শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিরাজ ও বিজ্ঞান

মাওলানা হাফেজ কাজী মারুফ বিল্লাহ

মিরাজ ও বিজ্ঞান

আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-এর মুজিজাসমূহের মধ্যে পবিত্র মিরাজ অন্যতম। এটি এমনই একটি ঘটনা, যার সঙ্গে রয়েছে ইমানের গভীরতম সম্পর্ক। কাজেই মিরাজের বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজতে যাওয়া একটি অবান্তর চিন্তা।  বলাবাহুল্য, যুক্তি কোনো দিনই ইমানের ভিত্তি নয়, ইমানই হচ্ছে যুক্তির ভিত্তি। বরং যুক্তির মাত্রা যেখানে শেষ ইমানের যাত্রা সেখান থেকেই শুরু। তারপরও কোনো কোনো মহৎ ব্যক্তির এ ব্যাপারে যুক্তির অবতারণা সেটা শুধু ইমানের স্বাদ অনুভব করার জন্যই। বিজ্ঞানের এ চরম উৎকর্ষের যুগে আমরাও তাই মিরাজকে বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ করে দেখতে চাই।

মহানবী (সা.)-এর সশরীরে মিরাজের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধবাদীদের প্রধান যুক্তি হলো জড়জগতের নিগড়ে আবদ্ধ স্থূলদেহী মানুষ কীভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে আকাশলোকে বিচরণ করে? তাছাড়া পৃথিবীর আকর্ষণীয় শক্তি যেখানে শূন্যে অবস্থিত স্থূল বস্তুকে মাটির দিকে টেনে নামায়, সেখানে কী করে প্রিয়নবী (সা.) সশরীরে মিরাজে গমন করেন?

গতিবিজ্ঞান, মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের সর্বশেষ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার আলোকে মিরাজের ঘটনাকে বিচার করলে এর সম্ভাব্যতা সহজেই আমাদের বুঝে আসবে। গতিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুটতে পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব। এ গতিমাত্রাকে তারা মুক্তিগতি নামে আখ্যায়িত করেন। আমরা জানি, মহানবী (সা.) ‘বোরাক’ নামক এক অলৌকিক বাহনের ওপর বসে ঊর্ধ্বালোকে গমন করেছিলেন। আরবি শব্দ ‘বারকুন’ অর্থ বিদ্যুৎ। বোরাক বলতে মূলত বিদ্যুৎ থেকে অধিক গতিসম্পন্ন বাহনকে বোঝায়। অতএব, দেখা যাচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ যুক্তি দ্বারা মিরাজের সম্ভাবনা প্রমাণিত হচ্ছে।

আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রবক্তারা বলছেন, সময়ের স্থিরতা বলতে কিছুই নেই, ওটা আমাদের মনের খেয়াল মাত্র। বস্তুত সময় সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান ও ধারণা আপেক্ষিক। সময়ের প্রভাব সবার ওপর সমান নয় বলেই আইনস্টাইন প্রমাণ করেছেন। দর্শকের গতির তারতম্যে বস্তুর বা ঘটনার স্থান নির্ণয়ে তারতম্য ঘটে। আবার একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত দুটি ঘটনা দর্শকের গতির তারতম্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে হয়। গতির মধ্যে সময় অস্বাভাবিকভাবে খাটো হয়ে যায়। তাই বলা যায়, বোরাক আরোহী মহানবী (সা.)-এর গতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে, সব ঘটনাই পৃথিবীর দর্শকের কাছে কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বলে মনে হলেও কালের প্রবাহে তা ছিল দীর্ঘ সময়।

আল্লাহর সৃষ্টি এই মহাবিশ্ব মূলত আলোর সমুদ্র ও আলোর মেলা। যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা আলোর গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে মহাবিশ্বের প্রান্তরের দিকে ছুটে যায় তাহলে সে ঘটনা প্রবাহের বিভিন্ন স্তর অতিক্রমকালে অতীতের সব ঘটনাই সে ঘটমান অবস্থায় জীবন্ত দেখতে পাবে। এভাবেই তিনি যখন আলোর সর্বোচ্চ গতিতে চলতে ছিলেন, তখন হজরত ঈসা, মুসা, ইবরাহিম, আদম (আ.) ও অন্যান্য অতীত ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই নবী ও রসুলদের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.)-এর সাক্ষাৎও বৈজ্ঞানিক সত্য এবং স্বাভাবিক ব্যাপার।

লেখক : ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও খতিব, বৃহত্তর জাজিরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর