রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনপি জামায়াত ছাড়ছে, আ.লীগ হেফাজতকে নিচ্ছে!

কাজী সিরাজ

বিএনপি জামায়াত ছাড়ছে, আ.লীগ হেফাজতকে নিচ্ছে!

জাতীয় রাজনীতিতে ভোট-কেন্দ্রিক মেরুকরণ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, অনৈতিক কিছুও নয়। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনীতি ও আদর্শের অনুসারীদের মধ্যে যখন ঐক্য ও সমঝোতা হয়, তা দল বিশেষের গদির স্বাদ মেটানোর কাজে লাগলেও দেশ ও জাতির চরম সর্বনাশের কারণ হয়। আমাদের দেশেই এর প্রমাণ আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা প্রায় সবাই বলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইনের শাসন, অসাম্প্রদায়িক ও সমতাভিত্তিক সমাজের একটি চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশ্য ও সরাসরি বিরোধিতা করেছে তারা জনগণের কাঙ্ক্ষিত এমন একটি বাংলাদেশের বিরোধী। পাকিস্তান রক্ষা করতে পারেনি তারা, সে জ্বালায় জ্বলছে অহর্নিশ। তাদের চোখে পাকিস্তানে ফেরার স্বপ্ন। বাংলাদেশে আদালতের নির্দেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জাড়িতদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা পাকিস্তানে যখন তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় এবং সে দেশের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে সেই অপরাধীদের ‘আমাদের লোক’ বলে দাবি করা হয় তখন তাদের ‘স্বপ্নের’ ব্যাপারে আর কিছু লুকোছাপা থাকে না। যে সংগঠনের লোকদের পাকিস্তানিরা তাদের লোক বলে দাবি করে তারা কখনো সেই বক্তব্য নাকচ করেনি। যারা ফের পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে, নিদেনপক্ষে বাংলাদেশকে ‘দ্বিতীয় পাকিস্তান’ বানানোর খোয়াব দেখে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারীরা তাদের সঙ্গে ঐক্য ও সমঝোতার চিন্তা করাও গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের সমুদয় কৃতিত্ব দাবি করে আওয়ামী লীগ। একটা বিষয় বিভ্রান্তিকর মনে হয় যখন দল হিসেবে বিএনপিও এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে টক্কর দেয়। বিএনপির যারা তা করেন, তারা ভুলে যান যে, একাত্তর সালে বিএনপি নামে কোনো দলই ছিল না, দলটির জন্ম ১৯৭৮ সালে। আওয়ামী লীগও এ ব্যাপারে বোকার মতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলে, মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির কোনো ভূমিকা ছিল না। তারাও ভুলে যান, তখন বিএনপি নামক দলটির কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগই ছিল না— জন্মই তো হয়নি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যারা বলেন স্রেফ ক্ষমতার লোভে অথবা দেশি-বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তারা স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চেতনাবিরোধী শক্তির সঙ্গে নানাভাবে ঐক্য করেছে, সখ্য গড়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসন বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি করেছে। আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের শাসনেরও ঘোর সমালোচক। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দুজনের উত্থান একই রকম নয়। জিয়ার উত্থান ছিল দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে নন্দিত। জিয়া উপমহাদেশের জনপ্রিয় শাসকদের একজন। আর হু. মু. এরশাদ ছিলেন একজন নিন্দিত শাসক। দীর্ঘ প্রায় এক দশকের কাছাকাছি সময় লড়াই করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হয়েছে। অথচ তিন বছরের মাথায় তাকে বিদায় করে দেওয়ার একটা সুযোগ এসেছিল। সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল যে, ১৯৮৬ সালে এরশাদের ক্ষমতা বৈধকরণের নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু সে প্রতিজ্ঞায় অটল থাকেনি একটি বড় দল। তারা আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয় এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে। বিষয়টি আলোচনায় আনলাম এই কারণে যে, সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে জাতীয় রাজনীতির ‘জাতে’ তোলা হয়। এরশাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার পাতানো সেই নির্বাচনে বড় দলটি জামায়াতকেও সঙ্গী করে জনগণকে এই ধারণা দেওয়ার জন্য যে, তারা একা নয়, আরও দল অংশ নিচ্ছে এতে। মানুষ যা বোঝার তা বুঝেছে। জাতীয় রাজনীতির ক্ষতি যা হওয়ার তা কিন্তু হয়ে গেছে। এরশাদের ক্ষমতা দখল বৈধতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অনাপত্তির সুযোগে মাঠের রাজনীতির বৈধতা পেয়ে যায়। জিয়াউর রহমান জামায়াতকে রাজনীতির লাইসেন্স দিয়েছেন বলে সমালোচনা করা হয়। অভিযোগটি মিথ্যা নয়। কিন্তু আরেকটি সত্য হচ্ছে, জিয়াউর রহমানের শাসনকালে ১৯৭৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নিতে পারেনি। তারা প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১৯৮৬ সালের এরশাদীয় তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে। রাজনৈতিক অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এটাই জামায়াতের নব-উত্থানের মূল ভিত্তি। রাজনীতির খেলায় বলুন অথবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক কোনো মহলের চাপে বা পরামর্শে বলুন, সর্বনাশা এ ভুলটি আওয়ামী লীগ করেছে। এ দায় তাদের নিতেই হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে দায়মুক্তির বিল পাস করা যায়, কিন্তু ইতিহাসের দায় ও দণ্ড থেকে কেউ মুক্তি পায় না। ধর্মের নামে রাজনীতি করা দল জামায়াতে ইসলামীকে শক্তি আহরণে আর পিছে তাকাতে হয়নি। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপির ঘাড়ে চড়ে দলীয় স্বার্থ হাসিলের কৌশলে তারা পুরোপুরি সফল হয়। ১৯৮৬ সালে তারা জোট বেঁধে নির্বাচন না করলেও মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, উভয় দল সমঝোতার ভিত্তিতেই লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে নির্বাচনে চলে যায়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ও পাঁচদলীয় বাম জোটের সঙ্গে না থাকলেও জামায়াত সমান্তরাল কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকত। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামপন্থি কারোই বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করতে হবে না— এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ফায়দা লুটেছে কৌশলে। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া আরও হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে সমর্থন প্রশ্নে, খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে, বিশেষ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতার ফলে বিএনপির সামনেও সুযোগ সৃষ্টি হয় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার। তাদেরও লাজলজ্জা ভেঙে যায়। ১৯৯৮ সালে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে চারদলীয় জোট গঠন করে। এর আগে একানব্বই সালে সরকার গঠনে জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন করেছিল, সাহায্য করেছিল। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত কোনো নির্বাচনী সমঝোতাও ছিল না। তখন তারা লীগ-বিএনপি দুই দলেরই বন্ধু! অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তারা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে এবং সরকারও গঠন করে জোটবদ্ধভাবে। মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রীর পতাকাও ওড়ান। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে তারা তাদের শক্তি বাড়িয়েছে, সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক জাল বিস্তার করেছে এবং একটি চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব সাংগঠনিক স্বার্থে লীগ-বিএনপির যার সঙ্গে যখন সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজন মনে করেছে তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে, আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে বা সম্পর্কটা তাদের কাজে না লাগলে প্রয়োজনীয় দল ও শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে, আগের মিত্র দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দীর্ঘ ১৯-২০ বছরের। সে সম্পর্কে এখন চিড় ধরেছে। বিএনপিকে যতদিন প্রয়োজন ছিল ততদিন অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে রেখেছিল। এখন তাদের সময় ভালো যাচ্ছে না। বিএনপিরও সময় ভালো নয়। তাদের দরকার শক্তিশালী মিত্র— যে মিত্র তাদের সাহায্য করতে সক্ষম। তাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ঝুলিয়ে দেওয়া, দলের এখনো যারা কারাগারে আছেন তাদের জামিনের ব্যবস্থা করা, পলাতক নেতাদের প্রকাশ্যে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা, দলের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা— মোট কথা বিপন্ন দশা থেকে দলকে উদ্ধার করা। বিএনপি যেখানে নিজেকে রক্ষা করতে অক্ষম, বিএনপির মতো এত বিপুল জনসমর্থিত একটি দল যেখানে রাজপথে নামার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে, এই দুরবস্থায় আর বিএনপির সঙ্গে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করছে না দলটি। তাই অনেকদিন আগে থেকে একটা দূরত্ব সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় আছে তারা। বিএনপির কাছ থেকে যা আদায় করার, ষোলো আনার ওপর বত্রিশ আনা আদায় করেছে তারা। বিএনপির অনেক শুভানুধ্যায়ী অনেক আগে থেকেই ‘জামায়াতী বিপদ সম্পর্কে বিএনপিকে সতর্ক করে আসছিলেন। কান দেননি কেউ। উল্টা তিরস্কার করেছেন এই বলে যে, সমালোচকরা বিএনপির ক্ষতি করার জন্যই এসব বলছে। জোটের আবরণে নানা কাজে বিএনপির নিজস্ব লোকদের চেয়ে জামায়াতের লোকজন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বিএনপির রাজনীতিকে পর্যন্ত প্রভাবিত করেছে তারা। তাদের প্রভাবেই শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত এবং বিপুলসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধের সংগঠকের সমন্বয়ে গঠিত বিএনপি অনেকটা মুসলিম লীগের মতো আচরণ করেছে। রাজাকারের দল বলে গালি শুনছে। সুযোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ— বলতে পেরেছে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের দল।

বিলম্বে হলেও বিএনপিতে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তারা উপলব্ধি করতে পারছে, জামায়াত বিশ্বস্ত রাজনৈতিক মিত্র নয়। এই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে গত ৯ এপ্রিল গুলশান কার্যালয়ে দলের আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে পার্টি চেয়ারপারসনের আলোচনায়। তার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছে ক্ষোভ। গত ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েনের কথা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি বলেছেন, ‘আগামীতে আওয়ামী লীগ কাছে টানতে পারে জামায়াতকে। অতীতেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জামায়াত। এরপর ’৯৫-’৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছিল দলটি। তাদের ভিতরে সেই সখ্য এখনো আছে। আর সেটাকে আবারও যে কোনো মুহূর্তে কাজে লাগাতে পারে আওয়ামী লীগ।’ এ লেখা তৈরি করা পর্যন্ত বিএনপি দেশের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকায় প্রকাশিত বক্তব্য নাকচ না করায় শফিউল আলম দোলনের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত বক্তব্যটির যথার্থতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এতে স্পষ্ট যে, জামায়াত সম্পর্কে বিএনপিতে চিন্তাভাবনা চলছে এবং তা দৃঢ়। জামায়াতকে বাদ দিয়ে এগোবার পরামর্শ বিএনপিকে নানা মহলের পাশাপাশি সরকারি মহল থেকেও দেওয়া হচ্ছিল। সন্দেহ নেই যে, সরকারের উদ্দেশ্যের ভিন্নতা আছে। অন্যদের পরামর্শ ছিল জামায়াতী প্রভাবে বিএনপির জামায়াতীকরণ প্রক্রিয়া রোধ, বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তিকে অতিমাত্রায় বাড়তে দেওয়ার বিপদ মোকাবিলা এবং দেশে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান ও ভয়াবহ বিকাশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে। বিএনপির যেসব অর্বাচীন ‘বন্ধু-সমালোচকদের’ কটু কথা বলেছেন, নব্য বাকশালী বলেছেন এবং টেলিভিশন টকশো’তে ‘ঘাড় ধরে, কান মলে’ বের করে দেওয়া ব্যক্তিরাই জামায়াতের বিএনপি-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সমালোচনা করছে বলে অসভ্য মন্তব্য করেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার জামায়াত সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্যের পর এখন তারা কী বলবেন? বেগম জিয়ার বক্তব্যকে পজিটিভলি বিশ্লেষণ করেছেন বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ আগেও দিয়েছিলেন। ডা. চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কি জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দিতে চাচ্ছেন, নাকি বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে করে জামায়াতে ইসলামীই বিএনপির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে সেটিই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১১.০৪.২০১৭)। বিএনপির জামায়াত-ভাবনা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জামায়াত বিযুক্ত হলে বিএনপির রাজনৈতিক মর্যাদার স্তর যেমন উন্নত হবে, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী ও প্রগতিশীল গণতন্ত্রীদের সমর্থনও পাবে দলটি। এদিকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা ও তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার পর জামায়াতের চেয়েও কট্টর মৌলবাদী শক্তির প্রতি সরকার, সরকারি দল ঝুঁকছে বলে একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। জামায়াতের সঙ্গেও সখ্য গড়ার যে ইঙ্গিত বেগম জিয়া দিয়েছেন তা নিয়েও আলোচনা ডালপালা মেলছে। লীগ নেতা-মন্ত্রীরা যত সাফাই-ই গান না কেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে হেফাজত নেতা মাওলানা শফীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সাক্ষািট মামুলি কোনো সাক্ষাৎকার ছিল বলে মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, যাদের বিরুদ্ধে শাপলা চত্বর-তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগের এত অভিযোগ সরকারি দলের, সেই সংগঠনের প্রতি দরদি মনোভাব অবশ্যই তাত্পর্যপূর্ণ। তারা দৃঢ়ভাবে মনে করেন এর পেছনে রয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের সমীকরণ, ভোটের খেলা। কওমি মাদ্রাসাকে পক্ষে রাখার কৌশল। জামায়াতকে নিয়েও খেলা হতেই পারে। আওয়ামী লীগের লাভ ক্ষমতা, জামায়াতের লাভ টিকে যাওয়া, টিকে থাকা। কিন্তু ভোটের এই খেলায় সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি জনগণের মধ্যে শক্ত শিকড় গেড়ে নিলে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, সুশাসন, বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ-রাষ্ট্র— এসবের কী হবে? নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক মেরুকরণের নামে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা হচ্ছে খুব কম। আওয়ামী লীগ থেকে এটা প্রত্যাশিত নয়।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর