শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

পয়লা বৈশাখ আজ

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা

বাঙালির নববর্ষ পয়লা বৈশাখ আজ। দুনিয়ার সব জাতির কাছে নববর্ষের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মানব সমাজে বর্ষবরণ উৎসবের শুরু সম্ভবত চার হাজার বছর আগে। ব্যাবিলনে সম্ভবত প্রথম বর্ষবরণের সূত্রপাত। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা পারের মানুষও হাজার হাজার বছর ধরে বর্ষবরণ পালন করে আসছে। পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে পালনের রেওয়াজ মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। আরবি বা হিজরি চান্দ্রবর্ষের সৌরবর্ষ সংস্করণ হলো বাংলা সন। তারপর থেকে বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ চৈত্রকে চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে পালন করা হয় সাড়ম্বরে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার দিনপঞ্জি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু হলেও গ্রাম্য সমাজে বাংলা বর্ষপঞ্জির গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। কালের বিবর্তনে গ্রামীণ সমাজেও গ্রেগরীয় দিনপঞ্জির ব্যবহার বেড়েছে। তারপরও কৃষক সমাজ আজও বাংলা সনকে সামনে রেখে তাদের ফসলি কার্যক্রম চালায়। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও হালখাতা পালনের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে চিরঞ্জীব করে রেখেছে। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। বৈশাখ মাসকে বলা হয় মেলার মাস। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে যে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় তা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাঙালির নববর্ষ আসে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার মাতম তুলে। জরাজীর্ণ যা কিছু পুরান তাকে উড়িয়ে দিয়ে নববর্ষে নতুনের অভিষেক হয়। নববর্ষে বাঙালি শপথ নেয় অতীতের দুঃখ-বঞ্চনা-ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগোনোর। বলা যায়, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সবখানেই রয়েছে পয়লা বৈশাখের হার না মানা প্রত্যয়। নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন সংস্কৃতির বাহন বলে বিবেচিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। হালখাতার অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা এবং শহুরে পান্তা-ইলিশের রমরমা আধুনিকতার এই যুগেও নিজেদের বাঙালি হিসেবে ভাবার সুযোগ করে দেয়। বাঙালির চেতনার সঙ্গে পয়লা বৈশাখের সম্পর্ক থাকায় বাঙালিত্বের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন ধর্মান্ধরা নববর্ষকে বরাবরই প্রতিপক্ষ ভেবেছে। দেড় দশক আগে হিংসাশ্রয়ী ওই অপশক্তি বোমা হামলা চালিয়ে রমনার অশ্বত্থমূলে বিপুলসংখ্যক উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে হতাহত করে। এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এবারের পয়লা বৈশাখের মাত্র একদিন আগে। আমরা আশা করব, রমনার অশ্বত্থমূলের বোমা হামলায় অন্য যারা জড়িত তাদেরও বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।  বাংলা নববর্ষ সবার জন্য সুখের হোক, হোক শান্তিময়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর