মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরশ পাথরের ছোঁয়ায় মানুষ খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছিল

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

বিপথগামী মানুষকে আল্লাহর পথে আনার জন্য ১৪০০ বছর আগে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি ছিলেন সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ ও শেষ নবী। ইরশাদ হচ্ছে, মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আর রুম, আয়াত ৪১)। তৎকালীন ঘুণে ধরা বিশ্বসমাজে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নিকটবর্তী স্থানে আল্লাহ পাঠালেন এক উম্মী নবীকে; যার অবস্থান ছিল সভ্যতার গর্বে গর্বিত দুই সাম্রাজ্যের মাঝামাঝি স্থানে। তিনি শতাব্দীভর নিপতিত শাস্তি থেকে উদ্ধার করেন জগেক। আসন্ন পরকাল জীবনের শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেন। সব ধরনের দাসত্ব থেকে বের হয়ে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর দাসত্ব করতে আদেশ করেন। ছিন্ন করে দেন সব শিকল, যাতে তারা আবদ্ধ ছিল। তিনি তাদের নির্দেশ দেন সৎকর্মের আর নিষেধ করেন সব অসৎ কর্ম থেকে; যা কিছু পবিত্র ও কল্যাণকর তা হালাল ঘোষণা করেন; যা অপবিত্র ও ক্ষতিকর তা হারাম করে দেন। সপ্তম হিজরি সনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা থেকে রোম সম্রাট বরাবর একটি পত্র লেখেন। যাতে আহ্বান ছিল : হে আহলে কিতাবগণ (ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়)! তোমরা এমন কথার দিকে আসো, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত না করি। আর তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসেবে গ্রহণ না করি। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস এ আহ্বানের সত্যতা বুঝেছিলেন, কিন্তু নিজস্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে এ আহ্বানে সাড়া দিতে পারেননি। তাদের অনেক শক্তি ও ক্ষমতা থাকলেও কোথাও যেন একটি অসহায়ত্ব তাড়া করে ফিরছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বার্তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে আরবের নিরুপায়, দুর্দশাগ্রস্ত সম্প্রদায়। পরিণামে লাভ করেছে তারা দুনিয়ার রাজত্ব। তারা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল দাসত্বের সব শৃঙ্খল। এক আল্লাহর কাছে মাথা ঝুঁকিয়ে তারা স্বাধীন হয়ে গেছে ক্ষমতার অন্যসব প্রচলিত কেন্দ্র থেকে। না বাকি ছিল প্রবৃত্তির দাসত্ব, না সম্রাট ও সাম্রাজ্যের। না কুসংস্কার, না ভ্রান্ত প্রথার, না সমাজের নিপীড়নমূলক বন্ধনের। আল্লাহতায়ালার পরিচয় তার মহত্ত্ব, বড়ত্ব ভুল করে দিল পৃথিবীর কৃত্রিম প্রভুদের মহত্ত্বের সব জাদু। যে আরবরা ক্ষুধার তাড়নায় কাতর ছিল, যাদের পরনের বস্ত্র ছিল ছিন্ন, যাদের বলা হতো পশমি কম্বল পরিহিত মরুচারী, যারা নির্জন মরুভূমি থেকে বেরিয়ে আসত না কখনো, যারা জাঁকজমকের বিকাশ ঘটাতে জানত না, তাদের দেখা গেল অনারবি সম্রাটের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। তাদের দরবারে গিয়ে কুর্নিশ করার বদলে মাথা উঁচু করে থাকতে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামের পরশ পাথরের বদৌলতে আরবের মানুষ খাঁটি সোনায় পরিণত হয়।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর