা নিয়ে আসুক প্রতিটি আদম সন্তানের জন্য। এ কামনাই করছি মহান আল্লাহর দরবারে। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর